CWSA Set of 37 volumes
Writings in Bengali and Sanskrit Vol. 9 of CWSA 715 pages 2017 Edition
Bengali
 PDF   

Editions

ABOUT

All writings in Bengali and Sanskrit including brief works written for the newspaper 'Dharma' and 'Karakahini' - reminiscences of detention in Alipore Jail.

Writings in Bengali and Sanskrit

Sri Aurobindo symbol
Sri Aurobindo

All writings in Bengali and Sanskrit. Most of the pieces in Bengali were written by Sri Aurobindo in 1909 and 1910 for 'Dharma', a Calcutta weekly he edited at that time; the material consists chiefly of brief political, social and cultural works. His reminiscences of detention in Alipore Jail for one year ('Tales of Prison Life') are also included. There is also some correspondence with Bengali disciples living in his ashram. The Sanskrit works deal largely with philosophical and cultural themes. (This volume will be available both in the original languages and in a separate volume of English translations.)

The Complete Works of Sri Aurobindo (CWSA) Writings in Bengali and Sanskrit Vol. 9 715 pages 2017 Edition
Bengali
 PDF   

বাংলা রচনা




পত্রাবলী




সাধনাবিষয়ক পত্রাবলী (“স” কে লিখিত)

স: মা, আজ আমি তােমাদের এত কাছে অনুভব করছি – তবুও কেন আমার সমস্ত সত্তায় তােমাদের অভাব বাজছে? আমার এই ভাব থাকবে কেমন করে মা?

উ: মায়ের উপর পূর্ণ শ্রদ্ধা রাখা – বাধাবিপত্তিতে বিচলিত না হয়ে স্থিরভাবে সম্মুখ হয়ে মায়ের শক্তির বলে অতিক্রম করা – এমন ভাব রাখলে তবেই এই অবস্থা স্থায়ী হয় শেষে ৷

7.2.34


স: আমার প্রধান প্রাণভূমিতে দেখি একটি অর্ধচন্দ্র – যেন রাহুগ্রস্ত ৷ তারপর দেখলাম সমস্ত স্তরটা ভরে গেল protectionএর আগুনে ৷ আগে ছিল সবুজ আলাে, এখন আগুন জ্বলে উঠার সঙ্গে সঙ্গে অর্ধচন্দ্রটি কেটে গিয়ে একটি প্রকাণ্ড সূৰ্য্য উদিত হল ৷ সমস্ত প্রাণভূমিটা সূর্য্যের অরুণ কিরণে ঝকঝক করছিল ৷

উ: প্রাণে যে আধ্যাত্মিকতা প্রকাশ হতে আরম্ভ করেছিল, সেটীই অর্ধচন্দ্র ৷ চন্দ্রগ্রহণ হয়েছিল ৷ সবুজ রঙের অর্থ খাঁটি প্রাণশক্তি ৷ সূর্যের উদয় = সত্যচেতনার প্রকাশ প্রাণভূমিতে ৷ 8.2.34


চন্দ্র = অধ্যাত্মের আলােক ৷ হস্তী = বলের প্রতীক ৷ সােনার হস্তী = সত্যচেতনার বল ৷

9.2.34


সাদা সচ্চিদানন্দের আলাে হতেও পারে – কিন্তু হলদে ত মনবুদ্ধির আলাে ৷

10.2.34


স: মা, ঘুমে জাগরণে আমি লক্ষ্য করছি “ম”এর নীচ প্রাণশক্তিগুলি এসে আমার প্রাণশক্তির সঙ্গে ভাব বিনিময় করতে চাচ্ছে ৷ আমাকে দুর্বল করে লক্ষ্যভ্রষ্ট করে স্নেহপরবশ করে তার দিকে টেনে নিতে চাচ্ছে ৷

উ: “ম’’র প্রাণের বাসনা এই শক্তিগুলাের রূপ ধারণ করে তােমার কাছে আসছে ৷ প্রত্যাখ্যান কর – শেষে আর আসবে না ৷

12.2.34


স: মা, সিঁড়িতে বসে আমি দেখলাম তুমি তােমার আসনে বসেছ ৷ একটি কালীমূৰ্ত্তি তােমার পা হতে উৎপন্ন হয়ে সাষ্টাঙ্গে তােমাকে প্রণাম করছে ৷

এইসব কি দেখি – এইসব অভিজ্ঞতার কোন সত্যতা আছে কি না!

উ: এই সব অভিজ্ঞতার মূল্য আছে, সত্য আছে – তাতে সাধনার উন্নতি হয় ৷ তবে এগুলাে যথেষ্ট নয় – চাই অনুভূতি, ভাগবত শান্তি, সমতা, পবিত্রতা, ঊর্ধের চৈতন্য, জ্ঞান শক্তি আনন্দের অবতরণ, প্রতিষ্ঠা – এটীই আসল ৷ 14.2.34


স: মা, আমি স্পষ্ট বােধ করছি যে আমাদের প্রাণশক্তি ও প্রাণপ্রকৃতির একটা চেতনা আছে ৷ আমার চালচলন, খাওয়াদাওয়া, পরশ্রীকাতরতা হিংসা লােভ মােহ অলসতা এগুলি সমস্তই প্রাণপ্রকৃতির এক একটি আবরণ ৷ আমরা অচেতন হয়ে আছি বলে এইগুলি আমাদের প্রকৃত আমিকে ঢেকে রেখেছে ৷ যখন ঊর্ধের জ্ঞানালােকের রশ্মিপাত আমাদের আধারে হয় তখন এই আবরণ-গুলি ক্ষুদ্র হয়ে যায় ও আমরা ওদের ত্যাগ করতে পারি ৷ আজ আমি আমার আধারের ভিতরের সমস্ত খেলাগুলি যেমন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, তেমনি বাহিরের জগতের মধ্যেও সেই খেলাটি দেখতে পাচ্ছি —খােলা চোখেই দেখছি, কোন কিছুই অজ্ঞান অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থল নয় ৷ ...সবকিছুর মধ্যেই তােমার স্বরূপ সৌন্দর্য দেখতে পাচ্ছি ৷

