CWSA Set of 37 volumes
Writings in Bengali and Sanskrit Vol. 9 of CWSA 715 pages 2017 Edition
Bengali
 PDF   

Editions

ABOUT

All writings in Bengali and Sanskrit including brief works written for the newspaper 'Dharma' and 'Karakahini' - reminiscences of detention in Alipore Jail.

Writings in Bengali and Sanskrit

Sri Aurobindo symbol
Sri Aurobindo

All writings in Bengali and Sanskrit. Most of the pieces in Bengali were written by Sri Aurobindo in 1909 and 1910 for 'Dharma', a Calcutta weekly he edited at that time; the material consists chiefly of brief political, social and cultural works. His reminiscences of detention in Alipore Jail for one year ('Tales of Prison Life') are also included. There is also some correspondence with Bengali disciples living in his ashram. The Sanskrit works deal largely with philosophical and cultural themes. (This volume will be available both in the original languages and in a separate volume of English translations.)

The Complete Works of Sri Aurobindo (CWSA) Writings in Bengali and Sanskrit Vol. 9 715 pages 2017 Edition
Bengali
 PDF   

বাংলা রচনা




“ধর্ম” পত্রিকার সম্পাদকীয়




সম্পাদকীয় – ৬

ধৰ্ম্ম, ৬ষ্ঠ সংখ্যা, ১১ই আশ্বিণ, ১৩১৬

লালমোহন ঘোষ

গত পূৰ্ব্ব শনিবার বাগ্মীবর লালমােহন ঘােষ মহাশয়ের লােকান্তর হইয়াছে ৷ ইনি শেষ বয়সে বিশেষ বুঝিয়াছিলেন, জনসাধারণকে বর্জন করিয়া কেবল মুষ্টিমেয় ইংরাজী-শিক্ষিত লােককে লইয়া রাজনীতিক আন্দোলন সফল হইতে পারে না; প্রাদেশিক সমিতিতে বাঙ্গালায় বক্তৃতা করিবার প্রথা তিনিই প্রথম প্রবর্তিত করেন ৷

লালমােহনের প্রথম বয়সে বাঙ্গালীর পরমুখাপেক্ষিতা দূর হয় নাই ৷ তাই তিনি বিলাতে পার্লামেন্টের সভ্য হইবার চেষ্টা করিয়াছিলেন ৷ তাঁহার সে চেষ্টা ঘটনাচক্রে ফলবতী হয় নাই ৷

লালমােহন অসাধারণ বাগ্মী ছিলেন ৷ ইংরাজী ভাষায় তাহার অসাধারণ ৷ অধিকার ছিল ৷ বিলাতে অনেকে তাঁহার বক্তৃতা বিদেশীর বলিয়া বুঝিতে পারিত না ৷ ইলবার্ট বিলের আন্দোলনকালে ব্যারিষ্টার ব্রানসন যখন টাউন হলে বাঙ্গালী-দিগকে গালি দেন তখন লালমােহন ঢাকায় নর্থব্রুক হলে যে বক্তৃতা করিয়াছিলেন, তাহার তীব্রতার তুলনা নাই ৷ সেই বক্তৃতার ফলে ব্রানসন ভারতবাসী অ্যাটর্ণী-কর্তৃক বর্জিত হইয়া ভারতবর্ষ ত্যাগ করিতে বাধ্য হয়েন ৷

লালমােহন শেষবয়সে নবভাবের ভাবুক হইতে পারেন নাই; বরং পূৰ্ব্বসংস্কার প্রযুক্ত নবভাবের ভাবুকদিগকে নিন্দাও করিয়াছিলেন ৷

কিন্তু বাঙ্গালায় ‘বয়কট’ প্রবর্তনের প্রস্তাব তাহার বিরাট কীৰ্ত্তি ৷ দিনাজপুরে তিনি বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদরূপে বিদেশী-বর্জনের প্রস্তাব করিয়াছিলেন ৷


