CWSA Set of 37 volumes
Writings in Bengali and Sanskrit Vol. 9 of CWSA 715 pages 2017 Edition
Bengali
 PDF   

Editions

ABOUT

All writings in Bengali and Sanskrit including brief works written for the newspaper 'Dharma' and 'Karakahini' - reminiscences of detention in Alipore Jail.

Writings in Bengali and Sanskrit

Sri Aurobindo symbol
Sri Aurobindo

All writings in Bengali and Sanskrit. Most of the pieces in Bengali were written by Sri Aurobindo in 1909 and 1910 for 'Dharma', a Calcutta weekly he edited at that time; the material consists chiefly of brief political, social and cultural works. His reminiscences of detention in Alipore Jail for one year ('Tales of Prison Life') are also included. There is also some correspondence with Bengali disciples living in his ashram. The Sanskrit works deal largely with philosophical and cultural themes. (This volume will be available both in the original languages and in a separate volume of English translations.)

The Complete Works of Sri Aurobindo (CWSA) Writings in Bengali and Sanskrit Vol. 9 715 pages 2017 Edition
Bengali
 PDF   

বাংলা রচনা




“ধর্ম” পত্রিকার সম্পাদকীয়




সম্পাদকীয় – ২৩

ধৰ্ম্ম, ২৫শ সংখ্যা, ৯ই ফাল্গূন, ১৩১৬

ভগবদ্দর্শন

দেশপূজ্য শ্রীযুক্ত কৃষ্ণকুমার মিত্র নির্বাসিত হইয়া আগ্রা জেলে কিরূপে ভগবানের প্রত্যক্ষ উপলব্ধি ও সৰ্ব্বত্রদর্শন করিয়াছেন, তাহা তিনি ব্রাহ্মসমাজের ছাত্রসমাজে বর্ণনা করিয়াছেন ৷ শ্রীযুক্ত অরবিন্দ ঘােষ যখন উত্তরপাড়ায় সেই কথাই বলিয়াছিলেন, পুণার ইণ্ডিয়ান সােশ্যাল রিফর্মর (সমাজসংস্কারক) উপহাস করিয়া বলিলেন, দেখিতেছি জেলে ঈশ্বরদর্শনের ছড়াছড়ি হইতেছে ৷ উপহাসের অর্থ এই যে এই সব কথা মাথাপাগলা লােকের কল্পনা অথবা মিথ্যাবাদীর বুজরুকী ৷ অথচ অরবিন্দবাবু যাহা বলিলেন, ব্রাহ্মসমাজের শীর্ষস্থানীয় শ্রীযুক্ত কৃষ্ণকুমার অবিকল তাহাই বলিয়াছেন ৷ এমনকি যাহা অনেকের বিশেষ পরিহাসের যােগ্য কথা বােধ হইয়াছে, বিচারক ও জেলরের মধ্যে সেই সৰ্বব্যাপী প্রেমময় ও দয়াময় দর্শন, তাহাও দুইজনেই লাভ করিয়াছেন ৷ অবশ্য, একই আধ্যাত্মিক উপলব্ধির দুইপ্রকার তার্কিক সিদ্ধান্ত হইতে পারে, এক সত্য লইয়া নানা মত হওয়া স্বাভাবিক ৷ কিন্তু যখন আগ্রায় ও আলিপুরে, যাহাদের ভিন্ন মত ও ভিন্ন প্রকৃতি, সেইরূপ দুইটী লােকের একই প্রত্যক্ষ উপলব্ধি হইয়াছে, তখন কি কেহ তাহাকে পাগলামী বা বুজরুকী বলিতে পারে? পুণার “সমাজসংস্কারক”এর মতে ভগবান কখনও প্রত্যক্ষ দর্শন দেন না, তিনি নিয়মের অন্তরালে থাকেন, আমরা প্রাকৃতিক নিয়ম অনুভব করতে পারি, ভগবানের অস্তিত্ব অনুভব করা বাতুলের কথা ৷ একজন বিজ্ঞান-অনভিজ্ঞ লােক যদি বলেন যে অমুক রাসায়নিক প্রয়ােগ মিথ্যা এবং কয়েকজন বিজ্ঞানবিদ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া করিয়া বলেন, ইহা সত্য, আমরা স্বচক্ষে দেখিয়াছি, কাহার কথা অধিক বিশ্বাসযােগ্য, কাহার মত লােকে গ্রহণ করিতে বাধ্য?