উ: হ্যা, এটী সত্য অনুভূতি – যে প্রাণপ্রকৃতির খেলা দেখেছ আবরণরূপে, সেইটী হচ্ছে মিথ্যার অবিদ্যার প্রাণপ্রকৃতির, সে আবরণের পিছনে রয়েছে সত্য প্রাণপ্রকৃতি যে ভাগবত শক্তির যন্ত্র হতে পারে ৷

17.2.34


স: মা, এত অল্পদিনে সেই শক্তি নামাতে পারা যায় না লিখেছ ৷ তুমি সেই শক্তিটি নামালে আমাদের অনেক দিক দিয়ে সুবিধে হত, না মা?

উ: ...শক্তি নামান চিরদিনের কর্ম, অল্পদিনের নয় ৷

24.2.34


[সাধিকার নানারকম সূক্ষ্ম দর্শন ও আঘ্রাণ হচ্ছে ৷ সুন্দর ফুলের গন্ধে মনপ্রাণ শীতল হয়ে যাচ্ছে ৷ বিভিন্ন রংয়ের জগৎ ও দেবদেবীর দেখা মিলছে ধ্যানের সময়ে ৷ সাধিকার খেদ যে ওইসব যেন একটা পাতলা আবরণের পিছনে ঢাকা, তাদের পূর্ণ রহস্য ও অর্থ বােঝা যায় না ৷]

এই সকল vision ও অভিজ্ঞতা সূক্ষ্ম দৃষ্টি ও সূক্ষ্ম ইন্দ্রিয়ের (যেমন গন্ধটী) — ঐ সূক্ষ্ম চৈতন্য হইতে স্থূল চৈতন্যের মধ্যে এলে – ওগুলাে থাকে না, মনেও প্রায় সব থাকে না ৷ আর অন্য জগতের হাবভাবগুলাে শুধু দৃষ্টির দ্বারা স্পষ্ট দেখা ৷ যায় না ৷ আবরণ ত থাকেই – যারা সমাধিস্থ হয়ে সেখানে যেতে পারে, তারাই দেখে, কিন্তু তাদেরও সব মনে থাকে না ৷

27.2.34


[খাওয়া কমানাে নিষেধ করাতে সাধিকা লেখে – খাওয়া ত নিম্নপ্রকৃতির জন্য যা মায়ার অবিদ্যায় আচ্ছন্ন ৷ সুতরাং তাকে এত বেশী খেতে দেবার কি সার্থকতা আছে?]

আহার ত দেহধারণের জন্যে ও দেহের বলপুষ্টির জন্যে ৷ এর মধ্যে অবিদ্যার মায়ার কথা ঢুকে এল কোত্থেকে?

27.2.34


স: মা, যে সব অভিজ্ঞতাগুলি লিখি, যদি সেগুলাে অসত্য হয় বা কোন মূল্যই না থাকে তবু শুধু তােমাকে লিখে কেন কষ্ট দেব?

উ: অভিজ্ঞতা অসত্য নয়, এগুলাের স্থান আছে – কিন্তু এখন প্রয়ােজন বেশী আসল অনুভূতির – যার দ্বারা প্রকৃতির রূপান্তর হয় ৷ 28.2.34


স: মা, আজ চারিদিকে আকাশে বাতাসে একটী গভীর ব্যথা কেন বিরাজ করছে? শুধু তােমার জন্যই এই ব্যথা ৷ সমস্ত সত্তা সমস্ত প্রকৃতি গভীরভাবে তােমাকে পেতে চাচ্ছে, কিন্তু তাদের অন্ধতা অজ্ঞানতা ও মলিনতার দরুন তােমাকে পেতে পারছে না এবং ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে কোন আশা দেখতে পাচ্ছে না ৷ তাই এই দুর্বিষহ জীবন ধারণ করা বৃথা বলে হা-হুতাশ করছে, কাদছে, যেন দাবানলে জ্বলে যাচ্ছে ৷

উ: এই সব হয় প্রাণপ্রকৃতির বিলাপ – এতে সাধনার সাহায্য হয় না, বাধাই সৃষ্ট হয় ৷ ভগবানে শান্ত সমাহিত শ্রদ্ধা, দৃঢ় নিশ্চয়, সহিষ্ণুতা সাধকের প্রধান সহায়, দুঃখ ও নিরাশা যােগপথে এগিয়ে দেয় না ৷

1.3.34


অভিজ্ঞতা বাজে নয় – তাদের স্থান আছে, মানে অনুভূতি prepare করে, আধারকে খুলে দেবার সাহায্য করে, অন্য জগতের, নানা স্তরের জ্ঞান দেয় ৷ আসল অনুভূতি হয় ভাগবত শান্তি, সমতা, আলাে, জ্ঞান, পবিত্রতা, বিশালতা, ভাগবত সান্নিধ্য, আত্মার উপলব্ধি, ভাগবত আনন্দ, বিশ্বচৈতন্যের উপলব্ধি (যাতে অহংকার নষ্ট হয়), নির্মল বাসনাশূন্য ভাগবত প্রেম, সৰ্ব্বত্র ভাগবত দর্শন, ইত্যাদির সম্যক অনুভূতি, প্রতিষ্ঠা ৷ এই সকল অনুভূতির প্রথম সােপান হচ্ছে উপরের শান্তির অবতরণ আর সমস্ত আধারে ও আধারের চারিদিকে দৃঢ় ৷ প্রতিষ্ঠা ৷