শ্রীহট্টের প্রস্তাবাবলী

সহযােগিনী ‘সঞ্জীবনী’ সুরমা উপত্যকা সমিতির অধিবেশনে বয়কট প্রস্তাব পরিত্যক্ত হইল এবং ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন ও নিৰ্ব্বাসিতগণের সম্বন্ধে সন্তোষজনক কোন প্রস্তাব হইল না বলিয়া দুঃখপ্রকাশ করিয়াছেন ৷ বেঙ্গলী’ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রস্তাবগুলির ভ্রমাত্মক ইংরাজী অনুবাদ দেখিয়া সহযােগিনী ভ্রমে পতিত হইয়াছেন ৷ এই অনুবাদ ভ্রমপূর্ণ ৷ যে স্থানে Self-Government শব্দ ব্যবহৃত হইয়াছে, মূল বাঙ্গালায় সে স্থানে স্বরাজ শব্দ ছিল ৷ স্বরাজে প্রত্যেক সভ্যজাতির অধিকার আছে, সমিতি দেশবাসীগণকে সৰ্ব্ববিধ বৈধ উপায়ে স্বরাজ-লাভের চেষ্টা করিতে আহ্বান করিতেছেন, এই মর্মে প্রস্তাব গৃহীত হইয়াছিল ৷ ইংলণ্ডের সহিত ভারতের ঔপনিবেশিক সম্বন্ধ নাই; উপরন্তু ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন ভারতের পূর্ণ জাতীয় বিকাশের ও মহত্ত্বের উপযােগী শাসনতন্ত্র নহে; এই বিশ্বাসবলে সমিতি বিনা বিশেষণে স্বরাজই আমাদের রাজনীতিক চেষ্টার লক্ষ্য বলিয়া নির্ণীত করিয়াছেন ৷ বয়কট প্রস্তাবও পরিত্যক্ত হয় নাই; কিন্তু তাহা বঙ্গভঙ্গের সহিত জড়িত না করিয়া সমিতি স্বরাজলাভ ও দেশের উন্নতির জন্য বয়কটের প্রয়ােজনীয়তা বুঝিয়া সমর্থন করিয়াছেন ৷ যে বৈধ উপায়ে স্বরাজলাভের চেষ্টা সমিতির অনুমােদিত, বয়কট সেই বৈধ উপায়ের মধ্যে গণ্য ও প্রধান, ইহাই শ্রীহট্টবাসীদিগের মত ৷ বয়কটের প্রয়ােজনীয়তা বঙ্গভঙ্গ-প্রতিকারে সীমাবদ্ধ হইলে তাহার ক্ষেত্র অতি সঙ্কীর্ণ হইবে ৷ সমিতির গৃহীত প্রস্তাব রচনায় এই মূল নিয়ম রক্ষিত হইয়াছে যে, আত্মশক্তি দ্বারা যাহা লভ্য তাহারই উপর বিশেষ লক্ষ্য রাখা কর্তব্য, রাজপুরুষদিগের নিকট আবেদন-নিবেদন বর্জনীয়, এবং যে যে বিষয় তাহাদের অনুগ্রহের উপর নির্ভর করে অথচ উল্লেখ করা আবশ্যক, সেই সম্বন্ধে গবর্ণমেন্টের নিকট প্রার্থনা বা প্রতিবাদ বৰ্জনপূর্বক মতপ্রকাশ মাত্র করাই যথেষ্ট ৷ এই নিয়ামানুসারে সমিতি নির্বাসিতগণের সহিত সহানুভূতি প্রকাশ করিয়াই ক্ষান্ত হইয়াছেন, বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে ব্যথা বাগাড়ম্বর করিয়া সংক্ষেপে প্রতিবাদ করা হইয়াছে ৷ সহযােগিনী ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন সৰ্ববাদীসম্মত বলিয়াছেন দেখিয়া বিস্মিত হইলাম ৷ জাতীয় পক্ষ মধ্যপন্থীদিগের মন রাখিবার উদ্দেশ্যে সভাসমিতিতে ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রস্তাবের প্রতিবাদ করেন না বটে, কিন্তু সেইরূপ স্বায়ত্তশাসনে তাঁহারা আদৌ আস্থাবান নহেন এবং তাহাকে স্বরাজ শব্দে অভিহিত করিতে সম্মত নহেন ৷ অসম্পূর্ণ স্বরাজ অধীনতা-দোষে দূষিত বলিয়া স্বরাজ নামের অযােগ্য; সেইরূপ স্বায়ত্তশাসনে ইংরাজ উপনিবেশবাসিগণও অসন্তুষ্ট, সেই অসন্তোষ হেতু যুক্ত সাম্রাজ্য (Imperial Federation) এবং স্বতন্ত্র সৈন্য ও নৌ-সেনা গঠনের চেষ্টা চলিতেছে ৷ তাহারা অধীন হইয়া বৃটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত থাকিতে চাহেন না, সাম্রাজ্যের সমান অধিকারপ্রাপ্ত অংশীদার হইতে প্রয়াসী হইয়াছেন ৷ যখন নবজাত অলব্ধপ্রতিষ্ঠ অখ্যাতনামা শিশুজাতির এই মহতী আকাঙ্ক্ষা জন্মিয়াছে, তখন আমরা প্রাচীন আর্যজাতি যদি অসম্পূর্ণ ও জাতীয় মহত্ত্ববিকাশের অনুপযােগী স্বায়ত্তশাসনকে আমাদের এই মহান ও ঈশ্বরপ্রেরিত অভ্যুত্থানের চরম ও পরম লক্ষ্য বলি, তবে তাহা আমাদের হীনতা ও ভগবানের সাহায্যপ্রাপ্তি সম্বন্ধে অযােগ্যতা প্রকাশ করা ভিন্ন আর কি বলিব?


