All writings in Bengali and Sanskrit including brief works written for the newspaper 'Dharma' and 'Karakahini' - reminiscences of detention in Alipore Jail.
All writings in Bengali and Sanskrit. Most of the pieces in Bengali were written by Sri Aurobindo in 1909 and 1910 for 'Dharma', a Calcutta weekly he edited at that time; the material consists chiefly of brief political, social and cultural works. His reminiscences of detention in Alipore Jail for one year ('Tales of Prison Life') are also included. There is also some correspondence with Bengali disciples living in his ashram. The Sanskrit works deal largely with philosophical and cultural themes. (This volume will be available both in the original languages and in a separate volume of English translations.)
1
লােকে যখন অষ্টসিদ্ধির কথা বলে, তখন অলৌকিক যােগপ্রাপ্ত কয়েকটী অপূর্ব শক্তির কথা ভাবে ৷ অবশ্য অষ্টসিদ্ধির পূর্ণবিকাশ যােগীরই হয়, কিন্তু এই শক্তিসকল প্রকৃতির সাধারণ নিয়মের বর্হিভূত নহে, বরং আমরা যাহাকে প্রকৃতির নিয়ম বলি, তাহা অষ্টসিদ্ধির সমাবেশ ৷
অষ্টসিদ্ধির নাম মহিমা, লঘিমা, অণিমা, প্রাকাম্য, ব্যাপ্তি, ঐশ্বৰ্য্য, বশিতা, ঈশিতা ৷ এইগুলিই পরমেশ্বরের অষ্ট স্বভাবসিদ্ধ শক্তি বলিয়া পরিচিত ৷ কাম্য ধর, – প্রাকাম্যের অর্থ সমস্ত ইন্দ্রিয়ের সম্পূর্ণ বিকাশ ও অবাধ ক্রিয়া ৷ বাস্তবিক, পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয় ও মনের সকল ক্রিয়া প্রাকাম্যের অন্তর্গত ৷ প্রাকাম্যের বলে চক্ষুতে দেখে, কাণে শােনে, নাকে আঘ্রাণ লয়, ত্বকে স্পর্শ অনুভব করে, রসনায় রসাস্বাদন ৷ করে, মনে বাহ্যস্পর্শসকল আদায় করে ৷ সাধারণ লােকে ভাবে, স্থল ইন্দ্রিয়েই জ্ঞানধারণের শক্তি; তত্ত্ববিদ জানে চোখ দেখে না, মন দেখে, কাণ শােনে না, মন শােনে, নাক আঘ্রাণ করে না, মন আঘ্রাণ করে ৷ যাঁহারা আরও তত্ত্বজ্ঞানী, তাহারা জানেন মনও দেখে না, শােনে না, আঘ্রাণ করে না, জীব দেখে, শােনে, আঘ্রাণ করে ৷ জীবই জ্ঞাতা ৷ জীব ঈশ্বর, ভগবানের অংশ ৷ ভগবানের অষ্টসিদ্ধি জীবেরও অষ্টসিদ্ধি ৷
মমৈবাংশে জীবলােকে জীবভূতঃ সনাতনঃ ৷ মনঃষষ্ঠানীন্দ্রিয়াণি প্রকৃতিস্থানি কষতি ॥ শরীরং যদবাপ্নোতি যচ্চাপুক্ৰামতীশ্বরঃ ৷ গৃহীত্বৈতানি সংযাতি বায়ুর্গন্ধানিবাশয়াৎ ॥ শ্ৰোত্রং চক্ষুঃ স্পর্শনঞ্চ রসনং ঘ্রাণমেব চ ৷ অধিষ্ঠায় মনশ্চায়ং বিষয়ানুপসেবতে ॥
