All writings in Bengali and Sanskrit including brief works written for the newspaper 'Dharma' and 'Karakahini' - reminiscences of detention in Alipore Jail.
All writings in Bengali and Sanskrit. Most of the pieces in Bengali were written by Sri Aurobindo in 1909 and 1910 for 'Dharma', a Calcutta weekly he edited at that time; the material consists chiefly of brief political, social and cultural works. His reminiscences of detention in Alipore Jail for one year ('Tales of Prison Life') are also included. There is also some correspondence with Bengali disciples living in his ashram. The Sanskrit works deal largely with philosophical and cultural themes. (This volume will be available both in the original languages and in a separate volume of English translations.)
শ্রীহট্ট জেলা সমিতি
জাতীয় ভাবের বিস্তার এবং আশাতীত বৃদ্ধি হুগলীতে অবগত হইয়াছিলাম, কিন্তু শ্রীহট্ট জেলা সমিতিতে ইহার চূড়ান্ত দেখা গেল ৷ পূৰ্বাঞ্চলের এই দূর প্রান্তে মধ্যপন্থী নাম বিলুপ্ত হইয়াছে, তথায় জাতীয় ভাবই অক্ষুন্ন ও প্রবল ৷ শ্রীহট্টবাসীগণ ভারতবন্ধু বেকরের রামরাজ্যে বাস করেন না, তথাপি নিগ্রহনীতির জন্মস্থানে সমিতি করিয়া স্বরাজের নাম করিতে ভয় করেন নাই, সৰ্বাঙ্গীণ বয়কট সমর্থন করিতে সাহসী হইয়াছেন, আবেদন-নিবেদননীতি বর্জনপূর্বক আত্মশক্তি ও বৈধ প্রতিরােধ অবলম্বন করিয়া তদনুযায়ী প্রস্তাব সকল রচনা করিয়াছেন ৷ শ্রীহট্ট জেলা সমিতিতে স্বরাজ ধৰ্ম্মতঃ প্রত্যেক জাতির প্রাপ্য বলিয়া ঘােষণা করা হইয়াছে, সমিতি দেশবাসীদিগকে স্বরাজ-লাভের জন্য সর্ববিধ বৈধ উপায় প্রয়ােগ করিতে আহ্বান করিয়াছেন ৷ এই অধিবেশনে কয়েকটী নৃতন লক্ষণ দেখিলাম ৷ প্রথমতঃ, সমিতি রাজনীতিক সঙ্কীর্ণ গণ্ডীর বাহিরে যাইতে সাহসী হইয়া বিলাতযাত্রার প্রশংসনীয়তা প্রচার করিয়াছেন ও জাতীয়ভাবাপন্ন বিলাত-প্রত্যাগতদিগকে সমাজে গ্রহণ করিবার জন্য সমাজকে অনুরােধ করিয়াছেন ৷ এই সম্বন্ধে বিষয়-নিৰ্বাচন সমিতিতে যথেষ্ট বাদবিবাদ হয় কিন্তু মতামত দিবার সময়ে সর্বসমেত বিলাতাত্রা-বিরােধীর সংখ্যা একাদশের অধিক হয় নাই ৷ প্রতিনিধিদের মধ্যেও ইহাদিগের সংখ্যা অতি অল্প ছিল ৷ পাঁচ শত প্রতিনিধির মধ্যে প্রায় চল্লিশজন প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ছিলেন, বহুশত কণ্ঠের গগনভেদী ‘বন্দেমাতরম' ধ্বনির সহিত প্রস্তাব গৃহীত হইল ৷ দ্বিতীয়তঃ, অধিবেশনের সময়ে এই প্রস্তাব ভিন্ন আর কোনও প্রস্তাব গ্রহণে বক্তৃতা করা হয় নাই ৷ প্রস্তাবক, অনুমােদক ও সমর্থক সকলে বিনা বক্তৃতায় স্ব স্ব কার্য সম্পাদন করিলেন ৷ তৃতীয়তঃ, অধিবেশন সহরে না হইয়া জলপ্লাবিত জলসুকা গ্রামে হইয়াছে ৷ চতুর্থতঃ, সভাপতির আসনে লব্ধপ্রতিষ্ঠ উকিল বা বিখ্যাত রাজনীতিক বক্তা বিরাজমান না হইয়া একজন সুপণ্ডিত ধার্মিক সন্ন্যাসীতুল্য নিষ্ঠাবান ধুতি-চাদর পরিহিত