1.3.34


স: মা, অসুখটা আবার কেন আমাকে এমনি করে আক্রমণ করছে ৷ শরীরের মধ্যে হঠাৎ এমন ব্যথা করতে লাগল যে হাড়গুলাে যেন চুরমার হয়ে পড়ে যাচ্ছে ৷ হাঁটতে বসতে কখন যে কোনখানে ব্যথাটি আসবে তার ঠিকানা নেই ৷ কম খেয়ে থাকছি – শরীর পাতলা থাকলে আক্রমণ কম হবে এবং সহ্য করতে পারব এই ভেবে কিন্তু তাতে তেমন কিছু তফাত হয় না ৷

উ: এসব ব্যথা স্নায়ুর অসুখ ৷ কম খেলে কমে না ৷ মনের প্রাণের দেহের শান্তিই ইহার শ্রেষ্ঠ ওষুধ ৷

2.3.34


গাছের প্রাণ আছে, চৈতন্য আছে – গাছগুলির সঙ্গে ভাবের বিনিময় সহজে হয় ৷

3.3.34


স: মা, ঊর্ধ্বের থেকে পাতলা জলের মত কি নামে?

উ: উদ্ধৃ চৈতন্যের স্রোত যখন নামতে আরম্ভ করে, সেইরকম পাতলা জলের মত (current) বােধ হয় ৷

3.3.34


এইরূপ অনুভূতি হয় – শরীরে মায়ের প্রবেশ – কিন্তু তার ফলস্বরূপ যে চেতনার রূপান্তর সে দীর্ঘ সাধনা সাপেক্ষ – হঠাৎ হয় না ৷

6.3.34


শরীরে মা ত আছেনই – গূঢ় চেতনায় – কিন্তু যতদিন বাহির চেতনায় অবিদ্যার ছাপ থাকে, অবিদ্যার ফলগুলাে হঠাৎ এক মুহূর্তে দূরীভূত হয় না ৷

6.3.34


বাসনা দাবী খেয়াল কল্পনার জোর যত দিন থাকে প্রাণের আধিপত্য ত থাকেই ৷ এই সব হচ্ছে প্রাণের খােরাক, খােরাক দিলে সে প্রকাণ্ড ও বলবান ৷ হবে না কেন?

8.3.34


যা দেখেছ তা ঠিক ৷ উপরের শক্তি নেমে সত্য চেতনা আস্তে আস্তে সত্য ৷ চেতনা স্থাপন করে ৷ মানুষের প্রকৃতি কিন্তু তা চায় না – অন্য চিন্তা নিয়ে থাকে, অবহেলা করে, বিরােধও করে – তা না হলে শীঘ্র হয়ে যেত ৷

10.3.34


স: মা, একটি নূতন অবস্থা আমার মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে ৷ মানুষের সঙ্গে কথা বলছি, মিশছি সে শুধু প্রয়ােজনবশতঃ – তাতে প্রাণের কোন টান নেই, মানুষের আমােদপ্রমােদেও নিস্তব্ধতার মধ্যে রয়েছি ৷ সারাদিন একটি নীল আলাের মধ্যে যেন তুমিই বাস করছ, ঊর্ধের চেতনা নেমে সমস্ত সত্তাকে কাচের মত স্বচ্ছ ও বিশেষ সচেতন করে রেখেছে ৷

উ: ইহা যদি হয়, তাহা খুব ভাল – সৰ্ব্বদা অনাসক্ত হয়ে লােকের সঙ্গে মিশতে হয় ৷

10.3.34


স: আজ প্রণামের সময় ঊৰ্ধজগৎ হতে একটি প্রগাঢ় শান্তিপ্রবাহ নেমে এল – তখন আমার সব অসুখ কোথায় গেল আমি টেরও পেলাম না ৷

উ: এইরূপ শান্তির অবতরণেই সব চেয়ে প্রয়ােজনীয় অনুভূতি যতদিন সমস্ত আধার শান্ত সমাহিত না হয় ৷

13.3.34


স: মা, আজ সকাল হতে প্রচণ্ড পেটব্যথা হচ্ছিল ৷ প্রণাম হলে এক মনে তােমাকে ডাকছিলাম ও সমস্ত চেতনা ও সত্তাকে ঊর্ধের দিকে খুলে রেখেছিলাম ৷ এমন সময় বিরাট বিশ্বব্যাপক একটি ঢেউ নেমে এল ঊর্ধের শান্তির ৷ আমার অনুভব হল যে এই শন্তিপ্রবাহ নাভির নীচে নামতে পারে নি ৷ আমি আবার সেই অংশটুকু ঊর্ধের শান্তির প্রবাহের দিকে খুলে ধরলাম ৷ কিছুক্ষণ অসহ্য যন্ত্রণা হল – তারপর কিন্তু সে বেশীক্ষণ থাকতে পারল না ৷

উ: অসুখ সারাবার শ্রেষ্ঠ উপায় এই, তবে সব সময় দেহের চেতনা খুলতে চায় না আর শীঘ্র পূর্ব অভ্যাসের বশে পড়ে যায় ৷

15.3.34


স: মা, তােমার দিব্য চেতনা ও দিব্য দৃষ্টিশক্তি যখন আমার আধারে নেমে আসে তখন আধ্যাত্মিক পবিত্রতার স্রোতে সমস্ত অন্ধকার গ্লানি মলিনতা ব্যাধি দূরীভূত হয়ে স্বচ্ছ পবিত্র হয়ে যায় ৷ কিন্তু অধিকক্ষণ কেন এই অবস্থা থাকে না?

