All writings in Bengali and Sanskrit including brief works written for the newspaper 'Dharma' and 'Karakahini' - reminiscences of detention in Alipore Jail.
All writings in Bengali and Sanskrit. Most of the pieces in Bengali were written by Sri Aurobindo in 1909 and 1910 for 'Dharma', a Calcutta weekly he edited at that time; the material consists chiefly of brief political, social and cultural works. His reminiscences of detention in Alipore Jail for one year ('Tales of Prison Life') are also included. There is also some correspondence with Bengali disciples living in his ashram. The Sanskrit works deal largely with philosophical and cultural themes. (This volume will be available both in the original languages and in a separate volume of English translations.)
গীতার দোহাই
লণ্ডনে জাতীয় মহাসভার অধিবেশনের পক্ষে গীতাকে আশ্রয় করিয়া একটী অদ্ভুত ও রহস্যময় যুক্তি প্রদর্শিত হইতেছে ৷ অধিবেশনের পরিপােষকগণ সেইরূপ অধিবেশনে প্রকৃত ফলের সম্ভাবনা দেখাইতে না পারিয়া দেশবাসীকে গীতােক্ত নিষ্কামধৰ্ম্ম এবং সিদ্ধি ও অসিদ্ধি সম্বন্ধে সমতা অবলম্বন করিতে বলিতেছেন ৷ লণ্ডন অধিবেশন আমাদের কর্ত্তব্য কৰ্ম্ম, অতএব তাহার ফলাফল বিবেচনা না করিয়া কৰ্ত্তব্য কৰ্ম্ম সমাধান করা উচিত ৷ রাজনীতিতে ধর্মের দোহাই ও গীতার দোহাই দেখিয়া আমরা প্রীত হইলাম, এবং কর্মযােগী’ ও ‘ধৰ্ম্মের চেষ্টার ফল হইতেছে বুঝিয়া আশান্বিত হইলাম ৷ তবে গীতার এইরূপ ব্যাখ্যায় গােড়ায় গলদ হইবার সম্ভাবনা দেখিয়া শঙ্কিতও হইলাম ৷ কর্তব্য পালনের উপায়-নির্বাচনে অপরিণামদর্শিতা ও উদ্দেশ্যসিদ্ধির চেষ্টায় উদাসীনতা শিক্ষা দেওয়া গীতার সমতাবাদ ও নিষ্কাম-কৰ্ম্মবাদের উদ্দেশ্য নহে ৷ আমাদের কর্ত্তব্য কি, তাহা অগ্রে নির্ণয় করা আবশ্যক; তৎপরে ধীরভাবে অসিদ্ধিতে অবিচলিত হইয়া কৰ্ত্তব্যসম্পাদন করা ধৰ্ম্মানুমােদিত পন্থা ৷ লণ্ডন অধিবেশন আমাদের কর্তব্য কৰ্ম্ম কিনা, তাহা লইয়াই বাদবিবাদ; সেই প্রশ্নের মীমাংসায় পরিণামচিন্তা বর্জন করিতে পারি না ৷ কৰ্ত্তব্য-নির্ণয়ে দুই স্বতন্ত্র বিষয়ের মীমাংসা আবশ্যক, প্রথম উদ্দেশ্য, দ্বিতীয় উপায় ৷ মুখ্য উদ্দেশ্য ধৰ্ম্মানুমােদিত হইলে – ধৰ্ম্মের আবশ্যক অঙ্গ হইলে – পরিণাম চিন্তা চলে না; তাহা আমাদের স্বধৰ্ম্ম হয়, সেই ধর্মপালনে নিধনও শ্রেয়স্কর তবে তাহা পরিত্যাগ করিয়া পরধর্মপালন