All writings in Bengali and Sanskrit including brief works written for the newspaper 'Dharma' and 'Karakahini' - reminiscences of detention in Alipore Jail.
All writings in Bengali and Sanskrit. Most of the pieces in Bengali were written by Sri Aurobindo in 1909 and 1910 for 'Dharma', a Calcutta weekly he edited at that time; the material consists chiefly of brief political, social and cultural works. His reminiscences of detention in Alipore Jail for one year ('Tales of Prison Life') are also included. There is also some correspondence with Bengali disciples living in his ashram. The Sanskrit works deal largely with philosophical and cultural themes. (This volume will be available both in the original languages and in a separate volume of English translations.)
আধুনিক সভ্যতার যে তিন আদর্শ বা চরম উদ্দেশ্য ফরাসী রাষ্ট্রবিপ্লবের সময়ে প্রচারিত হইয়াছিল, আমাদের ভাষায় সাধারণতঃ এই লি তত্ত্ব – স্বাধীনতা, সাম্য ও মৈত্রী বলিয়া পরিচিত ৷ কিন্তু পাশ্চাত্য ভাষায় যাহাকে fraternity বলে, তাহা মৈত্রী নহে ৷ মৈত্রী মনের ভাব; যে সৰ্ব্বভূতের কল্যাণেচ্ছা করে, কাহারও অনিষ্ট করে না, সেই দয়াবান, অহিংসাপরায়ণ, সৰ্ব্বভূতহিতরত পুরুষকে “মিত্র” বলে, মৈত্রী তাহার মনের ভাব ৷ এইরূপ ভাব ব্যক্তির মানসিক সম্পত্তি, – ব্যক্তির জীবন ও কর্ম নিয়ন্ত্রিত করিতে পারে; এই ভাব রাজনীতিক বা সামাজিক শৃঙ্খলার মুখ্য বন্ধন হওয়া অসম্ভব ৷ ফরাসী রাষ্ট্রবিপ্লবের তিন তত্ত্ব ব্যক্তিগত জীবনের নৈতিক নিয়ম নহে, সমাজ ও দেশের ব্যবস্থার নবগঠনােপযােগী সূত্রত্রয়, সমাজের, দেশের বাহ্য অবস্থিতিতে প্রকাশােন্মুখ প্রাকৃতিক মূলতত্ত্ব ৷fraternityর অর্থ ভ্রাতৃত্ব ৷
ফরাসী বিপ্লবকারীগণ রাজনীতিক ও সামাজিক স্বাধীনতা ও সাম্য লাভের জন্য লালায়িত ছিলেন, ভ্রাতৃত্বের উপর তাহাদের দৃঢ়লক্ষ্য ছিল না, ভ্রাতৃত্বের অভাব ফরাসী রাষ্ট্রবিপ্লবের অসম্পূর্ণতার কারণ ৷ সেই অপূৰ্ব্ব উত্থানে রাজনীতিক ও সামাজিক স্বাধীনতা য়ুরােপে প্রতিষ্ঠিত হয়, রাজনীতিক সাম্যও কতক পরিমাণে কয়েক দেশে শাসনতন্ত্র ও আইনপদ্ধতিকে অধিকার করে ৷ কিন্তু ভ্রাতৃত্বের