উ: অল্পক্ষণ হলেও মস্ত লাভ ৷ প্রথম অল্পক্ষণই থাকে – তার পরে আস্তে আস্তে বেড়ে যায় ৷

20.3.34


স: মা, আজ আমার মন কারুর সংস্পর্শ পৰ্য্যন্ত পছন্দ করছে না – মানুষ, জিনিষ যে কোন কিছু আমার কাছে বােঝাস্বরূপ মনে হচ্ছে ৷ তােমার চিন্তা ব্যতীত অন্য চিন্তা করতে কেমন ঘাড় ব্যথা করছে, মাথা ধরছে ৷ নেহাত প্রয়ােজনীয় কথা বলতেও আমি কেমন হাঁপিয়ে উঠছি আর দুর্বল হয়ে পড়ছি ৷

উ: এতদূর sensitive হওয়া ভাল নয় ৷

20.3.34


সােধিকার বক্তব্য যে এখন আর ঊর্ধের অভিজ্ঞতা হচ্ছে না, আধারের মধ্যেই নানা অনুভূতি হচ্ছে ৷]

সব সময়ে ঊর্ধেই ঊর্ধের অভিজ্ঞতা পেয়ে আধারে অভিজ্ঞতা না পেলে আধারের রূপান্তর হবে কেমন করে?

22.3.34


স: মা, ধ্যানে দেখলাম আমার মাথার উপরে সব সময় একটা উজ্জ্বল সাদা জ্যোতি আছে ৷ স্থূল মন যখন স্কুলের চিন্তা করে, আধারের স্থূল অংশের দ্বার বন্ধ থাকে – তাই ঊর্ধের জ্যোতি ও শান্তি নামতে পারে না ৷ যখনই আমি ঊর্ধের দিকে তাকাই তখনই আমার জড় সত্তার স্থল অংশে পৰ্য্যন্ত ঊর্ধের শান্তি শক্তি পবিত্রতা নেমে সমস্ত আবর্জনা কেটে দেয় ৷

উ: ইহা তা প্রায়ই হয় ৷ যখন সমস্ত আধার খুলে যায় তখন আর এইরকম হয় না – স্থূল মন স্কুলের চিন্তা কল্লেও সেই সময় ঊর্ধের জ্যোতি ও শান্তি থাকে ৷

22.3.34


স: আমি আজ বুঝছি যে আমার একটি জ্যোতির্ময় সত্তা আছে ৷ কিন্তু কোন শক্তি তাকে ঢেকে রেখেছে ৷ আজ দেখলাম তােমার পিয়ানাে বাজনার সমস্ত সুরগুলি যেন জ্ঞানজ্যোতির এক একটি শিখা ৷ এই শিখাগুলি জড়স্তরে নেমে এসে সেই অজ্ঞান তামসপূর্ণ আবর্জনা কেটে দিচ্ছে ৷

উ: জ্যোতির্ময় আত্মা সকলেরই আছে – সকলেরই অজ্ঞানের বন্ধনও আছে ৷ সত্যের শক্তি সে বন্ধনগুলাে খুলে দেয় ৷ মা বাজাবার সময় সত্যকে, সে সত্যের শক্তিকে নামিয়ে আনে ৷

22.3.34

সবুজ ত emotionএর আলাের রং ৷

22.3.34


স: মা, সাদা ফ্যাকাসে নীল বর্ণের একটি শক্তিপ্রবাহ নামছে ৷ চেতনার স্বচ্ছ জলের মত একটি স্রোত নেমে আমার বক্র শরীরটাকে সােজা করে দিচ্ছে, দুৰ্বল স্নায়ুকে সতেজ সবল নীরােগ নিস্তব্ধ করে দিচ্ছে ৷

উ: সে ত উদ্ধৃ চৈতন্যের প্রবাহ যাতে শেষে সব রূপান্তরিত হতে পারে ৷

24.3.34


দুই বিপরীত প্রভাবের দ্বন্দ্ব – সত্য শক্তির প্রভাব যখন দেহকে স্পর্শ করে তখন সব সুস্থ হয়ে যায় – অবিদ্যার প্রভাবে রােগ ব্যথা স্নায়বিক বিকার ফিরে আসে ৷

24.3.34


এসব কথা খুব স্পষ্ট, বুঝতে পার না কেন? আত্মা অনশ্বর অনন্ত, দুঃখ ব্যথা সব অবিদ্যার ফল, আত্মার এমনকি আধারের প্রকৃত ধৰ্ম্ম নয় ৷ উদ্ধৃ চৈতন্য যাকে বলি, সে আত্মারই ধৰ্ম্ম – সে উচ্চ ধৰ্ম্ম শরীরেও নামাতে হয়, নামাতে পারলে রােগ দুঃখ ব্যথা কষ্ট আর থাকিবে না ৷

26.3.34


কোন নিয়ম পালন করে হয় না ৷ স্থির শান্ত দৃঢ়সঙ্কল্প হয়ে প্রত্যাখ্যান করলে অল্পে অল্পে অবিদ্যার প্রভাব চলে যায় ৷ উতলা হলে (বিব্রত হয়ে অন্ধ হয়ে হতাশ হয়ে) অবিদ্যাশক্তি আরও জোর পেয়ে আক্রমণ করবার সাহস পায় ৷

27.3.34


স: মা, ধ্যান করলে আমার সমস্ত চেতনা উর্ধ্বে উঠে যায় ৷ আমি এবং আমার বলে তখন কিছু থাকে না ৷ কেবল ক্ষুদ্র একটি চেতনা আধারে বসে বসে ঘরকন্নার, বাহিরের চিন্তা করতে থাকে ৷ ঊৰ্ধ চেতনাকে নামিয়ে এনে এই ক্ষুদ্র চেতনাটিকে, যা এখনও তােমার কাছ হতে পৃথক রয়ে গেছে, পরিবর্তন করতে পেরে দুঃখ পাই ৷