জেলে দর্শন

এইরূপ লােকের আর এক অবিশ্বাসের কারণ এই যে জেল অপবিত্র স্থান, খুনী চোর ডাকাতে পরিপূর্ণ, যদিও ভগবান দর্শন দেন, তবে পবিত্রস্থানে সাধু-সন্ন্যাসীকেই দর্শন দিবেন, আইনের জালে পতিত রাজনীতিককে, ঘাের রাজসিক কার্যে লিপ্ত সংসারীকে জেলে দেখা দিবেন কেন? আমাদের মতে সাধু-সন্ন্যাসী অপেক্ষা এইরূপ লােককেই ভগবান সহজে ধরা দেন, আশ্রম ও মন্দির অপেক্ষা জেলে ও বধ্যভূমিতে ভগবদ্দর্শনের ছড়াছড়ি হইবার কথা ৷ যাঁহারা মানবজাতির জন্য, দেশের জন্য খাটেন, জীবন উৎসর্গ করেন, তাহারা ভগবানের জন্য খাটেন, জীবন উৎসর্গ করেন ৷ যীশুখ্রীষ্ট বলিয়াছেন, যে দুঃখীকে সান্ত্বনা, দরিদ্রকে সাহায্য, তৃষ্ণার্তকে জল, নিরুপায়কে উপায় দেয়, সে আমাকেই দেয় – আমি সেই দুঃখী, সেই দরিদ্র, সেই তৃষ্ণার্ত, সেই নিরুপায় ৷ আবার জেলে অহঙ্কার সম্পূর্ণ চলিয়া যায় ৷ সেইখানে লেশমাত্র স্বাধীনতা থাকে না, ভগবানের মুখের পানে আহার, নিদ্রা, সুখ, ভাগ্য, স্বাধীনতার জন্য চাহিতেই হয় ৷ অতএব এই অবস্থায় সম্পূর্ণ নির্ভর, সম্পূর্ণ আত্মনিবেদন ও আত্মসমর্পণ যেমন সহজ আর কোথাও তেমন সহজ নহে ৷ কৰ্ম্মীর আত্মসমর্পণ ভগবানের অতি প্রিয় উপহার, এই পূজাই শ্রেষ্ঠ পূজা, এই বলিই শ্রেষ্ঠ বলি ৷ ইহাতে যদি ভগবদ্দর্শন না হয়, তবে কিসে হইবে?


বেদে পুনর্জ্জন্ম

য়ুরােপীয়গণ যখন প্রথম আৰ্যসাহিত্য আবিষ্কার করেন, তখন তাহাদের এমন আনন্দ হয় যে সমুচিত প্রশংসা করিবার কথাও জোটে না এবং পণ্ডিতগণ যাহা বলেন, তাহা ধ্রুব সত্য বলিয়া গ্রহণ করেন ৷ পরে পাশ্চাত্য হৃদয়ে ঈর্ষার বহ্নি প্রজ্বলিত হয় এবং অনেকে সেই ঈর্ষার বশে সংস্কৃত ভাষা ও বিফল সাহিত্য ব্রাহ্মণদের জাল জোচ্চুরি বলিয়া উড়াইবার চেষ্টা করেন ৷ সেই চেষ্টা যখন হয়, য়ুরােপীয় পণ্ডিতেরা নূতন ফন্দী বাহির করিলেন; তাহারা প্রমাণ করিতে চেষ্টা করিলেন যে, কিছুই হিন্দুর নিজস্ব নাই, সবই বিদেশ হইতে আমদানী ৷ রামায়ণ ও মহাভারত হােমরের অনুকরণ, জ্যোতিষ, কাব্য, নাটক, আয়ুৰ্বেদ, শিল্প, চিত্রকলা, স্থাপত্য বিদ্যা, গণিত, দেবনাগরী অক্ষর, পঞ্চতন্ত্র, যাহা যাহা ভারতের গৌরব বলিয়া প্রসিদ্ধ, সবই গ্রীস, ইজিপ্ত, বাবুলােন ইত্যাদি দেশ হইতে ধার করা, এবং গীতা খ্রীষ্টধৰ্ম্ম হইতে চোরাই মাল; হিন্দুধর্মে যদি কোন গুণ থাকে, তাহা বৌদ্ধধর্মের দান, —আর পাছে বলি, বুদ্ধ ত ভারতবাসী, তখন এই অদ্ভুত কল্পনা আবিষ্কার করিলেন যে বুদ্ধ মােঙ্গল বা তুরষ্ক জাতীয়; শাক্যগণ, শক বা Scythian; এই সময়ে এই মত প্রচার হয় যে, কৰ্ম্মবাদ ও পুনর্জন্মবাদ বুদ্ধের পূর্ববর্তী হিন্দুধৰ্ম্মে ছিল না, বুদ্ধই এই মত সৃষ্টি করিলেন ৷ সেইদিন দেখিলাম Hindu Spiritual Magazineএর শ্রদ্ধেয় সম্পাদক মত প্রচার করিয়াছেন যে এই কথা সত্য, বেদে পুনর্জন্মবাদ নাই, পুনর্জন্মবাদ হিন্দু-ধৰ্ম্মের অঙ্গ নয় ৷ জানি না সম্পাদক মহাশয় এই কথা স্বয়ং বেদাধ্যয়ন করিয়া বলিয়াছেন, না ইহা পাশ্চাত্য পণ্ডিতের প্রতিধ্বনি মাত্র ৷ আমরা দেখাইতে পারি এবং দেখাইব যে, যে উপনিষদগুলি পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণও বুদ্ধের আবির্ভাবের পূর্ববর্তী বলিয়া স্বীকার করেন যে, উপনিষদগুলি বৈদিক জ্ঞানের চরম বিকাশ, সেই উপনিষদে পুনর্জন্ম ধ্রুব ও গৃহীত সত্য বলিয়া সৰ্ব্বত্র উল্লিখিত আছে ৷ কৰ্ম্মবাদও বেদে পাওয়া যায় ৷ বৌদ্ধধর্ম হিন্দুধৰ্ম্মের একটী শাখা মাত্র, হিন্দুধৰ্ম্ম বৌদ্ধধর্মের পরিণাম নহে ৷