অভাবে সামাজিক সাম্য অসম্ভব, ভ্রাতৃত্বের অভাবে য়ুরােপ সামাজিক সাম্যে বঞ্চিত হয় ৷ এই তিন মূলতত্ত্বের পূর্ণবিকাশ পরস্পরের বিকাশের উপর নির্ভর করে; সাম্য স্বাধীনতার প্রতিষ্ঠা, সাম্যের অবর্তমানে স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয় না ৷ ভ্রাতৃত্ব সাম্যের প্রতিষ্ঠা, ভ্রাতৃত্বের অবর্তমানে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় না ৷ ভ্ৰাতৃভাব থাকিলে ভ্রাতৃত্ব ৷ য়ুরােপে ভ্ৰাতৃভাব নাই, য়ুরােপে সাম্য ও স্বাধীনতা কলুষিত, অপ্রতিষ্ঠিত, অসম্পূর্ণ – এইজন্য য়ুরােপে গণ্ডগােল ও বিপ্লব নিত্য অবস্থা হইয়া দাড়াইয়াছে ৷ এই গণ্ডগােল ও বিপ্লবকে য়ুরােপ সগর্বে progress বা উন্নতি বলে ৷
য়ুরােপের যেটুকু ভ্ৰাতৃভাব, তাহা দেশ লইয়া – একদেশের লােক, হিতাহিত এক, একতায় জাতীয় স্বাধীনতা নিরাপদ থাকে – এই জ্ঞান য়ুরােপের একত্বের হেতু ৷ তাহার বিরুদ্ধে আর-একটী জ্ঞান দণ্ডায়মান হইয়াছে, সে এই —আমরা সকলে মানষ, মানষ সকলে এক হওয়া উচিত, মানুষে মানুষে ভেদ অজ্ঞানপ্রসূত, অনিষ্টকর; জাতীয়তা ভেদের কারণ, জাতীয়তা অজ্ঞানপ্রসূত, অনিষ্টকারক, অতএব জাতীয়তাকে বর্জন করিয়া মনুষ্যজাতির একত্ব প্রতিষ্ঠিত করি ৷ বিশেষতঃ যে ফ্রান্সে স্বাধীনতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বরূপ মহান্ আদর্শ প্রথম প্রচারিত হয়, সেই ভাবপ্রবণ দেশে এই দুই পরস্পরবিরােধী জ্ঞানের সংঘর্ষ চলিতেছে ৷ অথচ প্রকৃতপক্ষে এই দুই জ্ঞান ও ভাব পরস্পরবিরােধী নহে ৷ জাতীয়তাও সত্য, মানবজাতির একতাও সত্য, দুই সত্যের সামঞ্জস্যেই মানবজাতির কল্যাণ; যদি আমাদের বুদ্ধি এই সামঞ্জস্যে অসমর্থ হয়, অবিরােধী তত্ত্বের বিরােধে আসক্ত হয়, সেই বুদ্ধিকে ভ্রান্ত রাজসিক বুদ্ধি বলিতে হয় ৷
সাম্যশূন্য রাজনীতিক ও সামাজিক স্বাধীনতার উপর বিতৃষ্ণ হইয়া য়ুরােপ এখন সােশিয়ালিজমের দিকে ধাবিত হইয়াছে ৷ দুই দল হইয়াছে, আনার্কিষ্ট ও সােশালিষ্ট; আনার্কিষ্ট বলে, —এই রাজনীতিক স্বাধীনতা মায়া, গবর্ণমেণ্ট বলিয়া বড় লােকের অত্যাচারের যন্ত্র স্থাপন করিয়া রাজনীতিক স্বাধীনতা রক্ষার অজুহাতে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা দলন করা এই মায়ার লক্ষণ, অতএব সৰ্ব্বপ্রকার গবর্ণমেন্ট উঠাইয়া দাও, প্রকৃত স্বাধীনতা স্থাপন