পাপ ৷ যেমন, স্বাধীনতা-অর্জনের চেষ্টা, স্বাধিকার-লাভের চেষ্টা, দেশহিত-সম্পাদনের চেষ্টা জাতির প্রধান ধৰ্ম্ম, দেশের প্রত্যেক কৰ্ম্মী-সন্তানের স্বধৰ্ম্ম, সেই স্বধৰ্ম্মপালনে প্রাণত্যাগও শ্রেয়স্কর, তথাপি স্বধৰ্ম্মত্যাগপূৰ্ব্বক শূদ্রোচিত পরাধীনতা এবং দাসস্বভাব-সুলভ স্বার্থপরতা আশ্রয় ৷ করা মহাপাপ ৷ কিন্তু উপায় কেবলই ধৰ্ম্মানুমােদিত হইলে চলে না, উদ্দেশ্যসিদ্ধির উপযােগীও হওয়া প্রয়ােজন ৷ স্বধৰ্ম্মের অঙ্গস্বরূপ কৰ্তব্য কৰ্ম্ম সমাধানের জন্য ধৰ্ম্মানুমােদিত ও উপযুক্ত উপায় প্রয়ােগপূৰ্ব্বক উৎসাহের সহিত কৰ্ত্তব্য-সিদ্ধির চেষ্টা করিয়াও যদি সিদ্ধি লাভ না ঘটে, তাহা হইলে অসিদ্ধিতে অবিচলিত হইয়া প্রাণত্যাগ পৰ্য্যন্ত পুনঃ পুনঃ সৰ্ব্ববিধ উপযুক্ত ও ধৰ্ম্মানুমােদিত উপায়ে কৰ্ত্তব্য-পালনের দৃঢ় চেষ্টা, ইহাই গীতােক্ত সমতা ও নিষ্কাম কৰ্ম্ম ৷ নচেৎ গীতার ধর্ম কর্মীর ধর্ম, বীরের ধর্ম, আৰ্য্যের ধৰ্ম্ম না হইয়া হয় তামসিক নিশ্চেষ্টতার পরিপােষক শিক্ষা, নহে ত অপরিণামদর্শী মূর্খের ধৰ্ম্ম হইত ৷ কৰ্ম্মফলে আমাদের অধিকার নাই, কৰ্ম্মফল ভগবানের হাতে; কৰ্ম্মেই আমাদের অধিকার আছে ৷ সাত্ত্বিক কৰ্ত্তা অহংবাদী ও ফলাসক্তিহীন, কিন্তু দক্ষ ও উৎসাহী ৷ তিনি জানেন যে তাহার শক্তি ভগবদ্দত্ত ও মহাশক্তিচালিত, অতএব তিনি অনহংবাদী; তিনি জানেন যে, ফল পূৰ্ব্ব হইতেই ভগবানের দ্বারা নির্দিষ্ট অতএব তিনি ফলাসক্তিহীন; কিন্তু দক্ষতা, উপায়-নিৰ্বাচন-পটুতা, উৎসাহ, দৃঢ়তা, অদমনীয় উদ্যম শক্তির সর্বোচ্চ অঙ্গ, তাহাও তিনি জানেন, অতএব তিনি দক্ষ ও উৎসাহী হয়েন ৷ সূক্ষ্মবিচারে গীতা-নিহিত গভীর চিন্তা ও শিক্ষার প্রকৃত অর্থ হৃদয়ঙ্গম হয় ৷ নচেৎ দুয়েকটা শ্লোকের স্বতন্ত্র ও বিকৃত অর্থ গ্রহণ করিলে ভ্রমাত্মক শিক্ষা দেওয়া হয় এবং ধৰ্ম্মে ও কর্মে অধােগতি হয় ৷
লণ্ডন অধিবেশন ও যুক্তমহাসভা
দেখা গেল যে, গীতােক্ত সমতাবাদের উপর লণ্ডন অধিবেশন প্রতিষ্ঠিত হইতে পারে না ৷ আর এক যুক্তি প্রদর্শিত হইতেছে ৷ তাহাতে পরিণাম-চিন্তা পরিবর্জিত হয় নাই ৷ অধিবেশনের সমর্থকগণ বলিতেছেন, আর কোনও ফল হউক বা না হউক, লণ্ডনে যুক্ত মহাসভা সংস্থাপন হইবে ৷ লাহােরে সেই আশা করা বৃথা; লণ্ডনেই সমস্ত দেশের আশা ও আকাঙক্ষা ফলীভূত হইবে ৷ কথাটী বিশেষ শ্রবণ-সুখােৎপাদক বটে ৷ ইহার কোন সায় থাকিলে আমরাও লণ্ডন অধিবেশনের পক্ষপাতী হইতাম ৷ আমরাও জানি যে লাহােরে যুক্ত মহাসভা স্থাপনের কোনও আশা নাই, কখন সেই আশা পােষণও করি নাই ৷ কিন্তু সমস্ত দেশের আশা ও আকাঙক্ষা