All writings in Bengali and Sanskrit including brief works written for the newspaper 'Dharma' and 'Karakahini' - reminiscences of detention in Alipore Jail.
All writings in Bengali and Sanskrit. Most of the pieces in Bengali were written by Sri Aurobindo in 1909 and 1910 for 'Dharma', a Calcutta weekly he edited at that time; the material consists chiefly of brief political, social and cultural works. His reminiscences of detention in Alipore Jail for one year ('Tales of Prison Life') are also included. There is also some correspondence with Bengali disciples living in his ashram. The Sanskrit works deal largely with philosophical and cultural themes. (This volume will be available both in the original languages and in a separate volume of English translations.)
ভগবান সন্ময়, চিন্ময়, আনন্দময়, সচ্চিদানন্দই সনাতন সত্তার সনাতন সত্য, সচ্চিদানন্দই জগতের উৎস, জগতের কারণ, জগতের প্রকৃত স্বভাব, গুপ্ত অর্থ.. ৷
নিখিল অধ্যাত্ম সত্যের সূৰ্য্যকিরণস্বরূপ মহীয়সী শ্রুতি উপনিষদই আদি পরিপূর্ণ প্রকৃত বেদান্ত ৷ যে প্রসিদ্ধ দর্শন সেই নামে জ্ঞাত, সেটা এই মহীয়ান বেদান্তের একদিক মাত্র লইয়া রচিত, মনুষ্য বুদ্ধির নিৰ্ম্মিত, বুদ্ধির অন্ধকারে রত্নস্বরূপ 1 বেদান্তদর্শন দর্শন হিসেবে একটী মহামূল্য সৃষ্টি, তথাপি দর্শনই আদি আসল বেদান্ত নয় ৷ সূৰ্য্য যদি উদয় হয়, প্রদীপের আর প্রয়ােজন নাই, উপকারিতাও নাই ৷
মায়া প্রকৃতি শক্তি লীলা
মায়া, মায়া অনবরত বল ৷ এই মায়া কি – তাহা একবার তলাইয়া অবধারণ করিবার চেষ্টা করিবে কি? কথার দাস আমরা অধ্যাত্মবাদের বুলি শেখা টিয়াপাখী, একবার মনুষ্যের স্বাধীন বুদ্ধিতে শেখা শব্দের পিছনে আসল বস্তুটী কি, দর্শনের কথার কাটাকাটি ত্যাগ করিয়া প্রকৃত অনুভূতি কি তাহা একবার তলাইয়া দেখা ভাল ৷
তােমরা বল, জগৎ মায়া, যাহা মায়াপ্রসূত তাহা অলীক, তাহার সত্য বাস্তবিকতা ৷ নাই ৷ জগৎ যদুকরের ভেল্কী, জগৎ বিকৃত মস্তিষ্কের দুঃস্বপ্ন ৷
মনুষ্য জন্মের অর্থ ও উদ্দেশ্য কি, মনুষ্যের চরম উন্নতি কিসেতে সিদ্ধ হয়, কেন ভগবান এইরূপ জগৎ সৃষ্টি করিয়া অনন্তকাল ব্যাপিয়া আনন্দলাভ করিতেছেন ৷ এই হইল প্রশ্ন ৷ উত্তর – জগৎ ভগবানের নানারূপ আত্মগােপন ও আত্মপ্রকাশের ক্ষেত্র, সেই আনন্দই জগতের হেতু ৷ এই আত্মবিকাশ জগতে পৃথিবীতে ক্রমবিকাশ রূপ ধারণ করে, মনুষ্যজীবন সেই ক্রমবিকাশের কেন্দ্র ও যন্ত্র, ইহাই মনুষ্য জন্মের অর্থ ও উদ্দেশ্য ৷ আত্মবান হওয়া, ভগবানকে পাওয়া ও নিজের ভিতরের লুক্কায়িত দেবত্ব প্রকাশ, মনুষ্যের চরম সিদ্ধির পন্থা ৷ আবার এই টিী এক সূত্রে গ্রথিত, মনুষ্যের মন-প্রাণ-শরীরে ভগবানের আত্মবিকাশের ত্রিবিধ তথ্য ৷ যে মানুষ আত্মবান হয়নি, সে ভগবানকে পায়না, যে ভগবানকে পায়নি তার পক্ষে নিজের ভিতরের দেবত্ব প্রকাশ করার দুরাকাঙ্ক্ষা আকাশকুসুম ফোটানাের কল্পনা মাত্র ৷
