CWSA Set of 37 volumes
Writings in Bengali and Sanskrit Vol. 9 of CWSA 715 pages 2017 Edition
Bengali
 PDF   

Editions

ABOUT

All writings in Bengali and Sanskrit including brief works written for the newspaper 'Dharma' and 'Karakahini' - reminiscences of detention in Alipore Jail.

Writings in Bengali and Sanskrit

Sri Aurobindo symbol
Sri Aurobindo

All writings in Bengali and Sanskrit. Most of the pieces in Bengali were written by Sri Aurobindo in 1909 and 1910 for 'Dharma', a Calcutta weekly he edited at that time; the material consists chiefly of brief political, social and cultural works. His reminiscences of detention in Alipore Jail for one year ('Tales of Prison Life') are also included. There is also some correspondence with Bengali disciples living in his ashram. The Sanskrit works deal largely with philosophical and cultural themes. (This volume will be available both in the original languages and in a separate volume of English translations.)

The Complete Works of Sri Aurobindo (CWSA) Writings in Bengali and Sanskrit Vol. 9 715 pages 2017 Edition
Bengali
 PDF   

বাংলা রচনা




কারাকাহিনী




নবজন্ম

গীতায় অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “যাঁহারা যােগপথে প্রবেশ করিয়া শেষ পর্যন্ত যাইতে না যাইতে স্খলিতপদ ও যােগভ্রষ্ট হন, তাহাদের কি গতি হয়? তাহারা কি ঐহিক ও পারত্রিক উভয় ফলে বঞ্চিত হইয়া বায়ুখণ্ডিত মেঘের মত বিনষ্ট হন?” উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ বলিলেন, “ইহলােকে বা পরলােকে সেই-রূপ ব্যক্তির বিনাশ অসম্ভব ৷ কল্যাণকৃৎ কখনও দুর্গতিপ্রাপ্ত হন না ৷ পুণ্যলােক-সকলে তাহার গতি হয়, সেখানে অনেক কাল বাস করিয়া শুদ্ধ শ্রীমান্ পুরুষদের গৃহে অথবা যােগযুক্ত মহাপুরুষদের কুলে দুর্লভ জন্ম হয়, সেই জন্মে পূর্বজন্মপ্রাপ্ত যােগলিঙ্গাচালিত হইয়া সিদ্ধির জন্য আরও চেষ্টা করেন, শেষে অনেক জন্মের অভ্যাসে পাপমুক্ত হইয়া পরমগতি লাভ করেন ৷” যে পূৰ্ব্বজন্মবাদ চিরকাল আৰ্য-ধৰ্ম্মের যােগলব্ধ জ্ঞানের অঙ্গবিশেষ, পাশ্চাত্য বিদ্যার প্রভাবে শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে তাহার প্রতিপত্তি বিনষ্টপ্রায় হইয়াছিল, শ্রীরামকৃষ্ণ-লীলার পরে বেদান্তশিক্ষা প্রচারে ও গীতার অধ্যয়নে সেই সত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হইতেছে ৷ স্থলজগতে যেমন heredity প্রধান সত্য, সূক্ষ্মজগতে তেমনই পূর্বজন্মবাদ প্রধান সত্য ৷ শ্রীকৃষ্ণের উক্তিতে দুইটী সত্য নিহিত আছে ৷ যােগভ্রষ্ট পুরুষ তাহার পূর্বজন্মার্জিত জ্ঞানের সংস্কারের সহিত জন্মগ্রহণ করেন, সেই সংস্কার দ্বারা বায়ুচালিত তরণীর ন্যায় যােগপথে চালিত হন ৷ কিন্তু কৰ্ম্মফল প্রাপ্তির যােগ্য শরীর উৎপাদনার্থ উপযুক্ত কুলে জন্মলাভ প্রয়ােজন ৷ উৎকৃষ্ট heredity যােগশরীরের উৎপাদক ৷ শুদ্ধ শ্রীমান্ পুরুষদের গৃহে জন্ম হইলে শুদ্ধ সবল শরীর উৎপাদন সম্ভব, যােগীকুলে জন্মগ্রহণে উৎকৃষ্ট মন ও প্রাণ গঠিত হয় এবং সেইরূপ শিক্ষা ও মানসিক গতিলাভও হয় ৷