রুদ্রাক্ষমালা-শােভিত ব্রাহ্মণ সেই আসন গ্রহণে সৰ্ব্বজনসম্মতিতে নির্বাচিত হইলেন ৷ এই সকল সুলক্ষণ দেখিয়া কাহার মনে আশা ও আনন্দ সঞ্চার হইবে না? অশিক্ষিত জনসম্প্রদায় এখনও আন্দোলনে পূর্ণভাবে যােগদান করেন নাই, শিক্ষার অভাবে সেইরূপ যােগদান দুঃসাধ্য, কিন্তু আন্দোলন কয়েকজন ইংরাজী ভাষাভিজ্ঞ উকিল, ডাক্তার, সংবাদপত্র-সম্পাদক ও শিক্ষকের মধ্যে আবদ্ধ না হইয়া সমস্ত শিক্ষিত সম্প্রদায়কে আকৃষ্ট ও আত্মসাৎ করিয়াছে; জমিদার, ব্যবসায়ী, ব্রাহ্মণ পণ্ডিত, সহরবাসী, গ্রামবাসী কাহাকেও বাদ দেয় নাই, ইহাই আশার কথা ৷
প্রজাশক্তি ও হিন্দুসমাজ
বিলাতযাত্রার প্রস্তাবকে কেন সুলক্ষণ বলিলাম, তাহা সংক্ষেপে বিবৃত করা উচিত ৷ কারণ এই সম্বন্ধে এখনও মতের ঐক্য নাই, অতএব এইরূপ সামাজিক কথা উত্থাপিত না করাই শ্রেয়স্কর, ইহাই অনেকের ধারণা ৷ আমরাও পাঁচ বৎসর পূৰ্ব্বে এই আপত্তি যুক্তিসঙ্গত বলিতাম, এখনও যদি জাতীয় মহাসভায় এই প্রশ্ন আলােচিত হইত, আমরা তাহা বারণ করিতাম ৷ স্বদেশী আন্দোলনের পূর্বে কয়েকজন ইংরাজীশিক্ষিত, বিলাতীভাবাপন্ন ভদ্রলােক ভিন্ন সমস্ত শিক্ষিত সমাজ রাজনীতিক সভার অধিবেশনে যােগদান করিতেন না ৷ ইহারা হিন্দুসমাজ সম্পর্কীয় জটিল প্রশ্নগুলির বিচার করিবার অধিকারী ছিলেন না, সেই সকল প্রশ্নের মীমাংসা করিতে গেলে হাস্যাস্পদ হইতে, হিন্দুসমাজের ক্রোধ ও ঘৃণার পাত্র হইতেন ৷ যে সামাজিক সমিতি মহাসভার অধিবেশনস্থানে বসিত, তাহাও সেইরূপ অনধিকারচর্চা করিত ৷ সমাজই সমাজরক্ষা ও সমাজসংস্কার করিতে পারে; যাঁহারা হিন্দুধর্ম মানেন, তাহারাই হিন্দুসমাজের পুনরুজ্জীবনে ও ধৰ্ম্মসংস্থাপনে ব্রতী হইতে পারেন, কিন্তু যাঁহারা সেই সমাজকে উপেক্ষা করিয়া হিন্দুধর্মকে উপহাস করেন, তাহারা সংস্কারের কথা তুলিলে সেই চেষ্টাকে অনধিকারচর্চা ভিন্ন আর কি বলিব? মহাসভায় এখনও সমস্ত হিন্দুসমাজ যােগদান করেন নাই, অতএব মহাসভা এইরূপ প্রস্তাব গ্রহণে অনধিকারী ৷ কিন্তু বঙ্গদেশের অবস্থা স্বতন্ত্র ৷ নিষ্ঠাবান হিন্দু, ব্রাহ্মণ পণ্ডিত, গৈরিক বসনধারী সন্ন্যাসী পৰ্য্যন্ত রাজনীতিক আন্দোলনে যােগদান করিতে আরম্ভ করিয়াছেন ৷ উপরন্তু হিন্দুসমাজ রক্ষার উপায় না করিলে আর চলে না ৷ পাশ্চাত্য শিক্ষার আক্রমণে আমাদের সব ভাঙ্গিয়া পড়িতেছে ৷ আচার-বিচার আজকাল ভানমাত্র, ধর্মে জীবন্ত আস্থা ও বিশ্বাস এখন লুপ্ত না হইলেও কমিয়া গিয়াছে, মুসলমান ও খ্রীষ্টানের সংখ্যাবৃদ্ধি হইয়া হিন্দুর সংখ্যা সবেগে হাস পাইতেছে; পূৰ্ব্বে সময়ােপযােগী, বর্তমানে অনিষ্টকারক কয়েকটী প্রথার উপর অনুচিত মমতা বশতঃ জাতির উন্নতি ও মহত্ত্বপ্রাপ্তি স্থগিত হইয়া রহিয়াছে ৷ পূর্বকালে, যখন হিন্দু রাজা ছিলেন, রাজশক্তিই ব্রাহ্মণদিগের পরামর্শে ও সাহায্যে সমাজরক্ষা ও সময়ােপযােগী সমাজ-সংস্কার করিত ৷ সেই রাজশক্তি লুপ্ত, শীঘ্র পুনরায় সংস্থাপিত হইবার আশাও নাই ৷ তবে প্রজাশক্তি বর্ধিত হইতেছে ও সংস্থাপিত হইবার চেষ্টা করিতেছে ৷ এই অবস্থায় প্রজাশক্তি পরাতন হিন্দ রাজশক্তির স্থান