যদি দেশেই সফল করিবার উপায় ও আশা নাই, তবে সুদূর বিদেশে সেই আশা ও আকাঙ্ক্ষা সফল হইবে, এই অদ্ভুত যুক্তির যাথার্থতার সম্বন্ধে আমরা প্রত্যয়ান্বিত হইতে পারিলাম না ৷ সেইরূপ সফলতার কি মূল্য বা কি স্থায়িত্ব হইতে পারে? বুঝিলাম মেহতা গােখলে কৃষ্ণস্বামী তথায় অনুপস্থিত হইলে যুক্ত মহাসভার সমর্থক প্রস্তাব গৃহীত হইতে পারে ৷ বুঝিলাম, তাহারা উপস্থিত হইলেও ছাত্রদিগের উৎসাহে উৎসাহিত হইয়া বঙ্গদেশের মধ্যপন্থীগণ সেইরূপ প্রস্তাব গ্রহণ করিতে সাহসী হইতে পারেন ৷ কিন্তু তাহার পরে কি হইবে? দেশে ফিরিয়া তাহারা কোন পথ অবলম্বন করিবেন? যাঁহারা স্বদেশে মেহতার ও গােখলের সম্মুখে স্বমত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করিতে অক্ষম, তাহারা না হয় বিদেশে যাইয়া সাহস ও চরিত্রের বল দেখাইলেন; স্বদেশে ফিরিলে তাহাদের সেই সাহস ও বল থাকিবে কি? যদি থাকে, তাহা হইলে দূর বিদেশে না যাইয়া যুক্ত মহাসভা দেশেই স্থাপিত হওয়া অসম্ভব কেন? মেহতা গােখলে লণ্ডন মহাসভার প্রস্তাব কখনও গ্রহণ করিবেন না ৷ অধিবেশনে সমস্ত দেশের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন না, অল্প কয়েকজনের পরামর্শে অনেকের মত উপেক্ষা করিয়া বঙ্গবাসীদিগের সংখ্যাধিক্য-হেতু প্রস্তাব গৃহীত হইল; আবার কভেন্সনের অধিবেশনে গৃহীত না হওয়া পৰ্য্যন্ত আমরা সম্মত হইব না, ইত্যাদি অনেক অজুহাত আছে ৷ অজুহাতের কি প্রয়ােজন? কভেন্সন-নীতির মূল তত্ত্ব এই যে চরমপন্থীগণ রাজদ্রোহী এবং সমস্ত অশান্তি ও অনর্থের মূল; তাহাদিগকে কঠোর দণ্ডে দণ্ডিত করা গবর্ণমেন্টের কৰ্ত্তব্য, অতএব তাহাদের সংসর্গ রহিত না করিলে মহাসভা বিনষ্ট হইবে ৷ এই মূল তত্ত্ব বিসৰ্জন করিয়া যাঁহারা চরমপন্থীদিগকে পুনর্বার মহাসভায় প্রবেশ করাইতে যাইতেছেন, তাহাদের প্রস্তাব আমরা শুনিতেও বাধ্য নহি, এই কথা কি রাসবিহারী, ফেরােজশাহ ও গােখলে বলিবেন না? সার ফেরােজশাহের মত সকলেই জানেন, রাসবিহারী বাবু সুরাটের বক্তৃতায় ও মাদ্রাজের বক্তৃতায় এবং গােখলে মহাশয় পূণার বক্তৃতায় নিজ নিজ মত প্রকাশ করিয়াছেন ৷ তখন কি আর এ আশা করা যায় যে বঙ্গদেশের মধ্যপন্থীগণ তাহাদের বর্জন করিয়া স্বদেশে যুক্ত মহাসভা করিবেন? সেই সাহস ও দৃঢ়তা যদি থাকে, তাহা হইলে দেশে যুক্ত মহাসভার উদ্যোগ করেন না কেন? সেই দৃঢ়তা না থাকিলে লণ্ডনে যাইয়া কৌশলে বােম্বাইয়ের নেতাগণকে পরাজিত করিবার চেষ্টা বিফল হইবে ৷
সার জর্জ ক্লার্কের সারগর্ভ উক্তি
