CWSA Set of 37 volumes
Writings in Bengali and Sanskrit Vol. 9 of CWSA 715 pages 2017 Edition
Bengali
 PDF   

Editions

ABOUT

All writings in Bengali and Sanskrit including brief works written for the newspaper 'Dharma' and 'Karakahini' - reminiscences of detention in Alipore Jail.

Writings in Bengali and Sanskrit

Sri Aurobindo symbol
Sri Aurobindo

All writings in Bengali and Sanskrit. Most of the pieces in Bengali were written by Sri Aurobindo in 1909 and 1910 for 'Dharma', a Calcutta weekly he edited at that time; the material consists chiefly of brief political, social and cultural works. His reminiscences of detention in Alipore Jail for one year ('Tales of Prison Life') are also included. There is also some correspondence with Bengali disciples living in his ashram. The Sanskrit works deal largely with philosophical and cultural themes. (This volume will be available both in the original languages and in a separate volume of English translations.)

The Complete Works of Sri Aurobindo (CWSA) Writings in Bengali and Sanskrit Vol. 9 715 pages 2017 Edition
Bengali
 PDF   

বাংলা রচনা




জাতীয়তা




কোরিয়া ও জাপান

স্বাধীনতার প্রবল আকাঙ্ক্ষা সমস্ত আসিয়াখণ্ড ব্যাপ্ত করিয়া অপূর্ব লীলা করিতেছে ৷ অঘটনঘটনপটীয়সী মহাশক্তির পক্ষে কিছুই অসাধ্য, কিছুই অসম্ভব নহে ৷ আমরা যাহাকে অসাধ্য বলি, মহাশক্তির প্রেরণায়, মহাশক্তির অভ্রান্ত উপায়-প্রয়ােগে তাহা সহজসাধ্য হয় ৷ আমরা যাহাকে অসম্ভব বলি, মহাশক্তির ইচ্ছায় তাহা সম্ভব ও অবশ্যম্ভাবী হয় ৷ দুর্বল পারস্য দুই প্রকাণ্ড আসুরিক শক্তির পেষণে পড়িয়াও সহসা উঠিয়াছে, অসংখ্য বিঘ্ন অতিক্রম করিয়া ধীর নিশ্চয় গতিতে বল সংগ্রহ করিতেছে ৷ মুমূর্ষ তুর্ক কোথা হইতে সঞ্জীবনী সুধা পান করিয়া নূতন বলে বলীয়ান, নূতন যৌবনাবেগে প্রফুল্ল, য়ুরােপের বিস্ময় ও ভয়ের কারণ হইতেছে ৷ প্রাচীন চীনের স্বেচ্ছাচারী রাজতন্ত্র আপনি আগ্রহ করিয়া প্রজাতন্ত্রে পরিণত হইতেছে ৷ আরবিস্তানে, তুর্কিস্তানে, ভারতে, যে সকল আসিয়া-বাসী পরাধীন, সে সকল দেশে দেশে স্বাধীনতার অদম্য আকাঙ্ক্ষা জাগিয়া দেশকে আলােড়িত করিতেছে ৷ আফগানিস্তানেও অশান্তির প্রথম চিহ্ন দেখা দিয়াছে ৷ একমাত্র ব্রহ্মদেশে ও শ্যামদেশে এই স্রোত এখনও বহিতে আরম্ভ করে নাই ৷ সমস্ত আসিয়াখও জীবিত, জাগ্রত, স্বাধীনতা সংগ্রামে জয়লিস্ ৷