আৰ্যসমাজের অবনতি

আমরা আৰ্য্যসমাজের অবনতি দেখিয়া দুঃখিত হইলাম ৷ এই সমাজের অধ্যক্ষ সম্প্রতি এইরূপ মত প্রচার করিয়াছেন যে রাজভক্তি আৰ্যসমাজের ধর্মমতের মধ্যে এক মত বলিয়া গৃহীত, সেই হেতু যে “আমি রাজভক্ত” বলিয়া শপথ গ্রহণ করিতে সম্মত, তাহাকেই আৰ্য্যসমাজে প্রবেশ করিতে দেওয়া উচিত আর কাহাকেও নহে ৷ অন্য ধর্ম সম্প্রদায়ের জন্যও এই মহাত্মা এই বিধানের উপদেশ দিয়াছেন ৷ ইহা যদি অধ্যক্ষজীর প্রকৃত মত হইত, আমরা কিছু বলিতাম না, কিন্তু আৰ্যসমাজের উপর ঘন ঘন রাজদ্রোহের অভিযােগ আসিয়া পড়িবার আগে তাহার এই উৎকট রাজভক্তির উদ্রেক হয় নাই ৷ ধৰ্ম্ম সকলেরই জন্য, যে ধর্মসম্প্রদায় হইতে কেহ রাজনীতিক মতের জন্য বহিষ্কৃত, সেই সম্প্রদায় ধর্মসম্প্রদায় নহে, স্বার্থসম্প্রদায় ৷ আমি রাজভক্ত কি না রাজপুরুষ দেখিবেন এবং রাজপুরুষও আমার মনের ভাবের উপর অধিকার করিতে চেষ্টা করেন না, কেবল রাজভক্তির বিরুদ্ধভাব প্রচারে দেশের শান্তি যাহাতে নষ্ট না হয়, নিজ অধিকার নষ্ট না হয়, সেই চেষ্টা করেন ৷ যে ধৰ্ম্মমন্দিরের দ্বারে তুমি ভগবদ্ভক্ত কিনা, এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা না করিয়া, তুমি রাজভক্ত কিনা, এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়, সেই মন্দির যেন কোন ভগবদ্ভক্ত না মাড়ান ৷Render unto Caesar the things that are Caesar's, unto God the things that are God's. সম্রাটের প্রাপ্য যাহা তাহাই সম্রাটকে অর্পণ কর, ভগবানের প্রাপ্য যাহা তাহা ভগবানের, সম্রাটের নহে ৷

পরিশিষ্ট

[এই দুইটি রচনা ধৰ্ম্ম’ পত্রিকার পূর্বকালীন সময়ের ৷ বিষয়সাদৃশ্যে এখানে সন্নিবেশিত করা হল ৷]