সার জর্জ ক্লার্ক সম্প্রতি পুণায় যে বক্তৃতা করিয়াছেন, তাহাতে অসার ও সারগর্ভ কথার আশ্চৰ্য্য মিশ্রণ হইয়াছে ৷ প্রথম যুক্তি এই যে, ভারতে শিল্প-বাণিজ্যের দ্রুততর উন্নতি হইলে দেশের অশেষ অনিষ্ট হইবার সম্ভাবনা; কেন না,শ্রমজীবীর সংখ্যা অতিশয় কম, মিলের সংখ্যা বাড়িলে আরও টানাটানি পড়িবে, চাষীগণ শ্রমজীবী হওয়ায় কৃষির অবনতি হইবে ৷ কৃষির অতিমাত্র আধিক্যে, শিল্পবাণিজ্যের বিনাশে বৃটিশ বাণিজ্যের যথেষ্ট উপকার হইয়াছে ৷ ক্লার্ক সেই অস্বাভাবিক অবস্থার পরিবর্তনে আশঙ্কিত হইয়াছেন ৷ তাহা ইংরাজ রাজনীতিবিদের পক্ষে স্বাভাবিক ও প্রশংসনীয় ৷ কিন্তু এই অবস্থায় ভারতবাসীর দারিদ্র্য ও অবনতি ঘটিয়াছে; কৃষি প্রাধান্যের সঙ্কোচে, বাণিজ্যের বিস্তারে শ্রমজীবীর উন্নতিতে দেশের মঙ্গল ৷ সার জর্জ আরও বলিয়াছেন যে, বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদ করা যদি বয়কটের উদ্দেশ্য হয়, জাভায় ও হিন্দুপ্রধান মােরিশ্য দ্বীপের অধিবাসীর প্রস্তুত চিনির বর্জনে সেই উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইবে না, তাহাতে বৃটিশ জাতির জ্ঞানােদয় হওয়া অসম্ভব ৷ কাৰ্য্যতঃ এই কথায় তিনি দেশবাসীকে বিদেশী বর্জন পরিত্যাগ করিয়া বৃটিশ পণ্য বর্জন করিতে পরামর্শ দিয়াছেন ৷ এ কথা যুক্তিসঙ্গত ও সারগর্ভ ৷ আমরাও বলি, ভারতবাসীর ঔপনিবেশিক ও ভারতবাসীর সাহায্যদাতা আমেরিকার পণ্য বর্জন না করিয়া বৃটিশ পণ্য বর্জন করায় বয়কট কৃতকাৰ্য্য হইবে; ইংরাজ জাতির জ্ঞানােদয় ও ভারতের উপর সম্মান ভাব হইবে, স্বদেশীরও বলবৃদ্ধি হইবে ৷ স্বদেশী বস্তু থাকিলে বিদেশী কিনিব না, স্বদেশী বস্তুর অবর্তমানে আমেরিকা বা অন্য দেশের পণ্য কিনিব, বর্তমান অবস্থায় বৃটিশ পণ্য কিনিব না, ইহাই স্বদেশী ও বয়কটের প্রকৃত পন্থা ৷ ক্লার্ক মহাশয় আরও বলিয়াছেন যে, কোন নিশ্চিত উদ্দেশ্য বা বিশেষ দোষ বা অসুবিধা উপলক্ষ্য না করিয়া অনির্দিষ্টভাবে গবর্ণমেণ্টকে তিরস্কার করায় কোনও ফল নাই ৷ যথার্থ কথা ৷ আমরা বর্তমান অবস্থায় কি দোষ বা অসুবিধা দেখি, কিসে সন্তুষ্ট হইব, তাহা রাজপুরুষদিগকে জানান হউক, তাঁহারা যদি না শুনেন তাহা হইলেও তিরস্কার করা বৃথা, আত্মশক্তি ও বৈধ প্রতিরােধ অবলম্বনীয় ৷ ক্লার্ক মহাশয়ের কথার এই অর্থ বুঝিলাম ৷ আশা করি, দেশবাসী বােম্বাইয়ের লাটসাহেবের এই দুই সারগর্ভ ও যুক্তিসঙ্গত উপদেশ হৃদয়ঙ্গম করিবেন ৷
বিলাতে আত্মপক্ষ সমর্থন
জাতীয় পক্ষের শ্রদ্ধেয় নেতা শ্রীযুক্ত বিপিনচন্দ্র পাল সম্প্রতি জাতীয় পক্ষের ভবিষ্যৎ পন্থা নির্ধারণের সম্বন্ধে স্বমত প্রকাশ করিয়াছেন ৷ দেখিতেছি বিলাতে আত্মপক্ষ সমর্থন বিষয়ে বিপিন বাবুর মত কতক পরিবর্তিত হইয়াছে ৷ অবস্থান্তরে সেইরূপ মত পরিবর্তন স্বাভাবিক ৷ বিশেষতঃ উদ্দেশ্য লইয়া যেমন অটল থাকা প্রয়ােজনীয়, উপায় লইয়া অটল থাকা সৰ্ব্বদা বিজ্ঞতার পরিচায়ক নহে ৷ উপায় লইয়া আমাদেরও মত কতক পরিমাণে পরিবর্তিত হইয়াছে ৷ তবে বিপিন বাবুর যুক্তির যাথার্থ্য সম্বন্ধে মতভেদ হওয়া সম্ভব ৷ তিনি বলিতেছেন, ইংরাজ জাতি দেবতা নন, তাহারা স্তবস্তোত্রে প্রীত হইয়া স্বর্গ হইতে স্বরাজ হাতে লইয়া অবতরণ করিবেন না, সত্য, তথাপি তাহারা গুণহীন বা স্বভাবতঃ অন্যায়ের পক্ষপাতী নহেন, তাহাদের বিবেকবুদ্ধি আছে ৷ সম্প্রতি নিগ্রহনীতি প্রবর্তিত থাকায় ভারতবর্ষে জাতীয় পক্ষের উদ্যম ও চেষ্টা অতিশয় সঙ্কট অবস্থায় পড়িয়া উত্তমরূপে চলিতেছে না, বিলাতে ভারতগত ইংরাজের মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ দ্বারা আমাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও কাৰ্য্য বৃটিশ জাতির নিকট জ্ঞাপন করিতে পারিলে সেই বিবেক জাগরিত হইতে পারে এবং নিগ্রহনীতিও বন্ধ হইতে পারে ৷ অতএব বিলাতে সেইরূপ প্রচারের ব্যবস্থা করা আবশ্যক ৷ আমরা স্বীকার করিলাম ইংরাজগণ দেবতাও নন, পশুও নন, তাঁহারা মানুষ, তাহাদের বিবেকবুদ্ধি আছে ৷ কিন্তু ইংরাজ পশু ও সম্পূর্ণ গুণহীন, এ কথাও কেহ কখন বলেন নাই, এইরূপ ভুল ধারণায় জাতীয় পক্ষ বিলাতে আত্মপক্ষ সমর্থন ত্যাগ করেন নাই ৷ ইংরাজ মানুষ, মানুষ নিজ স্বার্থই অনলস যুক্তি করিয়া নিজ স্বার্থকে ন্যায় ও ধৰ্ম্ম বলিয়া অভিহিত করিতে অভ্যস্ত ৷ আমরা বিপিন বাবুকে জিজ্ঞাসা করি, বিলাতে সেইরূপ ব্যবস্থা হইলে সাধারণ ইংরাজ কাহার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করিবেন – আমাদের নিজ জাতভাইয়ের? এই কারণেই আমরা সেইরূপ চেষ্টায় আস্থাবান নই ৷ আর একটী কথা স্মরণ করা আবশ্যক ৷ নিৰ্বাসন ও নির্বাসিতগণের সম্বন্ধে সত্য ও নির্ভুল কথা বিলাতে কটন প্রভৃতি পার্লামেন্টের সভাসদগণ প্রাণপণে প্রচার করিয়াছেন, তাহাতে উদারনীতিক ও রক্ষণশীল অনেক সভাসদ নির্বাসনের উপর বীতশ্রদ্ধ হইয়াছেন বটে, কিন্তু তাহারা কি কখনও নিৰ্বাসনপ্রথা উঠাইয়া দিবেন বা রাজপুরুষগণকে নির্বাসিতদের মুক্তি দিতে আদেশ করিবেন? বিপিনবাবু এখন ইংরাজদের রাজনীতিক জীবন নিকট হইতে দেখিতেছেন, কতক অভিজ্ঞতা লাভও করিয়া থাকিবেন, তিনি এ কথার উত্তর দিউন ৷
Home
Sri Aurobindo
Books
Bengali
Share your feedback. Help us improve. Or ask a question.