আমার সনাতন অংশ জীবলােকে জীব হইয়া মন ও পঞ্চেন্দ্রিয় প্রকৃতির মধ্যে পাইয়া আকর্ষণ করে (নিজ উপযােগে লাগায় ও ভােগের জন্য আয়ত্ত করে) ৷ যখন জীবরূপে ঈশ্বর শরীরলাভ করেন বা শরীর হইতে নির্গমন করেন, তখন যেমন বায়ু গন্ধকে ফুল ইত্যাদি হইতে লইয়া যায়, তেমনই শরীর হইতে ইন্দ্রিয়সকল লইয়া যান ৷ শ্রোত্র, চক্ষু, স্পর্শ, আস্বাদ, ঘ্রাণ ও মন অধিষ্ঠান করিয়া এই ঈশ্বর বিষয় ভােগ করেন ৷ দৃষ্টি, শ্রবণ, আঘ্রাণ, আস্বাদন, স্পর্শ, মনন এইগুলিই প্রাকাম্যের ক্রিয়া ৷ ভগবানের সনাতন অংশ জীব এই প্রকৃতির ক্রিয়া লইয়া প্রকৃতির বিকারে পঞ্চেন্দ্রিয় ও মন সূক্ষ্মশরীরে বিকাশ করেন, স্থূলশরীর লাভ করিবার সময় এই ষড়িন্দ্রিয় লইয়া প্রবেশ করেন, মৃত্যুকালে এই ষড়িন্দ্রিয় লইয়া নির্গমন করেন ৷ সূক্ষ্মদেহেই হউক, স্থূলদেহেই হউক, তিনি এই ষড়িন্দ্রিয়ে অধিষ্ঠান করিয়া বিষয়সকল ভােগ করেন ৷
কারণদেহে সম্পূর্ণ প্রাকাম্য থাকে, সেই শক্তি সূক্ষ্মদেহে বিকাশলাভ করে, পরে স্থূলদেহে বিকশিত হয় ৷ কিন্তু প্রথম হইতে স্কুলে সম্পূর্ণ প্রকাশ হয় না, জগতের ক্রমবিকাশে ইন্দ্রিয়সকল ক্রমে বিকশিত হয়, শেষে কয়েকটী পশুর মধ্যে মানুষের উপযােগী বিকাশ ও প্রাখৰ্য্য লাভ করে ৷ মানুষের মধ্যে পঞ্চেন্দ্রিয় অল্প নিস্তেজ হইয়া পড়ে, কারণ আমরা মন ও বুদ্ধির বিকাশে অধিক শক্তি প্রয়ােগ করি ৷ কিন্তু এই অসম্পূর্ণ অভিব্যক্তি কাম্য বিকাশের শেষ অবস্থা নয় ৷ যােগ দ্বারা সূক্ষ্মদেহে যত প্রাকাম্য বিকাশ হইয়াছে, তাহা স্থূলদেহেও প্রকাশ পায় ৷ ইহাকেই যােগপ্রাপ্ত প্রাকাম্য সিদ্ধি বলে ৷
2
পরমেশ্বর অনন্ত ও অপরাহত-পরাক্রম, তাঁহার স্বভাবসিদ্ধ শক্তিরও ক্ষেত্র অনন্ত ও ক্রিয়া অপরাহত ৷ জীব ঈশ্বর, ভগবানের অংশ, সূক্ষ্মদেহে ও স্থূলদেহে আবদ্ধ হইয়া ক্রমে ক্রমে ঐশ্বরিক শক্তি বিকাশ করিতেছেন ৷ স্থূল শরীরের ইন্দ্রিয়সকল বিশেষতঃ সীমাবদ্ধ, মানুষ যতদিন স্থূলদেহের শক্তিদ্বারা আবদ্ধ থাকে, ততদিন বুদ্ধিবিকাশেই সে পশুর অপেক্ষা উৎকৃষ্ট, নচেৎ ইন্দ্রিয়ের প্রাখর্য্যে এবং মনের অভ্রান্ত ক্রিয়াতে – এক কথায়, প্রাকাম্য সিদ্ধিতে – পশুই উৎকৃষ্ট ৷ বিজ্ঞানবিদগণ যাহাকে instinct বলে, তাহা এই প্রাকাম্য ৷ পশুর মধ্যে বুদ্ধির অত্যল্প বিকাশ হইয়াছে, অথচ এই জগতে যদি বাঁচিয়া থাকিতে হয়, তাহা হইলে এমন কোন বৃত্তির দরকার যে পথপ্রদর্শক হইয়া সৰ্ব্বকাৰ্য্যে কি অনুষ্ঠেয়, কি বর্জনীয়, তাহা দেখাইয়া দিবে ৷ পশুর মনই এই কাৰ্য্য করে ৷ মানুষের মন কিছু নির্ণয় করে না, বুদ্ধিই নিশ্চয়ত্মক, বুদ্ধিই নির্ণয় করে, মন কেবল সংস্কারসৃষ্টির যন্ত্র ৷ আমরা যাহা দেখি, শুনি, বােধ করি, তাহা মনে সংস্কাররূপে পরিণত হয়, বুদ্ধি সেই সংস্কারগুলি গ্রহণ করে, প্রত্যাখ্যান করে, চিন্তা সৃষ্টি করে ৷ পশুর বুদ্ধি এই নির্ণয়কৰ্ম্মে অপারগ; বুদ্ধি দ্বারা নহে, মন দ্বারা পশু বুঝে, চিন্তা করে ৷ মনের এক অদ্ভুত শক্তি আছে, অন্য