জাতীয় ধনভাণ্ডার

হুগলী প্রাদেশিক সমিতির অধিবেশনে জাতীয় ধনভাণ্ডার ফেডারেশন হল নির্মাণে ব্যয়িত করার প্রস্তাব অবিবাদে গৃহীত হইয়াছিল ৷ মধ্যপন্থী দেশনায়ক শ্ৰীযুত সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রস্তাব করিয়াছিলেন, জাতীয় পক্ষের নেতা শ্ৰীযুত অরবিন্দ ঘােষ ইহার অনুমােদন করিয়াছিলেন; বিনা বিবাদে ও উৎসাহের সহিত প্রস্তাব গৃহীত হইয়াছিল ৷ ইহার পর সমস্ত দেশের আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করিয়া অন্য মত সৃষ্টি করিবার চেষ্টা দেশহিতৈষীর কাৰ্য্য নহে ৷ অথচ ‘বেঙ্গলী’ পত্রিকায় একজন পত্র-প্রেরক পুরাতন সংস্কারের বশীভূত হইয়া ফণ্ডের দাতাগণকে কুপরামর্শ দিয়াছেন ৷ তিনি বলিয়াছেন যে, হুগলীতে সমবেত দেশনায়ক ও প্রতিনিধিগণ বিনা বিচারে ও ক্ষণিক উত্তেজনার বশে এই প্রস্তাব গ্রহণ করিয়াছেন ৷ বস্ত্রবয়নশিল্পের সাহায্যের জন্য ধনভাণ্ডারের সৃষ্টি হইয়াছে, অন্যথা ব্যয়িত হইলে ফণ্ডের ট্রষ্টীগণ দেশের নিকট বিশ্বাসঘাতকতা অপরাধে অপরাধী হইবেন ৷ ধন-ভাণ্ডারের অর্থ ফেডারেশন হল নির্মাণ অপেক্ষা জাতীয় বিদ্যালয় বা বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনষ্টিটিউটের সাহায্যে ব্যয়িত করিলে তাহার মতে দেশের উপকার ও জাতীয় অর্থের সদ্ব্যবহার হইবে ৷ এইগুলিই মহৎ কাৰ্য, ফেডারেশন হল নিৰ্মাণ অতিশয় ক্ষুদ্র ও নগণ্য কাৰ্য্য, হলের অভাবে আমরা এতদিন কোন অসুবিধা বােধ করি নাই; আর কিছুদিন হল নির্মিত না হইলেও চলে ৷ প্রথম কথা, বস্ত্রবয়ন ভিন্ন অন্য উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যদি বিশ্বাসঘাতকতা হয়, তবে লেখক মহাশয় জাতীয় বিদ্যালয়ে বা টেকনিক্যাল ইনষ্টিটিউটের কথা উত্থাপন করিয়াছেন কেন? ইহাতে কি এই বুঝা যায় না যে, অন্য উদ্দেশ্যে ব্যয় করা তাহার মতে অপরাধ নয়, কিন্তু ফণ্ড তঁহার অনভিমত উদ্দেশ্যে ব্যয়িত হইবার সম্ভাবনা দেখিয়া কেবল বাধা দিবার জন্য তিনি বিশ্বাসঘাতকতা বলিয়া আপত্তি করিয়াছেন? ট্রষ্টীগণ কাহার নিকট অপরাধী হইবেন? দেশের মত হুগলীতে প্রকাশ হইয়াছে, দেশের প্রতিনিধিগণ এই উদ্দেশ্যই উপযুক্ত উদ্দেশ্য বলিয়া মত প্রকাশ করিয়াছেন, অতএব এইরূপ অর্থব্যয়ে ট্রষ্টীগণ দেশের নিকট অপরাধী হইবেন না ৷ দাতাদের কথা যদি বলেন, তাহা হইলে আমরা জিজ্ঞাসা করি, দাতাগণ এই ধনভাণ্ডার নিজ ধন, নিজ সম্পত্তি হইয়া থাকিবে বলিয়া দিয়াছেন, না জাতীয় ধন, জাতীয় সম্পত্তি হইবে বলিয়া দিয়াছেন? যদি এই ধনভাণ্ডার জাতীয় সম্পত্তি হয়, তাহা হইলে অর্থ সমস্ত বঙ্গদেশের মতানুসারে ব্যয়িত হওয়া উচিত ৷ সমস্ত বঙ্গদেশ যখন এই উদ্দেশ্য নির্ণয় করিয়াছে, তখন দাতাগণ দেশের মতের বিরুদ্ধে মত দিয়া বাধা দিবেন কেন? অতএব এইরূপ অর্থ ব্যয়ে দাতাগণের নিকটও ট্রষ্টীগণ অপরাধী হইবেন না ৷ তবে এই একটী আপত্তি করা যায় যে, হয়ত তাঁহারা আইনপাশে বদ্ধ, অন্য উদ্দেশ্যে ফণ্ড প্রয়ােগ করিতে অসমর্থ ৷ যখন জাতীয় ধনভাণ্ডার স্থাপিত হয় তখন সংগৃহীত অর্থ বস্ত্রবয়ন ইত্যাদি কাৰ্য্যে ব্যয়িত হইবে, এইরূপ ঘােষণা হইয়াছিল ৷ এখন বিবেচ্য, ইত্যাদি শব্দের অর্থ কি? বস্ত্রবয়ন ইত্যাদি শিল্পকাৰ্য্য, না বস্ত্রবয়ন ইত্যাদি জাতীয় কাৰ্য্য? শেষ অর্থ যদি ধরা যায়, তাহা হইলে আইনের আপত্তিও কাটিয়া যায় ৷ যদি ট্রষ্টীগণ নিজ ক্ষমতা সম্বন্ধে সন্দিহান হয়েন, তবে দাতাগণের সভা করিয়া বঙ্গদেশের প্রতি-নিধিগণের মতে মত দেওয়া হউক, ট্রষ্টীগণ সেই অনুমতিতে সন্দেহমুক্ত হইতে পারেন ৷ জাতীয় বিদ্যালয় বা টেকনিক্যাল ইনষ্টিটিউটে ফণ্ড ব্যয় করার সম্বন্ধে নানা কারণে মতভেদ হইবার সম্ভাবনা ৷ আর বস্ত্রবয়ন শিল্পে ব্যয় করিবার কোনও প্রয়ােজন নাই, বয়ন শিল্পের যথেষ্ট উন্নতি হইয়াছে, সেই ক্ষেত্রের অবশিষ্ট কাৰ্য্য ব্যক্তিগত চেষ্টা বা যৌথ কারবার দ্বারাই সম্পন্ন হইতে পারে ৷ এদিকে ফেডারেশন হল নির্মাণ আর ক্ষুদ্র বা নিষ্প্রয়ােজনীয় কৰ্ম্ম বলা যায় না ৷ এতদিন হল নির্মাণ না হওয়ায় সমস্ত জাতি সত্যভঙ্গ ও অকর্মণ্যতারূপ কলঙ্কভাজন হইয়াছে এবং তাহার অভাবে যথেষ্ট অসুবিধাও ভােগ করিতে হইয়াছে ৷ বঙ্গ-দেশের জীবনকেন্দ্র কলিকাতায় যে ধ্বনি উঠে, সমস্ত দেশময় তাহার প্রতিধ্বনি জাগে, তাহাতেই সমস্ত জাতি উৎসাহিত ও কর্তব্যপালনে বলীয়ান হয়, আন্দো-লনের আরম্ভ হইতে ইহা উপলব্ধি হইয়া আসিতেছে ৷ কলিকাতায় নীরবতার ফলে দেশ নীরব ও উৎসাহহীন হইয়া পড়িয়াছে ৷ অতএব সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে সম্মিলিত হইবার স্থানের অভাব সামান্য অভাব নহে ৷ এরূপ স্থলে সমস্ত বঙ্গদেশের অভীপ্সিত উদ্দেশ্যে জাতীয় ধনভাণ্ডারের অর্থ ব্যয় করা উচিত ও প্রশংসনীয় ৷