ভারতবর্ষে কয়েক বৎসর ধরিয়া দেখা যাইতেছে যেন একটী নুতন জাতি পুরাতন তমঃ অভিভূত জাতির মধ্যে সৃষ্ট হইতেছে ৷ ভারতমাতার পুরান সন্ততি ধৰ্ম্মগ্লানি ও অধৰ্ম্মের মধ্যে জন্মগ্রহণ করিয়া ও সেইরূপ শিক্ষালাভ করিয়া অল্পায়ু, ক্ষুদ্রাশয়, স্বার্থপরায়ণ, সঙ্কীর্ণহৃদয় হইয়াছিল ৷ তাহাদের মধ্যে অনেক তেজস্বী মহাত্মা দেহপ্রাপ্ত হইয়া এই বিষম বিপৎকালে জাতিকে রক্ষা করিয়াছেন ৷ কিন্তু তাহারা তাহাদের শক্তি ও প্রতিভার উপযুক্ত কৰ্ম্ম না করিয়া কেবল জাতির ভবিষ্যৎ মাহাত্ম ও বিশাল কৰ্ম্মের ক্ষেত্র সৃষ্টি করিয়া গিয়াছেন ৷ তাঁহাদেরই পুণ্যবলে নব ঊষার কিরণমালা চারিদিক উদ্ভাসিত করিতেছে ৷ ভারতজননীর নূতন সন্ততি পিতামাতার গুণপ্রাপ্ত না হইয়া সাহসী, তেজস্বী, উচ্চাশয়, উদার, স্বার্থত্যাগী, পরার্থে ও দেশহিতসাধনে উৎসাহী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষাপূর্ণ হইয়াছে ৷ এইজন্য আজকাল পিতামাতার বশ না হইয়া যুবকগণ স্বপথে পথিক হইতেছে, বৃদ্ধে-তরুণে মতের অনৈক্য ও কাৰ্য্যকালে বিরােধ উপস্থিত হয় ৷ বৃদ্ধগণ এই দেবাংশসস্তৃত তরুণ সত্যযুগ-প্রবর্তকগণকে স্বার্থ ও সঙ্কীর্ণতার সীমায় আবদ্ধ রাখিতে চাহিতেছেন, না বুঝিয়া কলির সাহায্য করিতেছেন ৷ যুবকগণ মহাশক্তি-সৃষ্ট অগ্নিস্ফুলিঙ্গ, পুরাতন ভাঙ্গিয়া নূতন গঠিতে উদ্যত, তাহারা পিতৃভক্তি ও বাধ্যতা রক্ষা করিতে অক্ষম ৷ এই অনর্থের উপশম ভগবানই করিতে পারেন ৷ তবে মহাশক্তির ইচ্ছা বিফল হইতে পারে না, এই নবীন সন্ততি যাহা করিতে আসিয়াছেন, তাহা সুসম্পন্ন না করিয়া যাইবেন না ৷ এই নূতনের মধ্যেও পুরাতনের প্রভাব আছে ৷ অপকৃষ্ট heredity-র দোষে, আসুরিক শিক্ষার দোষে অনেক কুলাঙ্গারও জন্মগ্রহণ করিয়াছে; যাঁহারা নবযুগ-প্রবর্তনে আদিষ্ট তঁহারাও অন্তর্নিহিত তেজ ও শক্তি বিকাশ করিতে পারিতেছেন না ৷ নবীনদিগের মধ্যে সত্যযুগ প্রকাশের একটী পূৰ্ব্বলক্ষণ, ধৰ্ম্মে মতি ও অনেকের হৃদয়ে যােগলিপ্সা ও অর্ধবিকশিত যােগশক্তি ৷