উ: এই রকম দ্বিধা হওয়া সাধনায় হয়, তার প্রয়ােজন আছে – তারপর নিম্নের চেতনায় উপরের ভাব নামান বেশী সহজ হয়ে যায় ৷ 29.3.34


সাধনা করতে করতে এমন অবস্থা হয় যে যেন স্বতন্ত্র দুটী সত্তা আছে, এক ভিতরের জিনিষ নিয়ে থাকে, শান্ত বিশুদ্ধ ভাগবত সত্যের দৃষ্টি ও অনুভূতির মধ্যে থাকে অথবা তার সঙ্গে সংযুক্ত, আর একটী বাহিরের খুঁটিনাটি নিয়ে ব্যস্ত ৷ তার পরে দুটীর একটা ভাগবত ঐক্য স্থাপন করা হয় – উদ্ধৃজগৎ ও বহির্জগৎ এক হয়ে যায় ৷

31.3.34


স: মা, আমি সমস্ত জগতের মধ্যে তােমার মহান আনন্দপূর্ণ প্রেমকল্লোলিত একটি ধ্বনি শুনতে পাচ্ছি আর তােমার অমৃতময় জ্ঞানােজ্জ্বল হাস্যময় আনন্দ-সমীরণ জগতের সমস্ত দৈন্য, ব্যথা অপসারিত করছে এবং পিপাসিত শুষ্ক জগৎ আজ সতেজ হয়ে উঠছে ৷ – আজ ধ্যান করিনি, খালি এইসব কতগুলাে কি দেখতে পাচ্ছি ৷

উ: সেই রকম অনুভূতি প্রাণস্তরে ঘটে – মন্দ নয়, তবে একমাত্র তাই নিয়ে থাকা যায় না ৷

31.3.34


এই সব প্রাণের বৃথা বিলাপকে উঠতে দিলে কেমন করে অনুভূতি আসবে, এলেও কি করে টিকবে বা সফল হবে – এই প্রাণের কান্না শুধু অন্তরায় হয়ে যায় ৷ এই যে খুব ভাল অভিজ্ঞতা এল, আনন্দিত না হয়ে বিলাপ ও কান্না কেন?

5.4.34


এই সব বিলাপ ও হাহুতাশের কথা যােগপন্থায় অগ্রসর হবার বাধা আর কিছু নয় – শুধু প্রাণের একরকম তামসিক খেলা ৷ এই সব ছেড়ে দিয়ে শান্তভাবে সাধনা কল্লে শীঘ্র উন্নতি হয় ৷

5.4.34


মানুষ কি করে না করে সে কথা স্বতন্ত্র – সাধকের কি করা উচিত, কি করে সাধনার উন্নতি হয়, ইহাই হচ্ছে আসল কথা ৷

6.4.34


স: ভাবাবেগের স্তর সামনের দিকে, চৈত্যপুরুষের স্তর পিছনের দিকে – তার মাঝখানে একটা পার্টিশন দেওয়া আছে ৷ আমি দেখেছিলাম কুণ্ডলিনী চৈত্যের স্তর হতে বারবার ভাবাবেগের স্তরে যাতায়াত করে আর উর্ধের সত্যের প্রভাব নামিয়ে আনে ৷ এ দুটি স্তরের মাঝখানের পার্টিশনটাকে কুণ্ডলিনী তুলে দিতে চাচ্ছে ৷

উ: Emotional being ও psychicএর মধ্যে যে আবরণ আছে সেইটী উঠিয়ে দেবার জন্য এই আয়ােজন —তা হলে vital emotionsএর বদলে psychic emotions হৃদয়ে বিরাজ করবে ৷

6.4.34


স: আমি স্বপ্নে দেখলাম “ম” মরে গেছে ৷

উ: প্রাণস্তরের স্বপ্নের ও বাস্তব স্থূল ঘটনার সঙ্গে কোন সম্পর্ক নাই ৷ ঐরূপ স্বপ্ন কতবার আসে, তার মূল্য নাই ৷

6.4.34


স: আমার মাথার উপরে একটি পদ্ম দেখলাম – পদ্মটির উপরের side সূৰ্য্যরশ্মির ন্যায় আর নীচের side সাদাটে নীল ৷

উ: চক্রের উপরের side পায় Overmind ও Intuitionএর আলাে, সােনার আলাে বা সূৰ্য্যরশ্মি – নীচের side Higher Mind ও Spiritual Mindএর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাদের আলাে নীল ও সাদা ৷

7.4.34


Psychic being ভগবানের অংশ, সত্যের দিকে ভগবানের দিকে তার টান, আর সে টান বাসনা শুন্য, দাবী নাই, নীচ কামনা নাই ৷Psychic emotion পবিত্ৰ নিৰ্ম্মল – emotional vitalএর অংশ, বাসনা, অহংকার, দাবী, অভিমান ইত্যাদি যথেষ্ট আছে, ভগবানকেও চায় নিজের অহংকার বাসনা চরিতার্থ করবার জন্যে – তবে psychicএর স্পর্শে শুদ্ধ পবিত্র হতে পারে ৷

7.4.34


উপরের চেতনা নানা রূপে নামে – বায়ুর মত, বৃষ্টির মত, ঢেউর মত, স্রোত বা সমুদ্রের মত – যেমন শক্তির দরকার বা সুবিধে ৷

7.4.34


আমি বলেছি এ সব কান্নাকাটি সাধারণ মানুষের হতে পারে, – সাধকের যােগ্য নয়, সাধনায় অন্তরায় হয়ে যায় ৷

7.4.34


স: আমি প্রাণের একটা গতিবেগ দেখছি, উহাই হচ্ছে ভাবাবেগ – সে সব সময় কতকগুলি প্রাণিক ভাবপ্রবণতা, অহঙ্কারাত্মক খেলা ইত্যাদি টেনে আনে ৷ সে তার স্বীয় অহংকারের মধ্যে তােমাকে ডুবিয়ে রাখতে চায় আর নীচ বাসনার দাবী নিয়ে তােমাকে চায় ও টানে ৷