অশ্ব আহত, স্বয়ং আহত, শরীর অবসন্ন, স্বেদসিক্ত লাগাম রক্তাক্ত কলেবর – গারিবান্দ্রীয় সৈনিক লুচিয়াে কল মন্তে চেসাের বৃক্ষরাজী সঙ্কুল বায়ুসেবিত শিখরে দ্রুতগতি থামাইয়া একবার পশ্চাদ্দিকে তীক্ষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করিল ৷ যে অস্ত্রিয় অশ্বারােহীগণ সকাল হইতে তাহার পশ্চাৎ ধরিয়াছিল, উপত্যকার পর-পার্শ্বস্থিত পর্বতের গায়ে তাহাদের সবুজ পােষাক সূৰ্য্যকিরণে ঝলমল করিতেছে, তাহারা উপত্যকায় নামিতেছে মাত্র ৷ সেই ঘৃণিত সবুজ সাজের দর্শনে কলন্নার অবসন্ন নেত্রদ্বয়ে বিদ্বেষের অগ্নি জ্বলিয়া উঠিল ৷ সজোরে সরােষে জিনে তাহার বদ্ধমুষ্টি মারিল, যেন নিপাতিত শত্রুর গায়ে খড়া হানিতেছে ৷ তাহার পরে চক্ষু তুলিয়া যে পৰ্বতশিখরে সুদূরে স্বাধীন সানমারীনাের শ্বেত হগুলি দেখা দেয় - – যেন ইতালীর স্বাধীনতাধ্বজা ইতালীর সুনীল আকাশে উড্ডীয়মান, যেন জন্মভূমির শেষ স্বাধীনতাচিহ্ন প্রজাতন্ত্রী সানমারীনাে মাৎঝিনির শিষ্য গারিবান্ডির সৈনিক পরাজিত স্বাধীনতা প্রয়াসীকে ডাকিতে চায়, কোলে টানিতে চায়, – সেই পবিত্র পর্বতের দিকে চাহিল, দীর্ঘকাল সতৃষ্ণ দৃষ্টি সেই শ্বেত হৰ্মগুলির উপর আবদ্ধ রহিল ৷ শেষে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া কলন্না মুখ ফিরাইয়া সানমারীনাের কাছে জীবনের আশার কাছে চিরবিদায় লইল ৷ ঘােড়া আবার চলিতে লাগিল ৷ ক্ষতস্থানের রক্তস্রোতে শেষ প্রাণবায়ু নির্গত হইতেছে, অথচ প্রভুর ঋণ শােধ করিতে লুচিয়াে কলন্নার প্রিয় ভগিনীর আদর ও সকালবেলা ও সন্ধ্যাবেলায় চিরপ্রদত্ত চিনির গােলাকে স্মরণ করিয়া তেজস্বী আবার সবেগে চলিল ৷ সেই ভগিনী আজ রােম নগরীতে একটী উচ্চ প্রাসাদের... জানালায় বসিয়া রােমান্যার দিকে চাহিতেছে ৷ রােমে শরীর, মন কিন্তু বিপন্ন ভায়ের সঙ্গী হইয়া পৰ্বতে জঙ্গলে ঘােরে, আর দিনে দুইবেলা ভগবানের সিংহাসনতলে করুণস্বরে ভায়ের প্রাণভিক্ষা চায় ৷ হায় প্রভুভক্ত, তার দ্রুতগতি হইতে অদৃষ্টের গতি দ্রুততর ৷
পনর মিনিট পর ঘােড়া পৰ্বত তলে পচে কিন্তু তাহার নিঃশ্বাস ঘন ঘন নিঃশ্বাস, মন্দীভূতগতি ও অদৃঢ় পদনিক্ষেপে কলন্না বুঝিতে পারিল তাহার বিশ্বাসী ভৃত্যের আয়ু এই মুহূর্তে শেষ হইল, ইহার মধ্যে শত্রু মন্তে চেসাের ওই পারে উঠিতেছে, আর পালাইবার উপায় নাই, তিনি চারিদিকে চাহিলেন ৷ পথের দুইধারে শিলাখণ্ড ...
[একটি বিক্ষিপ্ত অংশ]
“জয় জননী ইতালিয়া!” ইতালীর স্বাধীনতার সিংহনাদ স্বরূপ মন্তে চেসাের শৈলপ্রস্থতা প্রতিধ্বনি ভীমকণ্ঠে উত্তর করিল, “জয় জননী ইতালিয়া!”