ঐক্য ও স্বাধীনতা

গত ডিসেম্বর মাসে মাদ্রাজে জাতীয়সভার ঊনবিংশ অধিবেশনের উপলক্ষে সভাপতি বঙ্গের প্রধান বক্তা শ্রীযুক্ত লালমােহন ঘােষ যে বক্তৃতা দিয়াছিলেন, তাহাতে একটী নূতন রাজনৈতিক যুগপরিবর্তনের অতিশয় অস্পষ্ট আভাস পাওয়া যায় ৷ শ্রীযুক্ত ঘােষ মহােদয়ের বলিবার ... 1 অন্য অন্য অধিবেশনের সভাপতি-দিগের বক্তৃতা সকল হইতে অনেকটা স্বতন্ত্র ধরণের হইয়াছে ৷ তাহার কথার সুর সেই চিরপরিচিত একতানের মিল সহিত ঠিক মিলিতে পারে নাই ৷ আগেকার2 সভাপতিগণ প্রায়ই ভিক্ষুকবেশে রাজদুয়ারে উপস্থিত; কেহ কেহ রুক্ষভাষী দুর্দান্ত ভিক্ষুক গৃহস্থের কর্ণকুহরে চেঁচামিচিতে ঝালাপালা করিয়া দান বের করিবার চেষ্টা করেন – কেহ ভদ্রলােক ভিক্ষুক মৃদুস্বরে অথবা অতি ক্ষীণ কান্নার সুরে গৃহস্বামীকে ভুলাইয়া স্বীয় মনােরথ সিদ্ধ করিবার চেষ্টা করেন ৷ কিন্তু শ্রীযুক্ত ঘােষ মহােদয়ের বক্তৃতায় একটী নূতন ভাবের অবতারণা লক্ষিত হয়, অর্ধজাগ্রত মনুষ্যত্বের প্রথম সেই একটু ধ্বনি এখনও ক্ষীণ ও অস্পষ্ট তথাপি কবি Wordsworthএর তেজস্বী সারগর্ভ মহৎ উক্তির প্রতিধ্বনি যেন দূর হইতে শােনা যায় – Who would be free themselves must strike the blow. স্বাধীনতা চাও ত, আপনিই আপনার শিকল কাটিবে, আর কেহ তােমার হইয়া কাটিতে পারিবে না ৷

এখন স্বাধীনতা কি – অন্ততঃ অধুনাতন ভারতবর্ষের পক্ষে কি পরিমাণে স্বাধীনতা প্রয়াসলভ্য ও শ্রেয়স্কর, এই সম্বন্ধে কোন পরিপক্ক ও নিশ্চিত ধারণা দৃঢ়রূপে মনে অঙ্কিত 3 করা নিতান্তই প্রয়ােজনীয় ৷ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাহ্যিক আড়ম্বরপূর্ণ অনিশ্চিত ও অস্পষ্ট উক্তিগুলি বারবার আওড়ান ভারতবাসীদিগের একটী রােগ হইয়া দাঁড়াইয়াছে ৷ ইহাতেই আমাদিগের বল অর্থ ও সময় নষ্ট হয় ৷ এই রােগ যেমন বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা, প্রগাঢ় চিন্তার অভ্যাস, মনের স্বভাবলব্ধ প্রাঞ্জল ভাব ও... নষ্ট করে, তেমনই কাৰ্যসিদ্ধির বিলম্ব ও সময়ে সময়ে সম্পূর্ণ লােপই ঘটাইয়া শেষে নৈরাশ্য ও নিশ্চেষ্ট আলস্যের কারণ হয় ৷ আজকাল বঙ্গদেশে সেই শেষ অবস্থাই কতক পরিমাণে অনুভব করিতেছি ৷

এই সম্বন্ধে দুইটী বিভিন্ন উদ্দেশ্যের দিকে দুটী চিন্তার স্রোত জাতীয় মনে বহিতেছে ৷ একটী প্রাচীন, দিন দিন শুষ্ক হইয়া যাইতেছে কিন্তু দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতাগণ এখনও সেই স্রোতে ভাসিয়া সমস্ত জাতিকেও ভাসাইবার চেষ্টায় রত ৷ অপরটী নূতন ৷ যদিও দুই চারিজন সম্ভ্রান্ত ও বিখ্যাত পুরুষ ভিন্ন কোন সৰ্ব্বজনসম্মত নেতা সেই দিকে অগ্রসর হন নাই, তথাপি তাহারা যে ভাগীরথীর পথ প্রস্তুত করিতেছে জাতীয় জীবন যে সেই পথেই বহিবে, এমন সম্ভাবনা অধিক ৷ প্রাচীনেরা বলেন, আমাদের রাজনৈতিক জীবনের এই চরম উদ্দেশ্য থাকা উচিত যে ক্রমে ক্রমে অধিকারস্বত্ব পাইতে পাইতে শেষে অনেক চেষ্টা ও পরিশ্রমের ফলস্বরূপ বৃটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে স্বাধীনতা পাইব ৷ ভারতবর্ষের রাজপুরুষ যতই নিষ্ঠুর হৌক না কেন, কিন্তু ইংরেজ জাতি মহৎ ও সহৃদয় জাতি - তাঁহাদের মধ্যে Wilberforce, Howard, Gladstone প্রাভ্রুতি মহাত্মারা জন্মগ্রহণ করিয়াছে ৷ তাহারা আমাদিগের দুঃখ জানে না, কাদিলে শুনিবে ৷

