CWSA Set of 37 volumes
Writings in Bengali and Sanskrit Vol. 9 of CWSA 715 pages 2017 Edition
Bengali
 PDF   

Editions

ABOUT

All writings in Bengali and Sanskrit including brief works written for the newspaper 'Dharma' and 'Karakahini' - reminiscences of detention in Alipore Jail.

Writings in Bengali and Sanskrit

Sri Aurobindo symbol
Sri Aurobindo

All writings in Bengali and Sanskrit. Most of the pieces in Bengali were written by Sri Aurobindo in 1909 and 1910 for 'Dharma', a Calcutta weekly he edited at that time; the material consists chiefly of brief political, social and cultural works. His reminiscences of detention in Alipore Jail for one year ('Tales of Prison Life') are also included. There is also some correspondence with Bengali disciples living in his ashram. The Sanskrit works deal largely with philosophical and cultural themes. (This volume will be available both in the original languages and in a separate volume of English translations.)

The Complete Works of Sri Aurobindo (CWSA) Writings in Bengali and Sanskrit Vol. 9 715 pages 2017 Edition
Bengali
 PDF   

বাংলা রচনা




ধৰ্ম্ম




স্তবস্তোত্র

সাধক, সাধন ও সাধ্য, এই তিন অঙ্গ লইয়া ধৰ্ম্ম, অর্থ, কাম ও মােক্ষ ৷ সাধকের ভিন্ন ভিন্ন স্বভাব থাকায় ভিন্ন ভিন্ন সাধন আদিষ্ট হইয়াছে, ভিন্ন ভিন্ন সাধ্যও অনুসৃত হয় ৷ কিন্তু স্থূলদৃষ্টিতে নানা সাধ্য থাকিলেও সূক্ষ্মদৃষ্টিতে দেখিলে বুঝা যায় যে সকল সাধকের সাধ্য এক —সেই সাধ্য আত্মতুষ্টি ৷ উপনিষদে যাজ্ঞবল্ক্য তাঁহার সহধর্মিণীকে বুঝাইলেন যে, আত্মার জন্য সব, আত্মার জন্য স্ত্রী, আত্মার জন্য ধন, আত্মার জন্য প্রেম, আত্মার জন্য সুখ, আত্মার জন্য দুঃখ, আত্মার জন্য জীবন, আত্মার জন্য মরণ ৷ সেইজন্য আত্মা কি এই প্রশ্নের গুরুত্ব ও প্রয়ােজনীয়তা ৷