করােতােয়ার বর্ণনা
বঙ্গদেশের পশ্চিমপ্রান্তস্থ পৰ্বতপ্রদেশে দুইটি নিবিড়বনাবৃত পর্বতশ্রেণীর মধ্যস্থানীয় উপত্যকায় ক্ষিপ্রগামিনী বহুকলকলস্বরমুখরিতা করােতােয়া নদী ক্ষুদ্র চঞ্চলগতি বালিকার ন্যায় হেলিতে দুলিতে হাসিতে খেলিতে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয় ৷ এই উপলে উঠিয়া বসিল, এই এক লম্ফে নামিল, এই তটস্থ বৃক্ষের শ্যামচরণে চড় মারিয়া পালাইল, এইরূপ অশেষ বাল্যসুলভ ক্রীড়া কৌতুকের পরে শেষে যেন দূরে জননীর মধুর আবাহন শুনিল ৷ হঠাৎ উপত্যকা হইতে নিঃসরণ করিয়া মা গঙ্গার পবিত্র স্নেহময় ক্রোড়ের উদ্দেশ্যে গাইতে গাইতে ছুটিয়া যায় ৷
করােতােয়ার উপত্যকা অনেক পরিমাণে নিকটবর্তী সমান ভূমি হইতে স্বতন্ত্র জগৎ বলা যায় ৷ উচ্চ পর্বতপ্রাচীরে আবদ্ধ প্রকৃতির নিঝর সংযুক্ত 2 রমণীয় ক্রীড়াস্থল, পবনপূত স্বচ্ছসলিলসিক্ত পূজা গৃহ ৷ বিলম্বে সূর্যোদয়, অকালে অস্ত ৷ অতিদীর্ঘ প্রভাতকালে জগতের যুগব্যাপী আবির্ভাব, অতিদীর্ঘ গােধূলিসময় সেই বৃদ্ধ যােগমগ্ন জগতের যুগব্যাপী শান্ত অবসান যেন প্রতিদিন উপলব্ধি হয় ৷ অহােরাত্রী বনের উচ্ছ্বাসমৰ্ম্মরপূর্ণ হরিতপত্রনিবিড় অন্তঃস্থলে পবনের গম্ভীর মহৎ-শান্তভাবাত্মক অবিরাম ব্রহ্মগাথা, অহােরাত্রী নিম্নভূমির স্বচ্ছ উপলে নিঝরিণীর মৰ্ম্মব্যাপী অথচ স্নিগ্ধ সুখকর নিনাদ, অহােরাত্র উপত্যকার মধ্যভাগে করােতােয়ার মৃদুতরঙ্গসঙ্কুল বিশ্রামহীন হাসিখেলা ৷ উপত্যকার জীবন শব্দময় অথচ কোলাহল নাই ৷ সেই উচ্চ অচল পৰ্ব্বতশ্রেণী ও নিবিড় রহস্যধ্যানমগ্ন বনরাজীর গাম্ভীৰ্য্য চঞ্চল সলিল ও মুখর পবনকেও মহৎ শান্তিতে অভিভূত করিয়া তুলিয়াছে ৷ এই স্থানের রমণীয়তায় জীবনমুক্ত চরিত্রের সুন্দর আদর্শ প্রতিফলিত ৷ বাহিরে সংসারের চঞ্চলতা হাসিকান্না খেলা প্রেম কলহ পুনর্মিলন ভিতরে শুদ্ধ গম্ভীর ঈশ্বরধ্যান ৷ নিরপেক্ষ প্রাণীহিতকামনা চিত্তপ্রসাদ সমতা ও অচল অদ্বৈতভাব ৷
অরুণকুমারীর হরণ
রাজকন্যার হাতী মন্দির হইতে বাহির হইতে লাগিল ৷ চারিদিকে অশ্বারােহী সৈন্যের তেজস্বী অশ্ববৃন্দ বিলম্বে অধীর হইয়া নাচিতে নাচিতে চলিল ৷ গৰ্বসার 3 লৌহকঠিন অশ্বক্ষুরধ্বনি মন্দির প্রাঙ্গণের পাষাণময় ভূমির উপর নিনাদিত হইল ৷ তুরীরব নির্গমন ঘােষণা করিল ৷
রাজমার্গে মুখর জনতার অযুতস্বরঘন বিরামহীন সীমাহীন কোলাহল কর্ণ বধির করে ৷ চক্ষুর অমাপ্য লােকসাগর, – মহাসাগরের ন্যায় সহস্রতরঙ্গজাত অসীম কল্লোল, মহাসাগরের ন্যায় সহস্রতরঙ্গ-চূড়া-ধবল উরুচারী হিল্লোল ৷ ভীড় অভেদ্য, হস্তী চলিতে পারে না ৷ অশ্বারােহীগণ জনতাকে সরাইতে সরাইতে চারিদিকে বিকীর্ণ হইতে লাগিল, যাহারা হাতীর কাছে রহিল, তাহাদেরও মাহুত ইঙ্গিত করিয়া এইদিকে ওইদিকে পাঠায় ৷ রাজকন্যার হস্তী..