(খণ্ডাংশ)


৩০শে আশ্বিন

এই বৎসর ৩০ আশ্বিনের সমারােহ যেমন আগ্রহ, স্বাভাবিক উচ্ছাস ও একপ্রাণতার সহিত সুসম্পন্ন হইয়াছে, তাহা যে গত দুই বৎসরের কোনও বৎসর হয় নাই, এই কথা ইংরাজ বাঙ্গালী শত্ৰুমিত্র সকলেই স্বীকার করিতে বাধ্য হইয়াছেন ৷ নবজাত জাতীয় ভাবের, নবলব্ধ মাতৃজ্ঞানের বৃদ্ধি দেখিয়া সৰ্ব্ব সন্তানের হৃদয়ে উৎসাহ ও বলও দ্বিগুণ বৃদ্ধিলাভ ৷ কি কারণ ৩০ আশ্বিন বাঙ্গালীর পক্ষে পবিত্র ও পূজ্য তিথি? বঙ্গভঙ্গের দিন শােকের দিন, অপমানের দিন বলিয়াই এই তিথি উন্নতিমুখ জাতির হৃদয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করা অসম্ভব ৷ যে দিন এমন কোনও চিরস্মরণীয় ঘটনা বা মহৎ জাতীয় সমারম্ভের স্মরণ করাইয়া দেয় যাহার স্মরণে সন্তানহৃদয়ে ভক্তি আনন্দ ও উচ্চ আশা সঞ্চারিত হয়, সেই দিনই জাতির প্রিয় দিন, সেই তিথিই পূজ্য ও পবিত্র ৷ ৭ই আগষ্ট বয়কটের দিন বলিয়াই স্মরণীয় নহে, জাতীয় আত্মজ্ঞানলাভের দিন বলিয়া স্মরণীয় ৷ বয়কটও বিদ্বেষপ্রসূত ঘৃণার প্রকাশ অথবা রাজার সঙ্গে অল্পদিনের রাগারাগি নহে, তাহার মধ্যে উচ্চতর জাতীয় ভাব নিহিত ৷ আমরা বঙ্গবাসীগণ আত্মজ্ঞান হারা হইয়াছিলাম, ৭ই আগষ্টে সেই জাতীয় আত্মজ্ঞান পুনর্লাভ করিলাম, বুঝিলাম ভারতের জাতীয় জীবন ও উন্নতি কাহারও অনুগ্ৰহসাপেক্ষ নহে, আমরা বিদেশীর সাম্রাজ্য নগণ্য ও পরাধীন ক্ষুদ্রাংশ নহি, আমরাও জগতে একটী জাতি বটে, আমরা স্বতন্ত্র, দৈবীশক্তিসম্পন্ন, স্বাধীনতার অধিকারী ৷ বয়কট সেই স্বতন্ত্রতার ঘােষণা, কর্মক্ষেত্রে সেই নবজাগ্রত আত্মজ্ঞানের বিকাশের এবং ৭ই আগষ্ট সেই আত্মজ্ঞানলাভের তিথি ৷ তেমনই বঙ্গভঙ্গ নয়, বঙ্গভঙ্গের অমৃতময় ফলই ৩০ আশ্বিনের সারার্থ ৷... ৩০ আশ্বিনে মাতৃজ্ঞান জাগিল, আমরা জননীকে পুনলাভ করিলাম, ইহাই ৩০ আশ্বিনের পবিত্রতা, এইজন্যই বঙ্গবাসীর হৃদয়ে এই তিথির চিরপ্রতিষ্ঠা ৷ ৩০ আশ্বিন মাতৃজ্ঞানলাভের পবিত্র ও পূজ্য তিথি ৷









Let us co-create the website.

Share your feedback. Help us improve. Or ask a question.

Image Description
Connect for updates