দুঃখের কথা, এই উত্থানের মধ্যেই আসিয়াবাসীতে আসিয়াবাসীতে বিরােধ উপস্থিত ৷ তুর্কসাম্রাজ্যে যে অশান্তি বৰ্ত্তমান, তাহা সুলতান আবদুল হামিদের পূৰ্ব্বকৃত পাপের প্রায়শ্চিত্তরূপে নূতন প্রজাতন্ত্রকে ভােগ করিতে হইয়াছে; সেই প্রজাতন্ত্রের উদার, প্রতিভাশালী ও তীক্ষ্ণবুদ্ধি রাজনীতিবিদ নেতাগণ যে এই অশান্তি শীঘ্র প্রশমিত করিবেন, তাহাতে সন্দেহ নাই ৷ কিন্তু পূর্ব আসিয়ায় জাপানের সাম্রাজ্যলিপ্সায় ও বাণিজ্যবিস্তারের আকাঙ্ক্ষায় যে বিরােধ সৃষ্ট হইয়াছে, তাহার নির্বাণােপায় তত সহজ নহে ৷ সম্প্রতি জাপানের প্রধান ও পূজ্যতম নেতা, নব্য জাপানের স্রষ্টা, পাতা ও বিস্তারকর্তা হিরােবৃমি ইতাে পরাধীন কোরিয়াবাসীর হস্তে নিহত হইয়াছেন ৷ যে জাতি পরের স্বাধীনতায় হস্তাপণ করে, সে যে মহাপাপ ৷ করে, তাহাতে সন্দেহ নাই; কিন্তু সমস্ত আসিয়ার আবশ্যকীয় হিতকার্যের জন্য ভগবানের ইচ্ছায় জাপান কোরিয়ায় প্রবেশ করিয়াছে এবং যতদিন তাহার আগমনের উদ্দেশ্য সিদ্ধ না হয়, ততদিন কোরিয়ার সহস্র চেষ্টায় এই বন্ধন ঘুচিবে না ৷ সেই উদ্দেশ্য রুশের হস্ত হইতে উত্তর ও পূর্ব আসিয়ার পরিত্রাণ ৷ এই উদ্দেশ্য কোরিয়া দ্বারা সম্পন্ন হইতে পারে না, জাপানকেই ভগবান সেই উদ্দেশ্য সাধনের উপযােগী শক্তি, সামর্থ্য, জনবল, ধনবল ও উপকরণ দিয়াছেন ৷ অথচ কোরিয়াই উত্তর আসিয়ার কেল্লা – যে কোরিয়া অধিকার করিতে পারিবে, সে উত্তর আসিয়ার প্রভু হইয়া বিরাজ করিবে ৷ রুশ যদি কোরিয়ায় প্রবেশ করে – রুশ-জাপানের যুদ্ধের পূর্বে রুশ প্রবেশ করিয়াছিল – জাপানের স্বাধীনতা দুই দিনও স্থায়ী হইবে না ৷ এই অবস্থায় কোরিয়া অধিকার করা জাপানের আত্মরক্ষার আবশ্যক উপায়; ইহাকে পাপকাৰ্য্য বলা যায় না ৷ কেবল আত্মরক্ষা নহে, ইহা ঈশ্বরনির্দিষ্ট পণ্যকাৰ্য্যের আবশ্যক অঙ্গ ৷ যতদিন সাইবীরিয়া আবার আসিয়াবাসীর করতলগত না হয়, যতদিন কুর, অত্যাচারী ও পরস্বাপহারী রুশ-রাজ্য সেই প্রদেশে বিনষ্ট হয়, ততদিন আসিয়াখণ্ডের স্বাধীনতা কখন নিরাপদ হইতে পারে না ৷ সাইবীরিয়া জাপানের প্রাপ্য, জাপানই রুশকে সাইবীরিয়া হইতে হটাইতে পারে ৷ কোরিয়া অধিকার না করিলে খারবিন ও ব্লাডিবস্তক অধিকার করা যায় না ৷ অতএব ভগবানের ইচ্ছায় এবং তাহার উদ্দেশ্যসিদ্ধির জন্য কোরিয়ায় জাপানীর আবির্ভাব হইয়াছে, সেই উদ্দেশ্য বিফল হইবার নহে ৷ যতদিন ব্লডিবস্তক জাপানীর হস্তগত না হয়, ততদিন কোরিয়ার স্বাধীনতালিপ্সা ও চেষ্টা বিফল হইবে ৷