মনে যাহা হইতেছে, তাহা এক মুহূর্তে বুঝিতে পারে, বিচার না করিয়া যাহা প্রয়ােজন, তাহা বুঝিয়া লয় এবং কর্মের উপযুক্ত প্রণালী ঠিক করে ৷ আমরা কাহাকেও ঘরে প্রবেশ করিতে দেখি নাই, অথচ জানি যেন কে ঘরে লুক্কায়িত হইয়া রহিয়াছে; কোন ভয়ের কারণ নাই, অথচ আশঙ্কিত হইয়া থাকি, কোথা হইতে যেন গুপ্ত ভয়ের কারণ রহিয়াছে; বন্ধু এক কথাও বলে নাই, অথচ বলিবার পূর্বেও কি বলিবে, তাহা বুঝিয়া লইলাম, ইত্যাদি অনেক উদাহরণ দেওয়া হয়; সকলই মনের শক্তি, একাদশ ইন্দ্রিয়ের স্বাভাবিক অবাধ ক্রিয়া ৷ কিন্তু বুদ্ধির সাহায্যে সৰ্ব্ব কাৰ্য্য করিতে আমরা এত অভ্যস্ত হইয়াছি যে, এই ক্রিয়া, এই প্রাকাম্য আমাদের মধ্যে প্রায় লােপ পাইয়াছে ৷ পশু এই প্রাকাম্যকে আশ্রয় না করিলে দুদিনে মরিয়া যাইবে ৷ কি পথ্য, কি অপথ্য, কে মিত্র, কে শত্ৰু, কোথায় ভয়, কোথায় নিরাপদ, প্রাকাম্যই এই সকল জ্ঞান পশুকে দেয় ৷ এই প্রাকাম্য দ্বারা ককর প্রভুর ভাষা না বঝিয়াও তাহার কথার অর্থ বা মনের ভাব বুঝিতে পারে ৷ এই প্রাকাম্য দ্বারা ঘােড়া যে পথে একবার গিয়াছে, সেই পথ চিনিয়া রাখে ৷ এই সকল প্রাকামক্রিয়া মনের ৷ কিন্তু পঞ্চেন্দ্রিয়ের শক্তিতেও পশু মানুষকে হারাইয়া দেয় ৷ কোন্ মানুষ কুকুরের ন্যায় শুধু গন্ধ অনুসরণ করিয়া একশত মাইল আর সকলের পথ ত্যাগ করিয়া একটী বিশিষ্ট জন্তুর পশ্চাৎ অভ্রান্তভাবে অনুসরণ করিতে সমর্থ? বা পশুর ন্যায় অন্ধকারে দেখিতে পায়? বা কেবল শ্রবণ দ্বারা গুপ্ত শব্দকারীকে বাহির করিতে পারে? Telepathy বা দুরের চিন্তাগ্রহণ সিদ্ধির কথা বলিয়া কোন এক ইংরাজী সংবাদ-পত্র বলিয়াছে, telepathy মনের প্রক্রিয়া, পশুর সেই সিদ্ধি আছে, মানুষের নাই, অতএব telepathyর বিকাশে মনুষ্যের উন্নতি না হইয়া অবনতি হইবে ৷ স্থূলবুদ্ধি বৃটনের উপযুক্ত তর্ক বটে! অবশ্য মানুষ বুদ্ধিবিকাশের জন্য একাদশ ইন্দ্রিয়ের সম্পূর্ণ বিকাশে পরান্মুখ হইয়াছে, তাহা ভালই হইয়াছে, নচেৎ প্রয়ােজনের অভাবে তাহার বুদ্ধিবিকাশ এত শীঘ্র হইত না ৷ কিন্তু যখন সম্পূর্ণ ও নিখুঁত বুদ্ধিবিকাশ হইয়াছে, তখন একাদশ ইন্দ্রিয়ের পুনর্বিকাশ করা মানবজাতির কর্তব্য ৷ ইহাতে বুদ্ধির বিচাৰ্য্য জ্ঞান বিস্তারিত হইবে, মনুষ্যও মন ও বুদ্ধির সম্পূর্ণ অনুশীলনে অন্তর্নিহিত দেবত্বপ্রকাশের উপযুক্ত পাত্র হইবে ৷ কোনও শক্তিবিকাশ অবনতির কারণ হইতে পারে না – কেবল শক্তির অবৈধ প্রয়ােগে, মিথ্যা ব্যবহারে, অসামঞ্জস্য দোষে অবনতি সম্ভব ৷ অনেক লক্ষণ দেখা যাইতেছে ৷ যাহাতে বােঝা যায় যে একাদশ ইন্দ্রিয়ের পুনর্বিকাশ, প্রাকাম্যের বৃদ্ধি আরম্ভ করিবার দিন আসিয়াছে ৷
Home
Sri Aurobindo
Books
Bengali
Share your feedback. Help us improve. Or ask a question.