অধিকার করিয়া সেইরূপেই সমাজরক্ষা ও সমাজসংস্কার করা উচিত; নচেৎ হিন্দু জাতি উৎসন্ন হইবে ৷ শ্রীহট্টে একজন ব্রাহ্মণ পণ্ডিত এই প্রস্তাবের মুখ্য সমর্থক ছিলেন, প্রতিনিধিগণের মধ্যেও বােধহয় বিলাতফেরত কেহ ছিলেন না, গ্রামে গ্রামে নিৰ্বাচিত প্রতিনিধি অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন ৷ এইস্থলে এইরূপ প্রস্তাব গৃহীত হওয়া আশার লক্ষণই বলিতে হইবে ৷ ইহাতে হিন্দুসমাজেও আঘাত লাগিবার কোনও সম্ভাবনা নাই ৷ অবশ্য এইরূপ প্রস্তাব অতিশয় সতর্কতার সহিত গৃহীত হওয়া উচিত ৷ ব্রাহ্মণগণ ও প্রত্যেক বর্ণের মুখ্য মুখ্য সামাজিক নেতাদিগকে প্রস্তাবগ্রহণে সম্মত করাইয়া তাহার পরে প্রস্তাব গ্রহণ করাই যুক্তিসঙ্গত ৷
বিদেশযাত্রা
বিদেশযাত্রার আবশ্যকতা সম্বন্ধে আর মতের অনৈক্য থাকিতে পারে না ৷ আমরা সকলে স্বদেশীর বিস্তারকে জাতির জীবনরক্ষার মুখ্য উপায় বলিয়া ধরিয়া লইয়াছি, বিদেশযাত্রা নিষিদ্ধ হইলে সেই বিস্তার হওয়া দুঃসাধ্য ৷ যাঁহারা শিল্পশিক্ষার জন্য বিদেশে যাইবেন, তাহারা দেশের রক্ষার্থে এবং সমাজ পুষ্ট্যর্থে বিদেশযাত্রা করিবেন, পুণ্যকাৰ্য্যে ধৰ্ম্মকাৰ্যে ব্রতী হইয়া যাইবেন ৷ কোন্ মুখে সমাজ এই কাৰ্য্যকে পাপকাৰ্য্য বা সমাজচ্যুতির উপযুক্ত কুকৰ্ম্ম বলিবেন, কোন্ মুখে উৎসাহী যুবকবৃন্দকে এই মহৎ উন্নতি-চেষ্টায় নিযুক্ত করিয়া সেই আজ্ঞাপালনের পুরস্কার দিয়া বিষম সামাজিক শাস্তিতে দণ্ডিত করিবেন ৷ এতগুলি তেজস্বী ধর্মপ্রাণ স্বদেশহিতৈষী জাতীয়ভাবাপন্ন যুবক যদি সমাজ হইতে বিতাড়িত হন, তাহাতে হিন্দুসমাজের কি কল্যাণ সাধিত হইবে – যুক্তির দিক দেখিতে গেলে বিলাত্যাত্রা নিষেধের পক্ষে কোন যুক্তি পাওয়া যায় না ৷ শাস্ত্রের দিক হইতেও বিদেশযাত্রার কোনও অলঙ্ঘনীয় প্রতিবন্ধক হয় না ৷ শাস্ত্রের দুয়েকটী শ্লোকের দোহাই দিলে চলে না, শাস্ত্রের ভাবার্থ ও আৰ্য্যসমাজের পুরাতন প্রণালীও দেখিতে হয় ৷ অতি অর্বাচীন কাল পৰ্য্যন্ত বিদেশযাত্রা ও সমুদ্রযাত্রা বিনা আপত্তিতে চলিত, আৰ্য্য সাহিত্যে ইহার ভূরি ভূরি প্রমাণ পাওয়া যায় ৷ যখন সমাজরক্ষা ও আচাররক্ষা কঠিন হইয়া উঠে, তখন ব্রাহ্মণদের পরামর্শে সমুদ্রযাত্রা ও আটক নদীর ওইদিকে প্রবাস করা নিষিদ্ধ হয় ৷ সেইরূপ কারণেই জাপানে বিদেশযাত্রা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হইয়াছিল ৷ এইরূপ বিধান কালসৃষ্ট, কালে নষ্ট হয়, সনাতন প্রথা হইতে পারে না ৷ যতদিন জাতি ও সমাজ তাহা দ্বারা উপকৃত ও রক্ষিত হয়, ততদিন সময়ােপ-যােগী বিধান থাকে, যেদিন জাতির ও সমাজের বিকাশ ও উন্নতির অন্তরায় হইয়া যায়, সেদিন হইতে তাহার বিনাশ অবশ্যম্ভাবী ৷ বিদেশফেরত ভারতবাসীর ইংরাজ অনুকরণ, সমাজের উপর উপেক্ষা ভাব এবং উদ্ধত আচরণ ও কথায় এই অকল্যাণকর সংস্কারের বিলম্ব হইয়াছে ৷ সমাজ মানিয়া, সমাজে থাকিয়া ৷ সমাজের কল্যাণ সাধিত হয়, তাহা সমাজ বিনাশের চেষ্টায় সাধিত হয় না ৷
Home
Sri Aurobindo
Books
Bengali
Share your feedback. Help us improve. Or ask a question.