কিন্তু এই আবশ্যক কাৰ্যে জাপানীরা অনাবশ্যক কঠোরতা ও অত্যাচার প্রয়ােগ করিয়াছে – সে যে কতকটা কোরিয়াবাসীর দোষে, তাহা অস্বীকার করা যায় না; কিন্তু সম্পূর্ণ দোষ কোরিয়াবাসীর নহে ৷ নীচশ্রেণীর, নীচপ্রকৃতি জাপানীদের লােভ, জয়মত্ততা ও পাশবিক প্রবৃত্তি তাহার কারণ ৷ যখন এই অত্যাচারে কোরিয়া-বাসীর ক্রোধবহ্নি প্রজ্বলিত হইয়াছিল, তখন জাপানের নেতা হিরােবৃমি ইতাে স্বয়ং কোরিয়ায় গিয়া এই কঠিন ও বিপজ্জনক মহৎ কাৰ্য্যের ভার গ্রহণ করিলেন ৷ তিনি ব্যক্তিগত অত্যাচার বন্ধ করিলেন, কিন্তু স্বয়ং কোরিয়াবাসীর উপর আরও ভীষণ অত্যাচার আরম্ভ করিলেন ৷ কোরিয়ার স্বতন্ত্র জীবন, স্বতন্ত্র শিক্ষা, স্বতন্ত্র আচার ব্যবহার, স্বতন্ত্র অস্তিত্বের প্রত্যেক চিহ্ন দৃঢ় নির্দয় পেষণে চূর্ণ বিচূর্ণ করিয়া কোরিয়াকে জাপানের অন্তর্গত প্রদেশ করিয়া জাপানী শিক্ষা, জাপানী ৷ সভ্যতা, জাপানী আচার ব্যবহার, জাপানী কর্মদক্ষতা, কৰ্ম্মপ্রণালী ও শৃঙ্খলা, জাপানী মন্ত্র, জাপানী তন্ত্র, কোরিয়াবাসীর মনে প্রাণে শরীরে অঙ্কিত করিয়া দিবার চেষ্টা আরম্ভ করিলেন ৷ ইতাে সামান্য রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তাঁহার তুল্য মহাপুরুষ ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাজনীতি ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হন নাই ৷ নেপােলিয়নের পরে তাহাকেই জগতের শ্রেষ্ঠ কৰ্ম্মবীর বলা যায় ৷ এইরূপ ব্যক্তি কেন এই-রূপ নৃশংস উপায়ে এই কঠোর কাৰ্য্য সমাধান করিবার চেষ্টা করিলেন? কতক পরিমাণে অতিরিক্ত দেশহিতৈষিতায় ও সাম্রাজ্যলিপ্সায় ৷ ভগবানের বিভূতিও মানবশরীরে অবতরণ করিলে মানব স্বভাব নিজ নিৰ্ম্মল বুদ্ধির উপর আরােপ করিয়া জগতের কাৰ্য্য করেন ৷ ইতাে জাপানী, যেমন জাপানীর গুণ তেমনই জাপানীর দোষ তঁাহার শরীরে বিদ্যমান ছিল ৷ কোরিয়া যদি চিরকাল জাপান-সাম্রাজ্যের অন্তর্গত হইয়া থাকে, তাহা হইলে জাপানের গৌরব ও বলবৃদ্ধি হইবে ৷ এবং উত্তর আসিয়ায় তাহার প্রতিষ্ঠা ও বিস্তারের পথ নিষ্কণ্টক হইবে ৷ কিন্তু আর এক কারণ নির্ণয় করা যায় – স্বকৃত পাপের ফলে কোরিয়াবাসীকে এই লাঞ্ছনা ভােগ করিতে হইল ৷ যখন বিজাতীয় বিদেশীয় বিধর্মী রুশরাজ্য কোরিয়ায় তাহার সর্বনাশী বিস্তার আরম্ভ করিল, তখন কোরিয়াবাসীর স্বাধীনতালিঙ্গা জাগে নাই, তাহারা স্বাধীনতানাশের ভয়ে আশঙ্কিত হয় নাই, বরং চীনের বিদ্বেষে, জাপানের বিদ্বেষে রুশের সহিত সন্ধি ও সখ্যস্থাপন পূর্বক নিজের বিনাশ, জাপানের বিনাশ, চীনের বিনাশ, সমস্ত আসিয়াখণ্ডের স্বাধীনতার বিনাশে জানিয়া বুঝিয়া সাহায্য করিতেছিল ৷ এই পাপ সামান্য পাপ নহে; কতকাল কোরিয়াকে তাহার প্রায়শ্চিত্ত ভুগিতে হইবে, তাহার ইয়ত্তা নাই ৷ আবার যখন জাপান আসিয়ার রক্ষক ও পরিত্রাতা হইয়া কোরিয়ায় অবতরণ করিল, রুশকে উত্তর আসিয়ার কেল্লা হইতে অল্পদিনে বিদূরিত করিল, কোরিয়াবাসী তাহার শ্বেতবর্ণ বন্ধুর দুঃখে দুঃখী হইয়া জাপানের বিরুদ্ধাচরণ করিল ৷ শেষে যখন জাপানের অত্যাচারে অধীর হইল, তখনও স্বীয় মনুষ্যত্ব বলে উঠিবার চেষ্টা না করিয়া প্রথম রুশের সহিত যড়যন্ত্র, পরে তাহাতেও বিফলমনােরথ হইয়া য়ুরােপের দ্বারে কাদিবার জন্য পাশ্চাত্যদেশে প্রতিনিধি পাঠাইল ৷ কি আশ্চর্য্য প্রভেদ! শত্ৰুনিপীড়িত হইয়া জাপান ও চীন যখন য়ুরােপে প্রতিনিধিসঙ্ (Commission) পাঠাইল, সে কি উদ্দেশ্যে গেল? শত্রুর মধ্যে কি বিদ্যা, কি গুণ, কি প্রণালী ও শৃঙ্খলা আছে ৷ যাহার দ্বারা তাহারা অজেয় ও দুর্ধর্ষ পরাক্রমশালী হইয়াছে, তাহা জানিয়া ৷ স্বদেশে সেই বিদ্যা, গুণ, প্রণালী ও শৃঙ্খলা সংস্থাপন করিয়া স্বাধীনতা রক্ষা ও শত্রুর বিনাশের পথ উন্মুক্ত করিবার জন্য সেই প্রতিনিধিসঙ্ পাঠাইবার উদ্দেশ্য ৷ আর সেই অবস্থায় কোরিয়াবাসীর প্রতিনিধিসঙ্ কেন য়ুরােপে ছুটিল? অর্থলােলুপ, পরদেশলােলুপ পাশ্চাত্য জাতির নিকট কাদিয়া তাহাদিগকে জাপানের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করিবার জন্য সেই ভিক্ষুকযাত্রার উদ্দেশ্য ৷ মূখও জানে যে কৃতকাৰ্য্য হইলে জাপানের সর্বনাশ হইত, কিন্তু কোরিয়ার স্বাধীনতালাভ হইত না ৷ এই নীচতা, এই বারবার মহাপাতক আচরণের ফলে কোরিয়াবাসী এখন ক্ষিপ্তপ্রায় হইতেছে ৷ হিরােবৃমি ইতাে দেখিলেন যে কোরিয়াবাসী জাপানী হইতে স্বতন্ত্র থাকিলে এই দুর্বলের স্বাধীনতা-চেষ্টায় একদিন পাশ্চাত্য শত্রু জাপানের, আসিয়াখণ্ডের বিনাশ করিবার সুবিধালাভ করিবেনই, পলাশীর কাণ্ড পূৰ্ব আসিয়ায় পুনরভিনীত হইবে, সেই জন্য কোরিয়ার স্বাতন্ত্র বিনাশ করা আত্মরক্ষার শ্রেষ্ঠ উপায় ৷ একবার কৃতনিশ্চয় হইয়া কৰ্ম্মবীর আর নির্দিষ্ট পথ হইতে টলেন না ৷ ইতাে তাহার সমস্ত শক্তি, প্রতিভা, বিদ্যা প্রয়ােগ করিয়া নীরব নিষ্পেষণ দ্বারা কোরিয়ার স্বাতন্ত্রবিনাশে নিযুক্ত হইলেন ৷