উ: তাই যদি বােঝ, সে অহঙ্কারাত্মক ভাবাবেগকে ত্যাগ কর ৷ যা শুদ্ধ, যা psychic, সেই emotion মাত্র সাধনার সাহায্য করে ৷

10.4.34


স: ...তাদের প্রােণের চাঞ্চল্য, অহংকারের গতি ও জবরদস্তি] ত্যাগ করার ক্ষমতা আমার নেই ৷ একদিকে বাহির করে দিলে নানা অছিলায় বা রূপ ধরে অন্যদিকে আমার ভেতরে ঢােকে ৷ সে যে আমার উপর প্রভুত্ব করে বেড়াচ্ছে ৷

উ: তামসিক দেহচৈতন্য, রাজসিক প্রাণের অজুহাত ৷ তারা সম্মতি দেয় বলে এই প্রভুত্ব – নচেৎ তারা সায় না দিলে সে প্রভুত্ব থাকতে পারে?

12.4.34


মরে যাওয়ায় কোনও মীমাংসা হয় না ৷ এই জন্মে সে সব বাধাকে নষ্ট না কল্লে, তুমি কি মনে কর আর জন্মে সেগুলাে তােমাকে ছেড়ে দেবে? এই জন্মেই পরিষ্কার করতে হয় ৷

12.4.34


[সাধিকার মনে হয়েছে শ্রীমা তাকে ভালবাসেন না ৷ অস্থির হয়ে সে আশ্রম ছেড়ে, মাকে ছেড়ে চলে যেতে চায়, আবার থাকতেও চায় ৷ সে দিশেহারা ৷]

এই সব শুধু অশান্ত বাসনাপূর্ণ প্রাণের বিদ্রোহ – তাহাকে সায় দাও কেন? তুমি vitalকে চরিতার্থ করতে এখানে আস নি ৷ দৃঢ়ভাবে vitalকে সংযত করে যােগসাধনাকেই জীবনের এক উদ্দেশ্য করে দাও – তা হলে এই সব অবস্থা আসবে না ৷

13.4.34


নিজেকে সংযত করে রেখে লােকের সঙ্গে মিশলে চেতনা নেমে পড়ে না ৷

13.4.34


উপরের চৈতন্যের স্পর্শ – সেই উপরের চৈতন্যের ভাব, শান্তি, জ্ঞান, গভীরতার অবতরণই যােগসিদ্ধির উপায় ৷ প্রাণকে সংযত করে সেই শক্তিকেই মনপ্রাণদেহকে অধিকার করতে দিতে হবে ৷

14.4.34


স: কুণ্ডলিনী জেগে উঠে ঊর্ধের দিকে উঠে যাচ্ছে – কিন্তু মা কুণ্ডলিনীর লেজটি একটি সবুজ রঙের ময়ূরে পরিণত হয়েছে ৷

উ: সবুজ রঙ emotional powerএর লক্ষণ ৷ ময়ূর বিজয়ের চিহ্ন ৷ 14.4.34


[সাধিকা শ্রীঅরবিন্দের ঘরে কাজ চায় ৷ আগে একবার কাজ চেয়ে পায় নি ৷ এখন শ্রীঅরবিন্দের ঘরে কাজ করত এমন একজন চলে যাওয়াতে, আবার সে তার পুরনাে ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে ৷]

আমার কথা ভুল বুঝেছ? আমি বলেছিলাম যারা আছে তাদের সরিয়ে দিব কেন নূতন লােকের জন্য? তারপর যদি একজন চলে যায় তুমি তার কাজ পাবে কেন – অনেক আছে সাধক সাধিকারা যারা সে কাজ চেয়েছিল, মা দেন নাই, তােমার অনেক আগে চেয়েছিল, এমনকি দশ বছর আগে ৷ তাদের সকলকে (কুড়িজনের কম নয়) ছাড়িয়ে তুমি পাবে কেন? এটী যে তােমার অহংকারের দাবী, ইহা কি স্পষ্ট নয়? প্রাণের দাবীকে শােন না ৷ শান্ত অহংকারশূন্য হয়ে নিজেকে তৈয়ারি কর, যােগপথে উন্নতিকে একমাত্র উদ্দেশ্য করে চল, ইহাই হচ্ছে সে উন্নতির শ্রেষ্ঠ উপায় ৷

14.4.34


ঊর্ধের অনুভূতি চাই, নিম্ন প্রকৃত্রি রূপান্তরও চাই ৷ হর্ষ বিষাদ হতাশা নিরানন্দ সাধারণ প্রাণের খেলা, উন্নতির অন্তরায় – এ সব অতিক্রম করে ঊর্ধ্বের বিশাল ঐক্য ও সমতা প্রাণে ও সৰ্ব্বত্র নামাতে হয় ৷

17.4.34


স: মা, এখনও মাঝে মাঝে আমার পড়া ছেড়ে দিতে ইচ্ছে হয় ৷ মনে হয় আমি ভগবানের জন্যেই এখানে এসেছি – এতে লেখাপড়া কেন? আবার মনে হয় আমার মনের ভাবটা সােজাসুজি তােমাদের জানবার উপযুক্ত হওয়ারও ত দরকার আছে ৷

উ: ইহা মনের ও প্রাণের চঞ্চলতা – যা আরম্ভ করেছ স্থিরভাবে চালাতে হয় যতদিন উদ্দেশ্য সিদ্ধ না হয় ৷