অনেক বিজ্ঞ ও পণ্ডিত ব্যক্তি বলেন আত্মজ্ঞান লইয়া এত বৃথা মাথা ঘামান ৷ কেন? এই সব সূক্ষ্মবিচারে সময় নষ্ট করা বাতুলতা, সংসারের প্রয়ােজনীয় বিষয় ও মানবজাতির কল্যাণচেষ্টা লইয়া থাক ৷ কিন্তু সংসারের কি কি বিষয় প্রয়ােজনীয় এবং মানবজাতির কল্যাণ কিসে হইবে, এই প্রশ্নের মীমাংসাও আত্মজ্ঞানের উপর নির্ভর করে ৷ যেমন আমার জ্ঞান তেমনই আমার সাধ্য ৷ আমি যদি নিজ দেহকে আত্মা বুঝি, তাহার তুষ্টি সাধনার্থ আর সকল বিচার ও বিবেচনাকে জলাঞ্জলি দিয়া স্বার্থপর নরপিশাচ হইয়া থাকিব ৷ যদি স্ত্রীকেই আত্মবৎ দেখি, আত্মবৎ ভালবাসি, স্ত্রৈণ হইয়া ন্যায়-অন্যায় বিচার না করিয়া তাহার মনস্তুষ্টি সম্পাদনের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করিব, পরকে কষ্ট দিয়া তাহারই সুখ করিব, পরের অনিষ্ট করিয়া তাহারই ইষ্ট সিদ্ধ করিব ৷ যদি দেশকেই আত্মবৎ দেখি, আমি খুব বড় এক দেশহিতৈষী হইব, হয়তাে ইতিহাসে অমর কীর্তি রাখিয়া যাইব, কিন্তু অন্যান্য ধর্ম পরিত্যাগ করিয়া পরদেশের অনিষ্ট, ধনলুণ্ঠন, স্বাধীনতা অপহরণ করিতে পারি ৷ যদি ভগবানকে আত্মা বঝি অথবা আত্মবৎ ভালবাসি ৷ – সে একই কথা, কেননা প্রেম হইল চরম দৃষ্টি – আমি ভক্ত, যােগী, নিষ্কাম কর্মী হইয়া সাধারণ মনুষ্যের অপ্রাপ্য শক্তি, জ্ঞান বা আনন্দ ভােগ করিতে পারি ৷ যদি নিগুণ পরব্রহ্মকে আত্মা বলিয়া জানি, পরম শান্তি ও লয় প্রাপ্ত হইতে পারি ৷ যাে যচ্ছদ্ধঃ স এব সঃ, – যাহার যেমন শ্রদ্ধা সে সেইরূপই হয় ৷ মানবজাতি চিরকাল সাধন করিয়া আসিতেছে, প্রথম ক্ষুদ্র, পরে অপেক্ষাকৃত বড়, শেষে সর্বোচ্চ পরাৎপর সাধ্য সাধন করিয়া গন্তব্যস্থান শ্রীহরির পরমধাম প্রাপ্ত হইতে চলিতেছে ৷ এক যুগ ছিল, মানবজাতি কেবল শরীর সাধন করিত, শরীর সাধন সেই কালের যুগধৰ্ম্ম, অন্য ধর্মকে খাট করিয়াও তখন শরীর সাধন করা শ্রেয়ঃ পথ ছিল ৷ কারণ, তাহা না হইলে শরীর, যে শরীর ধর্মসাধনের উপায় ও প্রতিষ্ঠা, উৎকর্ষ লাভ করিত না ৷ সেইরূপ আর-এক যুগে স্ত্রী-পরিবার, আর-এক যুগে কুল, আর-এক যুগে – যেমন আধুনিক যুগে – জাতিই সাধ্য ৷ সৰ্বোচ্চ পরাৎপর সাধ্য পরমেশ্বর, ভগবান ৷ ভগবানই সকলের প্রকৃত ও পরম আত্মা, অতএব প্রকৃত ও পরম সাধ্য ৷ সেইজন্য গীতায় বলে, সকল ধৰ্ম্ম পরিত্যাগ কর, আমাকেই শরণ কর ৷ ভগবানের মধ্যে সকল ধর্মের সমন্বয় হয়, তাহাকে সাধন করিলে তিনিই আমাদের ভার লইয়া আমাদিগকে যন্ত্র করিয়া স্ত্রী, পরিবার, কুল, জাতি, মানবসমষ্টির পরম তুষ্টি ও পরম কল্যাণ সাধন করিবেন ৷

এক সাধ্যের নানা সাধকের ভিন্ন ভিন্ন স্বভাব থাকায় নানা সাধনও হয় ৷ ভগবৎ-সাধনের এক প্রধান উপায় স্তবস্তোত্র ৷ স্তবস্তোত্র সকলের উপযােগী সাধন নহে ৷ জ্ঞানীর পক্ষে ধ্যান ও সমাধি, কৰ্ম্মীর পক্ষে কৰ্ম্মসমর্পণ শ্রেষ্ঠ উপায়; স্তবস্তোত্র ভক্তির অঙ্গ – শ্রেষ্ঠ অঙ্গ নহে বটে, কেননা অহৈতুক প্রেম ভক্তির চরম উৎকর্ষ, সেই প্রেম ভগবানের স্বরূপ স্তবস্তোত্র দ্বারা আয়ত্ত করিয়া তাহার পরে স্তবস্তোত্রের প্রয়ােজনীয়তা অতিক্রম করিয়া সেই স্বরূপ ভােগে লীন হইয়া যায়; তথাপি এমন ভক্ত নাই যে স্তবস্তোত্র না করিয়া থাকিতে পারে, যখন আর সাধনের আবশ্যকতা থাকে না, তখনও স্তবস্তোত্রে প্রাণের উচ্ছ্বাস উছলিয়া উঠে ৷ কেবল স্মরণ করিতে হয় যে সাধন সাধ্য নহে, আমার যে সাধন, সে পরের সাধন না-ও হইতে পারে ৷ অনেক ভক্তের এই ধারণা দেখা যায় যে, যিনি ভগবানের স্তবস্তোত্র করেন না, স্তোত্র শ্রবণে আনন্দ প্রকাশ করেন না, তিনি ধার্মিক নহেন ৷ ইহা ভ্রান্তি ও সঙ্কীর্ণতার লক্ষণ ৷ বুদ্ধ স্তবস্তোত্র করিতেন না, তথাপি কে বুদ্ধকে অধাৰ্মিক বলিবে? ভক্তিমার্গ সাধনের জন্য স্তবস্তোত্রের সৃষ্টি ৷