আলাপন
রাজা: কি ভীষণ বন্য স্থলে, কি বিজন দেশে করেছি নিবাস! আছি কঠোর বিধানে স্বদেশের মায়া ত্যজি, প্রিয়জন মুখ ৷ হেরিতে নিষিদ্ধ ৷ সত্য তবে এ জগৎ কার খেলা, চক্ষে যার নিয়ম-বন্ধন ৷ খেয়ালের প্রতিকৃতি মাত্র তার ৷ সত্য কাহার ইঙ্গিতে মােরা মায়াবৃতি দৃষ্টি ঘুরি মায়াবদ্ধ ক্ষেত্রে কৃত্রিম ধরায় ৷ ঝলসে মায়ার পুরী, তিমিরের রশ্মি আলােক জ্ঞানীর জ্ঞান স্বপ্নের শৃঙ্খলা, নিবিড় অরণ্যভূমি পার্থিব জীবন ৷ চিন্তারাজী উড়ে যেথা জোনাকীর মতাে অন্ধকারে ৷ তবে চেয়েছিনু বৃথা মােরা তব যুদ্ধ বিজিতের নিরাশ জল্পনা – এই উক্তি, দুর্বলের বিলাপ কেবল ৷ দেখি সত্য সে বিলাপ, চরম দর্শন ৷ যাও তবে সুখ স্বপ্ন, এস তবে দুঃখ, অজেয় শিক্ষক তুমি, জ্ঞানের সােদর ৷ তুমি মহামায়া গর্ভে অগ্রজ তাহার ৷ এস, আলিঙ্গন করি মােরে, অল্পদিন ৷ মাের সঙ্গে করি খেলা এ বিজন বনে সমুচিত ক্রীড়াভূমি তব দুঃখ ৷ ব্যর্থ ৷ নৃত্য করে জীব লয়ে অল্পায়ু দম্পতি দুঃখ, সুখ ৷ নৃত্য থামাইবে মৃত্যু আসি ৷
পুরােহিত: ভব যুদ্ধে পরাজিত এ মুহূর্তে তুমি, হে রাজন ৷ তপ্ত বুকে নিরাশার বাণী, দুঃখের ক্রন্দন কণ্ঠে নহে ব্রহ্মজ্ঞান ৷ অন্য সেই বিদ্যা, দুৰ্ব্বলের আশাতীত বীরলভ্য মহাবস্তু – নিহিত গুহায় ৷ সত্য এই কথা, নৃত্য পার্থিব জীবন ৷ কার নৃত্য? জনার্দন সেই নটরাজ ৷ দুঃখ নহে, তারে আলিঙ্গন কর, রাজা, তারে লয়ে রণে রণে তাণ্ডবে মাতাও আনন্দী আত্মায় দেহে ৷ জয় পরাজয় অরণ্য নগর ক্ষেত্র নাচের বিচিত্র চরণ বিক্ষেপ মাত্র নানা দৃশ্যপট, নৃত্যের শােভায় রাখা, রাজ নাট্যাঙ্গনে ৷
রাজা: মুখের কথায় কর সান্ত্বনা আমায়, জানে প্রাণ নিজ দুঃখ ৷ নারায়ণ নৃত্য? রাক্ষসী প্রকৃতি নৃত্য মায়া-অন্তঃপুরে, রাক্ষস-বালার খেলায় গড়ে ভাঙ্গে নিত্য জীবন্ত পুতুল, ফেটেছে হৃদয় দেখি ৷ হাসে হৃষ্ট কুতূহলে ৷ মায়া সত্য, সত্য এ বিজন স্থান, সত্য পরাজয়, সত্য দুঃখ ৷ নহে সুখ সত্য এ ধরায়, নহে সত্য রাজ্য? সত্য শাস্তি অজ্ঞানের, নহে প্রেম সত্য ক্রন্দন ভরা জগতে ৷
পুরােহিত: তাের তরে দুঃখ হৃদে, লােটাও কাদায় ৷ খোঁজ বিষে দুঃখকৰ্ম্ম দুঃখসার ৷ শেষে চিনিবে আনন্দময় প্রেমময় কৃষ্ণ ৷ মহাপ্রেমিকের খেলা জীবন ধরায় ৷
রাজা: যে প্রেম চুম্বন করে অশনির মুখে, যে প্রেম রােগ যন্ত্রণায় দহে সৰ্বকাল, যে প্রেমের ছদ্মবেশ দুঃখ, দ্বেষ, মৃত্যু, ঘৃণাসম 4 সে প্রেম ৷ আছে দয়া নরচিত্তে, নহে কৃপাময় সৃষ্টি, প্রকৃতি, ঈশ্বর ৷ নিজ দয়া প্রতিমূৰ্ত্তি, অলীক প্রতিমা, গড়িয়া মানব নিজচিত্তে ৷ সেই ছায়া ভগবান বলে পূজা করে ৷ আছে ব্রহ্ম ৷ ভগবান কল্পনা স্বপ্নে অন্য স্বপ্ন দুঃখীর সৃষ্ট মিথ্যা প্রতিকার ৷