কর ৷ গবর্ণমেন্টের অবর্তমানে কে স্বাধীনতা ও সাম্য রক্ষা করিবে, বলবানের অত্যাচার নিবারণ করিবে, এই আপত্তির উত্তরে আনার্কিষ্ট বলে, শিক্ষাবিস্তারে সম্পূর্ণ জ্ঞান ও ভ্রাতৃভাব বিস্তার কর, জ্ঞান ও ভ্ৰাতৃভাব স্বাধীনতা ও সাম্য রক্ষা করিবে, যদি কেহ ভ্ৰাতৃভাব উল্লঙ্ঘন করিয়া অত্যাচার করে, তাহাকে যে-সে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করিতে পারে ৷ সােশালিষ্ট এই কথা বলে না; সে বলে, গবর্ণমেন্ট থাকুক, গবর্ণমেন্টের প্রয়ােজন আছে, কিন্তু সমাজ ও শাসনতন্ত্র সম্পূর্ণ সাম্যের উপর প্রতিষ্ঠা করি, এখন যে সমাজের ও শাসনতন্ত্রের দোষ আছে, সেই সকল সংশােধিত হইবে, মানবজাতি সম্পূর্ণ সুখী, স্বাধীন ও ভ্রাতৃভাবাপন্ন হইবে ৷ সেইজন্য সােশালিষ্ট সমাজকে এক করিতে চায়; ব্যক্তিগত সম্পত্তি না থাকিয়া সমাজের সম্পত্তি যদি থাকে, – যেমন একান্নবর্তী পরিবারের সম্পত্তি কোন ব্যক্তির নহে, পরিবারের, পরিবারই দেহ, ব্যক্তি সে দেহের অঙ্গ, – তাহা হইলে সমাজে ভেদ থাকিবে না, সমাজ এক হইবে ৷
আনার্কিষ্টের ভুল, ভ্রাতৃভাব স্থাপিত হইবার পূর্বে গবর্ণমেন্ট বিনাশের চেষ্টা ৷ সম্পূর্ণ ভ্রাতৃভাব হইবার অনেক বিলম্ব আছে, ইতিমধ্যে শাসনতন্ত্র উঠানর নিশ্চিত ফল ঘাের অরাজকতায় পশুভাবের আধিপত্য ৷ রাজা সমাজের কেন্দ্র, শাসনতন্ত্র স্থাপনে মনুষ্য পশুভাব এড়াইতে সক্ষম ৷ যখন সম্পূর্ণ ভ্রাতৃভাব স্থাপিত হইবে, তখন ভগবান, কোনও পার্থিব প্রতিনিধি নিযুক্ত না করিয়া স্বয়ং পৃথিবীতে রাজ্য করিয়া সকলের হৃদয়ে সিংহাসন পাতিয়া বসিবেন, খৃষ্টানদের Reign of the Saints সাধুদের রাজ্য, আমাদের সত্যযুগ স্থাপিত হইবে ৷ মনুষ্যজাতি এত উন্নতি লাভ করে নাই যে এই অবস্থা শীঘ্র হইতে পারে, কেবল এই অবস্থার আংশিক উপলব্ধি সম্ভব ৷
সােশালিষ্টের ভুল ভ্রাতৃত্বের উপর সাম্য প্রতিষ্ঠিত না করিয়া সাম্যের উপর ভ্রাতৃত্বপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা ৷ সাম্যহীন ভ্রাতৃত্ব সম্ভব; ভ্রাতৃত্বহীন সাম্য টিকিতে পারে না, মতভেদে, কলহে, আধিপত্যের উদ্দাম লালসায় বিনষ্ট হইবে ৷ প্রথম সম্পূর্ণ ভ্রাতৃত্ব, পরে সম্পূর্ণ সাম্য ৷