17.4.34


স: শেষরাত্রে দেখলাম, আমি একটা পাতলা সাদাটে নীল আলাের মধ্যে ডুবে যাচ্ছি, শুধু আনন্দ ও তােমাদের ভালবাসায় আমার এই দেহটি ভরে গিয়েছে, কোথাও আর এতটুকু নিরানন্দ অপবিত্রতা নাই ৷

উ: এই অনুভূতিগুলি ভাল – হতাশার মধ্যে বাস না করে, আনন্দে বাস করা সাধনার সত্য অবস্থা ৷

19.4.34


এইরূপ শূন্যতা সাধকের আসে যখন ঊর্ধের চেতনা নেমে মন প্রাণকে অধিকার করবার জন্য তৈরি করছে – আত্মার অনুভূতিও যখন হয়, তার প্রথম স্পর্শে একটী বিশাল শান্ত শূন্যতাই হয়, তারপর সে শূন্যতার মধ্যে একটী বিশাল গাঢ় শান্তি নীরবতা, স্থির নিশ্চল আনন্দ নামে ৷

21.4.34


স: আজ দু-তিন দিন দেখছি কতকগুলি বিরােধী সৈন্যের দল আমাকে আক্রমণ করিতে আসিতেছে, কতকগুলি আবর্জনাময় পাহাড় অন্ধকারের মত হইয়া আসিয়া আমাকে ঘিরিয়া চাপিয়া রাখিতে চাহিতেছে ৷ আমার ভিতর হইতে একটি শক্তি সামনের দিকে আসিয়া এবং মাথার উপরে উঠিয়া গিয়া সমস্ত বিরােধী সৈন্যের পথরােধ করিতেছে, যুদ্ধ করিয়া মিথ্যাশক্তির গতিরােধ করিতেছে ৷

এই রকম অস্বাভাবিক ধরনের বীরত্ব কেন দেখিতেছি, মা?

উ: যদি এই অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করা যায়, তাহলে বুঝতে হবে, প্রাণস্তরে যেখানে বিরােধী শক্তির আক্রমণ সেখানে ভাগবত প্রাণশক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৷ যে আপনি সেই আক্রমণকে ব্যর্থ করে দেয় ৷

24.4.34


স: ধ্যান করতে আরম্ভ করলে একটি শক্তি এত জোরের সঙ্গে নেমে আসে আর এত চাপ পড়ে যে আমি কোন চিন্তা করতে এবং এদিকওদিক তাকাতে পারি না ৷ শান্তভাবে যথাসাধ্য সেই শক্তির কাছে ধরি, পরে সমস্ত প্রকৃতি নিশ্চল শান্ত স্তব্ধ হয়ে যায় ৷ একটা নীরব আনন্দে আমাকে ডুবিয়ে রাখে ৷

উ: এই ভাল উৰ্ধ চেতনার (সে চেতনার শান্তি শক্তির) অবতরণ – নিজেকে আধারের মধ্যে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করবার প্রথম আয়ােজন ৷

26.4.34


স: মা, আমার মাথা খালি হয়ে গিয়েছে, চিন্তা করবার শক্তিটা কোথায় অন্তর্হিত হয়ে গিয়েছে বলে বােধ হচ্ছে ৷ কিন্তু আমার মাথাতে আর একটি পুরুষ জেগে উঠেছে যে এই জগতের এবং অন্তর্জগতের ছােটবড় যা কিছুই আমার চেতনার মধ্যে আসছে তাদেরকে বিচার করে বেছে সত্যটাকে নিচ্ছে এবং মিথ্যাটাকে নিঃশেষে তাড়িয়ে দিচ্ছে ৷ আগে মিথ্যার খেলাকে ত্যাগ করতে আমার অনেক কষ্ট হত ৷ এখন সেই জাগ্রত চৈতন্যময় পুরুষের সাহায্যে ঐ সকল আক্রমণকে প্রত্যাখ্যান করা আমার পক্ষে সহজ হয়ে উঠেছে ৷

উ: এই পুরুষ higher mental being — ঊর্ধচেতনার অবতরণে সে জাগ্রত হয়ে যায় – তার জ্ঞান সাধারণ মনের নয়, উদ্ধৃমনের জ্ঞান ৷

26.4.34


প্রথম চেতনা শূন্য ও বিশাল চাই – তার মধ্যে উপরের আলাে শক্তি ইত্যাদি স্থায়ীভাবে স্থান পেতে পারে – খালি না হলে পুরােনাে movementsই খেলে, উপরের জিনিষ সুবিধে মত স্থান পায় না ৷

5.5.34


চিন্তাশূন্য বিশালতার অবস্থাকে প্রাণ ভালবাসে না ৷ সে চায় গতি, যে রকম গতিই হৌক, জ্ঞানের বা অজ্ঞানের ৷ কোনও অচঞ্চল স্থির অবস্থা তার পক্ষে নীরস লাগে ৷

8.5.34


সত্তার কোন অংশ ত্যাগ করা যায় না, রূপান্তরিত করতে হয় ৷ প্রকৃতির কোন বিশেষ গতি ত্যাগ করা যায়, সত্তার অংশগুলাে স্থায়ী ৷

8.5.34


স: এখনও আমি সেই শূন্য অবস্থায় বাস করছি ৷ ঊর্ধের উজ্জ্বল প্রভাব নামছে ৷ আধারটি শূন্যের অতল তলে যাচ্ছে – সমস্ত জগৎ স্বচ্ছ নির্মল নিরাকার ৷ এই নিরাকারের মধ্যে ভাগবতী নীরব নিস্তব্ধতা আর অবিচলিত শান্তি আনন্দ অনুভব করছি ৷