পুরােহিত: তােমার, রাজা, কৃষ্ণলীলা দেখি’ রােমাঞ্চিত হয় দেহ শুনি’ রাধা মুখে প্রণয়িনী তিরস্কার, তব কথাচ্ছলে ৷ দেখিব না মুখ তার, শুনিব না নাম আছে বলে জানিব না তারে আর ৷ হেন উক্তি জননীর মুখে নাস্তিক-জল্পনা ৷ বুঝি আমি ৷ বলি তবে, নহে এ সান্ত্বনা বৃথা, নৃপ ৷ দেখিবে দেখিবে কৃষ্ণ মাের প্রকাশিত হবে পুনঃ কানু বেশে ৷ খেলানা আমার ৷ কেড়েছি দিয়েছি পুনঃ শেখাবারে শুধু তােরে প্রভু আমি তাের ৷
রাজা: আস্থা নাই মম প্রাণে শূন্য এ কথায় ৷ বৃথা বাক্যচ্ছটা সৃজে মানবের বুদ্ধি ধাঁধাতে নিজ নয়ন ৷ ছাড় এই কথা ৷
পুরােহিত: ছাড়িলাম, তবে রেখাে মান, মহারাজ বৈষ্ণবের উক্তি ৷
রাজা: বৃথা এই সম্বােধন ৷ ...রাজা এ অটবীর, নহি আমি, রাজা ভিক্ষুকে বনদেবতা অল্প ফলমূল ছাড়ে ক্ষুধানিবারণ ৷ ভ্রমি প্রাণভয়ে সৈন্যহীন পরিজনত্যক্ত ৷ পরিহাস বাজে কানে নৃপ নাই ৷ কে রাজা বিপদে ত্যাজ্য সুহৃদের, কেবা প্রজা এ বিজনে ৷
পুরােহিত: আছে প্রজা, আছি মােরা ৷ সর্বদা সর্বত্র রাজা তুমি পিতা মাের অন্য সম্বােধন শুনিবে না মাের মুখে বনে বা নগরে ৷
[পূর্ববর্তী অংশটির দ্বিতীয় রূপায়ণ]
রাজা: এই ভীম রম্যস্থলে এই বন্য দেশে স্বদেশ-মমতা ত্যজি, প্রিয়জন-মুখ হেরিতে নিষিদ্ধ, ব্যাঘ্র সিংহ সেব্য ক্রুর প্রকৃতি-মাতার ক্রোড়ে নিবাস এখন ৷ লীলাপ্রিয় লীলাময়, বিধান তােমার ৷ বিভব মুকুট রাজ্য ক্রীড়নক তব ৷ রত্নময় যে মুকুট বিভবের ছায়া, অল্পস্থলে সুবিস্তীর্ণ রাজ্য ছটী যার, ক্রীড়াপ্রিয় করে রাখি মানুষের শিরে হাসিয়া নিরখ মুখে, কাল অকস্মাৎ অলক্ষিত পদে এসে কেড়ে নিবে তুমি ৷ হাসিয়া তাড়াও বনে পেয়ে অন্তরালে, যাও অন্তরালে, কেহ দেখে না বালকে ৷ যেই দিন বুঝি শেষে খেলাধূলাে সব, খেলার সামগ্রী রাজ্য মুকুট বিভব জন্ম মৃত্যু সুখ দুঃখ নিয়ম ক্রীড়ার, ফুটে চোখ সেই দিনে, কাণে শুনি স্বর, দেখা দাও, সুদর্শন, বিশ্বক্রীড়া গৃহে ৷
পুরােহিত: কিন্তু এই ক্রীড়াচ্ছলে ভুলিয়াে না কভু, মহারাজ, অনন্ত জ্ঞানীর লুক্কায়িত গভীর অনন্ত প্রেম ৷ সান্ত-জ্ঞানী মােরা ধরিতে না পারি তাহা ৷ নহে অন্ধ খেলা নহে অর্থশূন্য বালকের মত্ত পরিহাস এই বিশ্ব ৷ গুঢ় কিছু নিহিত সৰ্ব্বত্র, ক্রীড়ার মহৎ তত্ত্ব ৷ খুঁজ পন্থা সদা, মহারাজ, না বুঝিলে জান আছে গূঢ় অন্ধ মােরা ৷
রাজা: ‘মহারাজ’, এই সম্বােধন সাজে না শত্ৰুলাঞ্ছিত পরিজনহীন নির্বাসিত জনে ৷ পরিহাস মত লাগে পশি কাণে ৷
কুমার: মহারাজ সর্বত্র সর্বদা তুমি পিতা, রাজ্যে বনে ৷ বধ্য মাের সেই, তােমারে যে অবহেলে ৷ পুরাতন রাজ্যে চিরসম্মানিত বংশে অভিষিক্ত তুমি ৷ নহে বাহ্য রাজলক্ষ্মী, নহে পরিজন সে রাজার রাজ্য-সার ৷ ভিতরে যে লক্ষ্মী, ভিতরে অজেয় প্রাণ পরিজন তার ৷
পুরােহিত: সত্য কথা বলেছ রাজকুমার তুমি, অভিমন্যু ৷