ভ্রাতৃত্ব বাহিরের অবস্থা – ভ্রাতৃভাবে যদি থাকি, সকলের এক সম্পত্তি, এক হিত, এক চেষ্টা যদি থাকে, তাহাকেই ভ্রাতৃত্ব বলে ৷ বাহিরের অবস্থা অন্তরের ভাবে প্রতিষ্ঠিত ৷ ভ্রাতৃপ্রেমে ভ্রাতৃত্ব সজীব ও সত্য হয় ৷ সেই ভ্রাতৃপ্রেমেরও প্রতিষ্ঠা চাই ৷ আমরা এক মায়ের সন্তান, দেশভাই, এই ভাব একরাপ ভ্রাতৃপ্রেমের প্রতিষ্ঠা, কিন্তু সেই ভাব রাজনীতিক একতার বন্ধন হয়, তাহাতে সামাজিক একতা হয় না ৷ আরও গভীর স্থানে প্রবেশ করিতে হয়, যেমন নিজের মাকে অতিক্রম করিয়া সকলে দেশ-মাকে1 উপাসনা করি, সেইরূপ দেশকে অতিক্রম করিয়া জগজ্জননীকে উপলব্ধি করিতে হয় ৷ খণ্ড শক্তিকে অতিক্রম করিয়া সম্পূর্ণ শক্তিতে পৌঁছিতে হয় ৷ কিন্তু যেমন ভারতজননীর উপাসনায় শরীরের জননীকে অতিক্রম করিয়াও বিস্মৃত হই না, তেমনই জগজ্জননীর উপাসনায় ভারতজননীকে অতিক্রম করিয়াও বিস্মৃত হইব না ৷ তিনিও কালী, তিনিও মা ৷
ধৰ্ম্মই ভ্ৰাতৃভাবের প্রতিষ্ঠা ৷ সকল ধৰ্ম্ম এই কথা বলে যে, আমরা এক, ভেদ অজ্ঞানপ্রসূত, দ্বেষপ্রসূত, পাপপ্রসূত ৷ প্রেম সকল ধর্মের মূল শিক্ষা ৷ আমাদের ধৰ্ম্মও বলে, আমরা সকলে এক, ভেদবুদ্ধি অজ্ঞানের লক্ষণ, জ্ঞানী সকলকে সমান চক্ষে দেখিবেন, সকলের মধ্যে এক আত্মা, সমভাবে প্রতিষ্ঠিত এক নারায়ণ দর্শন করিবেন ৷ এই ভক্তিপূর্ণ সমতা হইতে বিশ্বপ্রেমের উৎপত্তি হয় ৷ কিন্তু এই জ্ঞান মানবজাতির পরম গন্তব্যস্থান, আমাদের শেষ অবস্থায় সর্বব্যাপী হইবে; ইতিমধ্যে তাহার আংশিক উপলব্ধি করিতে হয়, অন্তরে, বাহিরে, পরিবারে, সমাজে, দেশে, সৰ্ব্বভূতে ৷ মানবজাতি পরিবার, কুল, দেশ, সম্প্রদায় প্রভৃতি সৃষ্টি করিয়া শাস্ত্র বা নিয়মের বন্ধনে দৃঢ় করিয়া এই ভ্রাতৃত্বের স্থায়ী আধার গঠন করিতে চিরকাল প্রয়াসী ৷ এই পৰ্য্যন্ত সেই চেষ্টা বিফল হইয়াছে ৷ প্রতিষ্ঠা আছে, আধার আছে, কিন্তু ভ্রাতৃত্বের প্রাণরক্ষক অক্ষয় কোন শক্তি চাই যাহাতে সেই প্রতিষ্ঠা অক্ষুন্ন, সেই আধার চিরস্থায়ী বা নিত্য নূতন হইয়া থাকে ৷ ভগবান এখনও সেই শক্তি প্রকাশ করেন নাই ৷ তিনি রাম, কৃষ্ণ, চৈতন্য, রামকৃষ্ণরূপে অবতীর্ণ হইয়া মানবের কঠোর স্বার্থপূর্ণ হৃদয়ে প্রেমের উপযুক্ত পাত্র হইবার জন্য প্রস্তুত করিতেছেন ৷ কবে সেই দিন আসিবে যখন তিনি আবার অবতীর্ণ হইয়া চিরপ্রেমানন্দ মানবহৃদয়ে সঞ্চারিত ও স্থাপিত করিয়া পৃথিবীকে স্বর্গতুল্য করিবেন?
Home
Sri Aurobindo
Books
Bengali
Share your feedback. Help us improve. Or ask a question.