আলিপুর বােমার মােকদ্দমায় অভিযুক্ত অশােক নন্দী শেষােক্ত শ্রেণীর মধ্যে একজন ৷ বলা হইয়াছে, যাঁহারা তাহাকে চিনিতেন, তাহারা কেহ বিশ্বাস করিতে প্রস্তুত নন যে, ইনি কোনও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হইয়াছিলেন ৷ ইনি অল্প ও অবিশ্বাসযােগ্য প্রমাণে দণ্ডিত হইয়াছিলেন ৷ তিনি অন্য যুবকগণের ন্যায় প্রবল দেশসেবার আকাঙক্ষায় অভিভূত হন নাই ৷ বুদ্ধিতে, চরিত্রে, প্রাণে তিনি সম্পূর্ণ যােগী ও ভক্ত, সংসারীর গুণ তাহার মধ্যে ছিল না ৷ তাঁহার পিতামহ সিদ্ধ তান্ত্রিক যােগী ছিলেন, তাঁহার পিতাও যােগপ্রাপ্ত শক্তিবিশিষ্ট পুরুষ ৷ গীতায় যে যােগীকুলে জন্ম মানুষের পক্ষে অতি দুর্লভ বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে, তাহার ভাগ্যে তাহাই ঘটিয়াছিল ৷ অল্পবয়সে তাহার অন্তর্নিহিত যােগশক্তির লক্ষণ এক-একবার প্রকাশ পাইয়াছে ৷ ধৃত হইবার বহু পূৰ্ব্বে তিনি জানিতে পারিয়াছিলেন যে, তাঁহার যৌবনকালে মৃত্যু নির্দিষ্ট, অতএব বিদ্যালাভে ও সাংসারিক জীবনের পূর্ব আয়ােজনে তাহার মন বসে নাই, তথাপি পিতার পরামর্শে পূৰ্ব্বজ্ঞাত অসিদ্ধি উপেক্ষা করিয়া কর্তব্য কৰ্ম্ম বলিয়া তাহাই করিতেছিলেন এবং যােগপথেও আরূঢ় হইয়াছিলেন ৷ এমন সময়ে তিনি অকস্মাৎ বিনা কারণে ধৃত হইলেন ৷ এই কৰ্ম্মফলপ্রাপ্ত বিপদে বিচলিত না হইয়া অশােক জেলে যােগাভ্যাসে সম্পূর্ণ শক্তি প্রয়ােগ করিতে লাগিলেন ৷ এই মােকদ্দমায় আসামীদের মধ্যে অনেকে এই পথ অবলম্বন করিয়াছিলেন, তাঁহাদের মধ্যে তিনি অগ্রগণ্য না হইলেও অন্যতম ছিলেন ৷ তিনি ভক্তি ও প্রেমে কাহারও অপেক্ষা হীন ছিলেন না ৷ তাহার উদার চরিত্র, গম্ভীর ভক্তি ও প্রেমপূর্ণ হৃদয় সকলের পক্ষে মুগ্ধকর ছিল ৷ গোঁসাই-এর হত্যার সময়ে তিনি হাসপাতালে রুগ্ন অবস্থায় ছিলেন ৷ সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যলাভের পূর্বেই নির্জন কারাবাসে রক্ষিত হইয়া তিনি বার বার জ্বরভােগ করিতে লাগিলেন ৷ সেই জ্বরা-বস্থাতেই মুক্তকক্ষে হিমে রাত্রি যাপন করিতে হইত ৷ ইহাতে ক্ষয়রােগ প্রাপ্ত হইয়া সেই অবস্থায়, যখন প্রাণরক্ষার আর আশা নাই, তখন বিষম দণ্ডে দণ্ডিত হইয়া তিনি আবার সেই মৃত্যু-আগারে রক্ষিত ছিলেন ৷ ব্যারিষ্টার শ্রীযুত চিত্তরঞ্জন দাসের আবেদনে তাহাকে হাসপাতালে লইবার ব্যবস্থা করা হইল, কিন্তু জামিনে মুক্তিদান করা হইল না ৷ শেষে ছােটলাটের সহৃদয়তায় তিনি স্বগৃহে স্বজনের সেবা পাইয়া মরিবার অনুমতি পাইলেন ৷ আপীলে মুক্ত হইবার পূর্বেই ভগবান তাঁহাকে দেহকারাবাস হইতে মুক্তি দিলেন ৷ শেষকালে অশােকের যােগশক্তি বিলক্ষণ বৃদ্ধি পায়, মৃত্যুর দিন বিষ্ণুশক্তিতে অভিভূত হইয়া সকলকে ভগবানের মুক্তিদায়ক নাম ও উপদেশ বিতরণ করিয়া নামােচ্চারণ করিতে করিতে তিনি দেহত্যাগ করিলেন ৷ পূৰ্ব্বজন্মাৰ্জিত দুঃখফল ক্ষয় করিতে অশােক নন্দীর জন্ম হইয়াছিল, সেইজন্য এই অনর্থক কষ্ট ও অকাল মৃত্যু ঘটিয়াছে ৷ সত্যযুগ প্রবর্তনে যে শক্তির প্রয়ােজন, সেই শক্তি তাঁহার শরীরে অবতীর্ণ হয় নাই, কিন্তু তিনি স্বাভাবিক যােগশক্তির প্রকাশের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখাইয়া গিয়াছেন ৷ কৰ্ম্মের গতি এইরূপই হয় ৷ পুণ্যবান পাপফল ক্ষয় করিতে অল্পকাল পৃথিবীতে বিচরণ করেন, পরে পাপমুক্ত হইয়া দুষ্টদেহ ত্যাগ ও অন্যদেহ গ্রহণপূর্বক অন্তর্নিহিত শক্তি প্রকাশ ও জীবের হিতসম্পাদন করিতে আসেন ৷









Let us co-create the website.

Share your feedback. Help us improve. Or ask a question.

Image Description
Connect for updates