রাজা: সত্যকথা! এই বিজন বনে পাঠাইয়া নারায়ণ ফুটায়েছে চোখ ৷ ভুলাও না মােরে ৷ পুণ্যনদী তীর্থস্থলে নেবেছে শার্দুলরাজ নিদাঘ-তৃষ্ণায় ৷ শুনিয়া গর্জন তার, বলেছি, হে নৃপ শুন চাটুকার স্তব নহে এই ধ্বনি নাব, সম্বােধন কর এরে, যদি দেখে উচিত সম্মান করে ৷ ঝঞাবায়ুক্লিষ্ট যবে এ রাজশরীর, ভাবি, জ্ঞানস্পর্শ ইহা নৃপ ৷ শুন, নীরব এ উপদেশ ৷ যবে নৃত্য করে চুপে মৃত্যুর নর্তকী সমুজ্জ্বল নগ্নকান্তি ভৈরবী আকাশে, বাহিরিছে ঈশ্বরের অরণ্য-প্রাসাদে ঈশ্বরের প্রতিহারী, ভীমা সৌদামিনী, আগন্তুক দর্শনার্থে, বুঝি বৃষ ঘােষ সামগায়ী বজের ৷ মায়া ত্যজ, বুঝ মহৎবাসী সব, খেলাধূলাে কৰ্ম্ম প্রফুল্ল বালক তিনি, বালক সকলে ৷ মল্লযুদ্ধ প্রেমক্রীড়া কর অনিবার, পণ্যখেলা, – পীত শ্বেত মাটি উপার্জন যুবা কর 5 বালকমতি, জিতি হাস সুখে, ক্রোধ কর হারি’ ৷ বাহ্যবস্তু স্বপ্নতুল্য নহে ভিতরের ধন রাজ্য, অভিমন্যু, বৃথা মায়া পক্ষপাতে ভুলাও না কভু ৷
পুরােহিত: ক্রীড়া যদি, সে অনন্ত প্রেমিকের সনে ক্রীড়া কর তবে ৷
রাজা: প্রেমিকের পুরােহিত, যে প্রেম চুম্বন করে অশনির মুখে, যে প্রেম রােগ যন্ত্রণায় পােড়ায় এ দেহ, যে প্রেমের মৃত্যুরূপে তীব্র দুঃখ বাজে ছদ্মবেশপ্রিয়, দুর্বোধ্য সে মানবের ৷ রুদ্ররূপ এ খেলায় বুঝেছে ক’জনে?
পুরােহিত: তবে খেলা করে ৷ ছাড়ে না, ধরিয়া জোরে শিথিল করে না মুষ্টি ৷
রাজা: জ্বালাতন করে প্রেমিকা প্রেমিকে, তবে শেষে দেয় সুখ অর্ধবক্র গ্রীবা নুয়ে, পরায়ুখ ছলে, যেন বলে নিরুপায়, যেন শ্রান্ত যুদ্ধে, স্বর্গতুল্য আনন্দের কণা মধু স্বপ্নে ৷
পুরােহিত: সত্য মহারাজ ৷ ছাড় কেন আশা তুমি ৷
রাজা: হায় পুরােহিত, দুষ্ট ক্রীড়া রসে দেবী নিজের বদলে দেয় সখীর অধর, সাজাইয়া নিজ বস্ত্রে মুখে বস্ত্র টানি ৷ জানিয়া অধর পানে তাহার মত্ত হতে পারি?
পুরােহিত: সখী দেবী একই, ক্রীড়া তাহার ইচ্ছায় ক্রীড়ায় সম্মতি দেবী 6 যাহা ভালবাসে ৷
রাজা: করি তাহা ৷ দিল রাজ্য, বসাইল উচ্চে, বসিনু সম্রাট হয়ে ৷ তাড়ায়েছে বনে, বনচর সাজি সুখে ৷
কুমার: পুতুলের ক্রীড়া ভালবাসে কি ঈশ্বর, নহে পুরুষার্থ ৷ কুরুক্ষেত্রে জনার্দন ৷ বিকল্পে সারথি ৷ বীরের ক্রীড়ার সাথী, নৃত্য রণস্থলে ৷
পুরােহিত: ক্রীড়া যদি, মহারাজ, ভালমন্দ খেলি পরিণাম জেতা হারা ৷ মধ্যস্থ মাধব, যােগ্যের সারথি কিম্বা, ফলদায়ী ভবে ৷
রাজা: বৃথা কথা কহি মােরা ৷ ধন নাই, নাই সৈন্য, নাই মিত্রবল, কোথায় সে আশা ৷
পুরােহিত: দৃঢ় বুকে, শান্ত মনে, সুযােগ দর্শনে রহ হয়ে তৎপর ৷ লীলায় মুহূর্তে রাজ্যচ্যুত করিয়াছে আশাতীত ধ্বংসে, লীলায় মুহূর্তে পুনঃ আশাতীত ভাগ্য ৷ বসাইতে পারে রাজ্যে বৃহৎ প্রকাশে ৷ খেলিতে খেলিতে যেন সুতুচ্ছ উপায়ে ৷