পাপের প্রায়শ্চিত্ত হইবেই ৷ আবার পাপের মধ্যে দুই পাপ বিশেষ ঘৃণ্য ও অমার্জনীয়, ক্রুরতা ও নীচতা ৷ জাপানের ক্রুরতার ফলে নব্য জাপানের নির্মাতা, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কৰ্ম্মবীর ইতাে হত্যাকারীর গুলিতে নিহত হইয়াছেন ৷ কোরিয়ার নীচতায় তাহার স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্যবিনাশ অবশ্যম্ভাবী হইয়াছে ৷ এই হত্যায় কোরিয়ার স্বাধীনতা লাভের কোনও সুবিধা হইবে না ৷ জাপানী মৃত্যুভয় জানে না, দৃঢ়ভাবে ইতাের রাজনীতি শেষ পর্যন্ত অনুসরণ করিবে ৷ কোরিয়ার স্বাতন্ত্র বিনষ্ট হইবে ৷ ভারতবাসীর পক্ষে কোরিয়ার পরিণামে এক আবশ্যক শিক্ষালাভ হয় ৷ যে পাতকে কোরিয়া বিনাশােন্মুখ হইয়াছে, আমরা সহস্র বৎসর ধরিয়া সেই পাপ করিয়া আসিতেছি, তাহার ফলও ভুগিতেছি ৷ অথচ এখনও জ্ঞানােদয় হয় নাই ৷ পরের উপর নির্ভর করিলে কোনও জাতির কল্যাণ হইতে পারে না, ভ্রাতৃবিরােধে পরের আশ্রয় গ্রহণে নিজের বিনাশ, ভ্রাতার বিনাশ অবশ্যম্ভাবী ৷ এই নিয়মই জাতীয়তার প্রথম নিয়ম যে স্ববলে বলীয়ান হওয়া আবশ্যক ৷ ভিতরের বিরােধ ভিতরেই সমাধা করিব, যে এই নিয়ম লঙ্ঘন করে, সে হিন্দু হউক, মুসলমান হউক, নরমপন্থী হউক, চরমপন্থী হউক, তাহার পাপের প্রায়শ্চিত্ত হইবেই ৷









Let us co-create the website.

Share your feedback. Help us improve. Or ask a question.

Image Description
Connect for updates