সার ফেরোজশাহ মেহতার বয়কট-অনুরাগ

এতদিন আমরা এই ধারণার বশীভূত ছিলাম যে, সার ফেরােজশাহ মেহতা চিরকালই বয়কট বিরােধী ও স্বরাজে অনাস্থাবান ৷ এই ধারণা সার ফেরােজশাহের আচরণে ও কথায় সৃষ্ট ও পুষ্ট হইয়া আসিতেছে ৷ এতদিন পরে সার ফেরােজশাহের হৃদয়ে প্রবল বয়কট-অনুরাগ-বহ্নি জ্বলিতেছে ও স্বরাজের উপর অজস্র অকৃত্রিম-প্রেমধারা তাহার শিরায় শিরায় বহিতেছে এবং চিরকাল বহিয়াছে শুনিয়া আমরা স্তম্ভিত ও রােমাঞ্চিত হইলাম ৷ এই অদ্ভুত বারতা ‘বেঙ্গলী’ পত্রিকা প্রকাশ করিয়াছে ৷ লাহােরে সার ফেরােজশাহ মধ্যপন্থী মহাসভায় সভাপতিপদে নির্বাচিত হইয়াছেন বলিয়া যত ইংরাজী দৈনিক টাইমস অফ ইণ্ডিয়া’, ‘ষ্টেটম্যান’, ‘ইংলিশম্যান, ‘ডেলি জ’ সকলেই আনন্দে অধীর হইয়াছে; ইহা মেহতা মহাশয়ের কম গৌরবের কথা নহে ৷ বেঙ্গলী’র আর সবই সহ্য হয়, কিন্তু ইংলিশম্যান’এর আনন্দে সহযােগী বিপরীতভাবে অধীর হইয়া সার ফেরােজশাহ বয়কট ও স্বরাজ বিরােধী নহেন, ইহা প্রতিপন্ন করিবার চেষ্টা করিতেছেন ৷ সহযােগী বলিয়াছেন, সার ফেরােজশাহ কলিকাতা অধিবেশনে বয়কট প্রস্তাব উৎসাহের ও আনন্দের সহিত অনুমােদন করিয়াছিলেন, দাদাভাইয়ের মুখ হইতে স্বরাজ শব্দ নির্গত হইলে, তিনি আনন্দে প্রফুল্ল হইয়া তাহার সমর্থন করিয়াছিলেন ৷ আমরা শুনিয়া আহ্লাদিত হইলাম বটে, কিন্তু পােড়া মনের দোষে দুষ্ট সন্দেহ জয় করিতে পারিলাম না ৷মনে পড়িতেছে, মাদ্রাজে ও আমেদাবাদে স্বদেশী প্রস্তাবে মেহতা মহাশয়ের তীব্র উপহাস ৷ মনে পড়িতেছে, কলিকাতা অধিবেশনে স্বদেশী প্রস্তাবে “স্বার্থত্যাগ করিয়াও” কথাগুলি সন্নিবিষ্ট করাইবার জন্য দুই-ঘণ্টা কাল ধরিয়া তিলকের উৎকট চেষ্টা, মেহতার ক্রোধ ও তিরস্কার ও গােখলে ও মালবিয়ার মধ্যস্থতা; প্রস্তাবে সেই কথার অবতারণায় মেহতার অভিমান ও মহাসভায় নীরবতা ৷ মনে পড়িতেছে, সুরাটের সভাভঙ্গে মেহতার আনন্দ প্রকাশ ৷ মনে পড়িতেছে, মেহতার পত্রে বঙ্গদেশের অপমান এবং মাদ্রাজে বয়কষ্ট-বৰ্জন ৷ মনে পড়িতেছে, ঔপনিবেশিক স্বরাজ দূর ভবিষ্যতের স্বপ্নমাত্র বলিয়া মেহতার মতপ্রকাশ ৷ না, পােড়া মন ‘বেঙ্গলী’র শুভ সংবাদে কিছুতেই বিশ্বাস করিতে সম্মত হইতেছে না ৷ আমরা ৷ নম্রভাবে সহযােগীকে তাহার কথার অল্পমাত্র প্রমাণ দিতে অনুরােধ করিতেছি, নচেৎ এইরূপ সম্পূর্ণ অলীক ও অবিশ্বাসযােগ্য কথার প্রচারে মধ্যপন্থীদলের কি লাভ হইল, তাহা বুঝিলাম না ৷