কুমার: শােন বৃক্ষরাজ মহাকায় বন্যসখা আশ্রিত-বৎসল ৷ উন্নত শাখা সহস্রে অসংখ্য খেচরবাসী, মধু কোলাহলে যায় দুই সন্ধ্যা তব বাৎসল্য আনন্দে ৷ কীটগণ তার ছালে ছিড়ে করে বাসা সহস্রে সহস্রে ৷ সেই অত্যাচার তুমি সহ্য কর প্রীত হাস্যে ৷ বিস্তৃত ছায়ায় আবরি বিশ্রান্ত প্রাণী স্নেহ আলিঙ্গনে ৷ বসাও শীতল ক্রোড়ে ৷ ছদ্মবেশে বুঝি ঈশ্বরের প্রতিমূৰ্ত্তি তুমি বৃক্ষরাজ ৷ ঐশী এ প্রকৃতি তব ৷ আমিও আসিয়া একাকী ধরায় ঘুরি আশ্রয়ে তােমার লভি শান্তি ৷ অবশে প্রাণ ক্ষুন্ন হেথা বিশ্বস্ত বন্ধুর কানে গুপ্ত ভাব বলি ৷ নাই মিত্র বন্ধু সখা ৷ পিতা মাের সদা কৰ্ম্মে পরাম্বুখ, ভাবপ্রিয় মায়াজ্ঞানী ৷ চিন্তাশীল পুরােহিত, মস্তিষ্ক উর্বর ৷ অনুবর্বর প্রাণভাবে, কর্মে শুষ্ক কথা 7 যেই অল্প অনুর্বর স্বার্থ ত্যজি আসে এ বিজন বনে অল্পবুদ্ধি শুদ্ধ প্রাণ জানে সেবা, যুদ্ধ, অন্য কিছু নাহি জানে ৷ আসিয়া এ স্থানে লভি প্রকৃতির সঙ্গ ৷ অসংখ্য অরূপ সাথী খেলে মম চিত্তে ৷ নদী বলে গুহ্য কথা, বায়ুর নির্ঘোষ তব অগণন পত্রে খেলে যেন ছন্দ ৷ মম অন্তরের সঙ্গে ৷ বিশাল স্বভাব ৷ এ বিশ্বর, কে যেন একাকী মম তুল্য অনিরুদ্ধ বীরপ্রাণ চায় কৰ্ম্ম যুদ্ধ ৷ তিনি সৃজেছেন এ বিশ্ব যেই আনন্দ আশায় যুদ্ধের নিয়ম সেথা করেছে বিধান চেতনে ও অচেতনে ৷ নাই দ্বেষ হিংসা সে বিশাল প্রাণে ৷ পবিত্র এ যুদ্ধস্পৃহা করে যেন মল্লযুদ্ধ বন্ধুরা সপ্রেমে ৷ শােন বৃক্ষ তার সঙ্গে করিয়াছি আজি কি নীরব পরামর্শ ৷ বসিব না আর এই বনে, এই আলস্যে, গুহায়, কুটীরে ৷ বসিবা না আর তব ছায়ায় হে সখা ৷ অদৃশ্য সারথি চিত্তে চালায় সজোরে জগতের পানে, যেথা মনুষ্য সংঘর্ষ এ বিস্তীর্ণ যুদ্ধক্ষেত্রে ৷ রাজ্য কীৰ্ত্তি মৃত্যু জানি না কি লুক্কায়িত রেখেছে হাসিয়া নীল গগন প্রান্তের ওই পাশে ৷ যাব ৷ খুঁজিবারে ৷ বৃক্ষ! বন্ধুবৃন্দ, সৈন্যবল দৈবাৎ নীরবে বসে অপেক্ষায় মম সে অসীম সুনীল জগতে ৷ হয় একা শত্রু অন্তঃপুরে পশি – কেন বলি একা আছে অসি করে, আছে হৃদয়ে মুরারী জননীর দাস্য ঘচাইব, তেজ ধ্বংসী ৷ অপূর্ব কলঙ্ক মাের ৷ নয় মৃত্যু পান ৷ শত্রুর অসি প্রমাদে, লুক্কান কৃষ্ণের ৷ হাসিয়া প্রস্থান ৷ বিদায় লইনু বৃক্ষ ৷ জননীরে লয়ে যদি আসি প্রীত পাদে তবে দেখা, নচেৎ বিদায় চিরতরে ৷
সুবলু-পুলস্ত্য
[এই নাটকটির কতকগুলি বিক্ষিপ্ত অংশ মাত্র পাওয়া যায় ৷]
প্রথম অঙ্ক, প্রথম দৃশ্য
পু — রবিপুত্র জ্যোতিষ্মন, সুবল অসুর, ত্রিলােক-সম্রাট আজি ৷ ইচ্ছা কি রহিতে সেই পদে, রাজা – কিম্বা ব্রহ্ম-অভিশাপে নেহারিতে অন্ধকার গভীর পাতাল বৈতরণী-তপ্তশ্বাস বহিতে কপালে বাসনা তােমার ৷
সু — ঋষি, কেন এই ক্রোধ? কিসেতে সন্তোষ তব হইবে, ব্রাহ্মণ?