ভক্তও নানপ্রকার, স্তবস্তোত্রেরও নানা প্রয়ােগ হয় ৷ আৰ্ত্ত ভক্ত দুঃখের সময়ে ভগবানের নিকট কাদিবার জন্য, সাহায্য প্রার্থনার জন্য, উদ্ধারের আশায় স্তবস্তোত্র করেন, অর্থার্থী ভক্ত কোনও অর্থসিদ্ধির আশায়, ধন মান সুখ ঐশ্বৰ্য্য জয় কল্যাণ ভুক্তি মুক্তি ইত্যাদি উদ্দেশ্য সঙ্কল্প করিয়া স্তবস্তোত্র করেন ৷ এই শ্রেণীর ভক্ত অনেকবার ভগবানকে প্রলােভন দেখাইয়া সন্তুষ্ট করিতে যান, এক-একজন অভীষ্টসিদ্ধি না পাইয়া পরমেশ্বরের উপর ভারি চটিয়া উঠেন, তাঁহাকে নিষ্ঠুর প্রবঞ্চক ইত্যাদি গালাগালি দিয়া বলেন, আর ভগবানকে পূজা করিব না, মুখ দেখিব না, কিছুতেই মানিব না ৷ অনেকে হতাশ হইয়া নাস্তিক হন, এই সিদ্ধান্ত করেন যে, এই জগৎ দুঃখের রাজ্য, অন্যায় অত্যাচারের রাজ্য, ভগবান নাই ৷ এই দুইপ্রকার ভক্তি, অজ্ঞ ভক্তি, তাই বলিয়া উপেক্ষণীয় নহে, ক্ষুদ্র হইতেই মহতে উঠে ৷ অবিদ্যা সাধন বিদ্যার প্রথম সােপান ৷ বালকও অজ্ঞ, কিন্তু বালকের অজ্ঞতায় মাধুৰ্য্য আছে, বালকও মায়ের নিকট কাদিতে আসে, দুঃখের প্রতিকার চায়, নানারূপ সুখ ও স্বার্থসিদ্ধির জন্য ছুটিয়া আসে, সাধে, কান্নাকাটি করে, না পাইলে চটিয়াও উঠে, দৌরাত্ম্য করে ৷ জগজ্জননীও হাস্যমুখে অজ্ঞভক্তের সকল আব্দার ও দৌরাত্ম সহ্য করেন ৷

জিজ্ঞাসু ভক্ত কোন অর্থসিদ্ধির জন্য বা ভগবানকে সন্তুষ্ট করিবার জন্য স্তবস্তোত্র করেন না, তাহার পক্ষে স্তবস্তোত্র শুদ্ধ ভগবানের স্বরূপ উপলব্ধির এবং স্বীয় ভাবপুষ্টির উপায় ৷ জ্ঞানী ভক্তের পক্ষে সেই প্রয়ােজনও থাকে না, কেননা তাহার স্বরূপ উপলব্ধি হইয়াছে, তাহার ভাব সুদৃঢ় ও সুপ্রতিষ্ঠিত হইয়াছে, কেবল ভাবােচ্ছ্বাসের জন্য স্তবস্তোত্রের প্রয়ােজন ৷ গীতায় বলে, এই চারিশ্রেণীর ভক্ত সকলেই উদার, কেহ উপেক্ষণীয় নহে, সকলে ভগবানের প্রিয়, কিন্তু জ্ঞানী ভক্ত সৰ্বশ্রেষ্ঠ, কারণ জ্ঞানী ও ভগবান একাত্ম ৷ ভগবান ভক্তের সাধ্য, অর্থাৎ আত্মরূপে জ্ঞাতব্য ও প্রাপ্য, জ্ঞানী ভক্তে ও ভগবানে আত্মা ও পরমাত্মা সম্বন্ধ হয়, জ্ঞান, প্রেম ও কৰ্ম্ম – এই তিন সূত্রে আত্মা ও পরমাত্মা পরস্পরে আবদ্ধ ৷ কৰ্ম্ম আছে, সেই কৰ্ম্ম ভগবদ্দত্ত, তাহার মধ্যে কোন প্রয়ােজন বা স্বার্থ নাই, প্রার্থনীয় কিছুই নাই; প্রেম আছে, সেই প্রেম কলহ ও অভিমানশূন্য – নিঃস্বার্থ, নিষ্কলঙ্ক, নিৰ্ম্মল; জ্ঞান আছে, সেই জ্ঞান শুষ্ক ও ভাবরহিত নহে, গভীর, তীব্র আনন্দ ও প্রেমে পূর্ণ ৷ সাধ্য এক হইলেও যেমন সাধক তেমনই সাধন, তেমনই ভিন্ন ভিন্ন সাধকের এক সাধনের ভিন্ন ভিন্ন প্রয়ােগ ৷









Let us co-create the website.

Share your feedback. Help us improve. Or ask a question.

Image Description
Connect for updates