কনভেন্সন সভাপতির নির্বাচন

মেহতা মহাশয় যে লাহােরে কভেন্সনের সভাপতিপদে নির্বাচিত হইবেন, ইহা জানা কথা ছিল ৷ বঙ্গদেশের বাহিরে শ্রীযুক্ত সুরেন্দ্রনাথ মধ্যপন্থীগণের মধ্যে মধ্যপন্থী বলিয়া পরিগণিত নহেন, তাহাকে বাদ দিলে বঙ্গদেশকে বাদ দিতে হইবে বলিয়া অগত্যা তাহারা তাহাকে স্থান দিতেছেন ৷ তাহাদের দুর্দশা দেখিয়া দয়াও হয়, সুরেন্দ্রনাথকে গিলিতেও পারেন না, উদগার করিতেও পারেন না ৷ যাঁহাদের উদারমত, যাঁহাদের দেশের উপর প্রগাঢ় প্রেম,1 সুরেন্দ্রনাথ তাঁহার আবেগময়ী বক্তৃতা, তেজস্বিতা ও স্বদেশ প্রেমের গুণে অসাধারণ প্রতিপত্তি লাভ করিয়াছিলেন, সেই প্রতিপত্তি নষ্ট হইতে যাইতেছে, সাহসহীন বন্ধুগণের কুপরামর্শে সমস্ত ভারতের পূজ্য দেশনায়ক ক্ষুদ্র প্রাদেশিক দলের নেতায় পরিণত হইতেছেন ৷ এইদিকে সার ফেরােজশাহ মেহতা কভেন্সনে অসঙ্গত আধিপত্য লাভ করিয়া এই জাল কংগ্রেস বয়কট-বৰ্জন ও শাসন সংস্কার গ্রহণ পূর্বক রাজপুরুষভক্তির মাত্রা বৃদ্ধি ও জাতীয়তা হ্রাস করিতে বদ্ধপরিকর হইয়াছেন ৷ ইহাতে বঙ্গদেশের মধ্যপন্থীগণ অসন্তুষ্ট হন ৷ তাহাতে কনভেন্সনের রাজার কি? বঙ্গদেশের উপর তাহার অবজ্ঞা ও বিদ্বেষ অতিশয় গভীর, বঙ্গদেশের প্রতিনিধিগণ কনভেন্সন বর্জন করিলেও তিনি তাঁহার নির্দিষ্ট পথ পরিত্যাগ করিবেন [না] ৷স্বরাজ, বয়কট, জাতীয় শিক্ষা ও বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদের সহিত তাহার দলের কোনও আন্তরিক সহানুভূতি নাই, এই প্রস্তাবগুলি উঠিয়া গেলে তাহারা বাঁচেন ৷ তাহারা মিন্টো-স্বদেশী চান, স্বার্থত্যাগযুক্ত স্বদেশী চান না ৷ এই অবস্থায় বঙ্গদেশের মধ্যপন্থীগণ হয় আস্তে আস্তে স্বকীয় রাজনীতিক মত সকল মেহতার শ্রীচরণে বলি দিতে বাধ্য হইবেন, নাহয় কভেল্সন হইতে সরিয়া আসিতে হইবে ৷ যুক্ত মহাসভা তাহাদের আত্মরক্ষার একই উপায়, কিন্তু মেহতার কথার বিরুদ্ধে সাহসে কথা বলিয়া যুক্ত মহাসভা স্থাপনের চেষ্টা করিবেন, তাহাদের মধ্যে সেই বল কোথায়? যাহা হউক, এই সভাপতি নির্বাচনে আমাদের পথ আরাে পরিষ্কার হইয়াছে ৷ মেহতা-মজলিসে আমাদের স্থান নাই, যুক্ত মহাসভার আশা আরও ক্ষীণ হইয়া যাইতেছে, এখন ৷ নিজের পথ দেখি ৷ বর্ষশেষের পূর্বেই জাতীয় পক্ষের পরামর্শ-সভা স্থাপন ও সম্মিলন প্রয়ােজনীয় ৷









Let us co-create the website.

Share your feedback. Help us improve. Or ask a question.

Image Description
Connect for updates