পু — ধর্মপ্রার্থী আমি তব সিংহাসন তলে, – রাজধৰ্ম্মে রাজ্যরক্ষা, ধৰ্ম্মবল সার কর রাজধৰ্ম্ম, রাজা ৷
সু — ধৰ্ম্মবল সার জানি আমি – ধৰ্ম্মবলে ত্রিলােকসম্রাট হইনু হে বিপ্র, নহি আমি ক্ষুদ্র দেব, আনন্দের দাস, অবিচারে বিশ্বভােগ করি না – জানাও বাঞ্ছা, পুরাইব, ঋষি যত তব অভিলাষ ৷
যবে প্রজাপতি উড়ে, উড়ে মম প্রাণ ৷ তার সাথী ৷ পুষ্প দেখি পুষ্প হই বৃন্তে – ঝুলি বৃক্ষে সূৰ্য্য স্পর্শ লভি মুদি আঁখি, বিপন্ন বর্ষার ক্লেদে হাসি ধৌতশির ৷
দেবের নন্দন মােরা আনন্দ বিহ্বল, নন্দনবিহারী মােরা পুষ্পসহচর – লীলা জানি, আনন্দেই জানি দৈত্যরাজ; জানি না কঠিন এ তপস্যা তব ৷
নারদ অনুচিত গুরুদণ্ড অল্প অপরাধে ৷
সুবলু অনুচিত! দেখ নাই অল্প বীজ হতে উচ্চ বৃক্ষ অধিষ্ঠান? একই স্ফুলিঙ্গ, যারে নিবায়নি বিধি পুড়াতে প্রাসাদ দেখ নাই, ঋষি? বিশ্বহিত করি তেজে, অল্প গুরু নির্বিচারে প্রচণ্ড শাসন ৷
নারদের উত্থানপূর্বক প্রস্থান-উদ্যোগ
নারদ কর অভিলাষ তব, ত্রিলােক-সম্রাট ৷ ত্রৈলােক্য মঙ্গল হেতু জাগ অনিবার ৷
প্রস্থান
ওহে ধরা, ধাত্রী মম,..
ওহে ধরা, ধাত্রী মম, বুকে মােরে ধর ৷ কি সুন্দর কি বিশাল মূৰ্ত্তি আজি তাের হাস্যময়ী প্রকৃতির সুচঞ্চলা আভা ৷ নৃত্য করে জলে স্থলে ৷ সূর্যের সে হাসি লুক্কাইছে দেখাইছে চপল ক্রীড়ায় ৷ স্নিগ্ধ তরুশাখা ৷ মাঝে বায়ুর হিল্লোল আলােড়ি সমুদ্রে যেন অরণ্যের ক্রোড় গরজে তীব্র উল্লাসে ৷ সূক্ষ্ম চক্ষে দেখি চিন্তাশূন্য জীবনের মধুমত্ত দল ৷ হেসে হেসে নেচেকুদে হেথা সেথা ধেয়ে তাড়াইছে পরস্পর বনে উপবনে পবন বালক যত ৷ ক্ষুদ্রপদ ভরে শিহরে উঠেছে দেখ পুষ্করিণী জল কম্পমান মাতৃভাবে ৷ পৰ্বত চূড়ায় পবনের অত্যাচারে নতশির রাজী সহ্য করে... জনতা..... ...ইহার ৷ এই সূৰ্য্য বায়ু ৷ জল, বৃক্ষাচ্ছন্ন ধরা বিস্তীর্ণ আকাশ, এই বিশ্বময় রৌদ্র সুবর্ণদেবের, ঈশ্বর, সুব্যক্ত আজি তােমার মহিমা এ বিশালতায় যেন ৷ শুধু নহে ইহা তােমার মহতী সৃষ্টি, ইহা যে তুমিই কৃষ্ণ, বিশ্ববৃন্দাবন-বিহারী ৷ অস্তিত্ব, চৈতন্য আনন্দ প্রকাশিত এই জড়ে (বৃথা কেন জড় বলি সচেতন ব্রহ্মে) অনন্ত এ সান্ত ছলে, অরূপ এ রূপে স্পষ্ট অনুভব করি ৷ আকাশ পৃথিবী তীক্ষ্ণ (?) তেজ বিশ্বদীপ্তি, অজেয় পবন মহৎ জগতীছন্দে গাইতেছে আজি বেদ-বেদান্তের উক্তি মম বিশ্বপ্রাণে ৷ বেড়ায় যে শূন্যে সূৰ্য্যে প্রদক্ষিণ করি এ বিস্তৃত নীলিমায় শান্তমুখে নুয়ে অনন্ত চুম্বন করে, মুক্তি লীলা মধ্যে ৷
Home
Sri Aurobindo
Books
Bengali
Share your feedback. Help us improve. Or ask a question.