উ: ইহাই উন্নতির প্রতিষ্ঠা – এই নীরবতার মধ্যে সবই নামতে পারে ও প্রকাশ হতে পারে ৷

10.5.34


স: মা, আজ প্রণামের সময় দেখলাম মাথার উপর একটি বড় পদ্ম ৷ পদ্মটির একপাশে একটি ইঞ্জিন ফিট করা হচ্ছে ৷ ইঞ্জিনের গতিতে একটি জলের স্রোতে আমার সমস্ত আধার ধৌত হচ্ছে ৷ ইঞ্জিনের অন্য একটি পাইপ দিয়ে জল জোরে বের হয়ে উপরের দিকে যাচ্ছে এবং কুয়াশার মত হয়ে নীল আকাশে মিশে যাচ্ছে ৷

উ: ইহা purificationএর symbol – ঊর্ধচেতনার স্রোতে ধৌত হলে আধার purified হয়ে যায় ৷

10.5.34


স: আমি দেখলাম, আধ্যাত্মিক স্তরে প্রকাণ্ড একটি চক্র অবিরাম ঘুরছে আর তার ঘােরার সঙ্গে সঙ্গে নীল, সাদা, সবুজ, লাল, সােনালী সূৰ্য্যরশ্মির মত আলাে আমার চৈত্যপুরুষের স্তরে ও অন্যান্য নিম্ন অংশগুলিতে নামছে ৷ একটার পর একটা আলাে নেমে এসে চক্রের গতিতে আধারের সমস্ত অন্ধকার ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলছে, পরে ঘূর্ণনের গতির সঙ্গে চেতনাকে এবং সত্তাকে টেনে উর্ধের রাজ্যে তুলে নিয়ে যাচ্ছে আবার ঘূর্ণনের গতির সঙ্গে নামিয়ে দিচ্ছে ৷

উ: চক্র ঘােরা শক্তির কর্মপ্রয়ােগ ৷ অধ্যাত্ম শক্তি কাজ কচ্ছে আধারকে পরিষ্কার করে চেতনাকে ঊর্ধ্বে তুলে নিতে – তুলে নিয়ে ঊর্ধের চেতনায় সংযুক্ত করে নিজ স্থানে আবার নামিয়ে দেয় ৷

15.5.34


বাহিরের চেতনা ভিতরের (সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকে যদি দুইই মায়ের নিকট সম্পূর্ণ সমর্পিত শান্ত পবিত্র হয়ে যায় – তা হলে সব সম্ভব হয় ৷

17.5.34


স: মা, আজ প্রণামের সময় এত গভীর রাজ্যে আমার সমস্ত চেতনা উঠে গিয়েছিল যে দেহটিও উঠে গিয়েছিল বলে বােধ হয়েছিল ৷

উ: স্থূল দেহ ত উঠতে পারে না এই সকল রাজ্যে – সূক্ষ্ম দেহ উঠতে পারে, তাও সহজে হয় না ৷ তবে যখন vital উঠে যায়, তার সঙ্গে physical consciousnessএর কোন অংশ তার সঙ্গে টেনে নিয়ে যেতে পারে ৷

19.5.34


স: আমি দেখলাম সমস্ত জগৎ যেন ধূম্রাচ্ছন্ন আর নীচে সব জুড়ে শুধু একটা সাগর আর সেই সাগরের মধ্য দিয়ে খুব বড় একটা স্টীমারে করে তুমি আমাদের ঊর্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছ ৷

উ: এই সাগর ও আকাশ physical চেতনা ও প্রকৃতির obscurity বােঝায় ৷ সকলেই তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দিব্য আলােক physicalএও পাবার জন্য ৷

24.5.34


স: মা, আমার কেন মনে হচ্ছে আমার উন্নতি হচ্ছে না এবং যােগপথে আর আমি অগ্রসর হতে পারব না এই অপবিত্র দেহ ও প্রকৃতি নিয়ে ৷

উ: Physical চেতনার মধ্যে নেমেছ, সে জন্য এই রকম বােধ হচ্ছে, কিন্তু এ সত্য নয় – সেখানে নেমেছ physicalএর রূপান্তরের জন্য ৷ 24.5.34


Vital mind হৃদয়ের উপরে, গলার নীচে ৷ উচ্চ প্রাণ হৃদয়ে; নাভিতে central বা ordinary বা middle প্রাণ ৷ নাভির নীচে নিম্ন প্রাণ ৷ মূলাধার physical চেতনার কেন্দ্র ৷

24.5.34


স: মা, আজকে ধ্যান করতে গেলেই দেখছি আমার আধারের ভিতরে কতক-গুলাে পুরুষ শুধু কথাবার্তা বলছে, একজন অন্যকে হুকুম করছে ও নানারকম আদেশ করছে ৷

উ: এগুলাে হয় অবচেতনার নানা voices নয় general physical mindএর suggestions — সে দিকে attention দেওয়ার প্রয়ােজন নাই ৷

25.5.34


স: আমি দেখলাম উপর হতে একটি সূৰ্য্য আমার মাথার মধ্যে নেমে এল ৷ তারপর দেখলাম একটা সাপ – সাপের মাথাটাই সূৰ্য্য – ক্রমান্বয়ে নীচের দিকে নামছে ৷ যখন আমার পায়ের নীচে নামল তা একটা বৃহদাকার অগ্নিতে পরিণত হয়ে গেল আর আমি সেই অগ্নির মধ্যে আছি ৷ এই রকমে নিম্নস্তরে নামলাম ৷ সেখানে একটা বন পার হয়ে প্রকাণ্ড একটা বাড়ী দেখলাম ৷ সেই বাড়ীর ভিতর হতে কতকগুলি দৈত্য এই অগ্নি দেখে চারিদিক যাদুবলে অন্ধকার করে ফেলল কিন্তু এই অগ্নিটি আমাকে ঘিরে রেখেছিল বলে তারা আমার কোন ক্ষতি করতে পারেনি ৷ তারপর দেখলাম তুমি সেই জগতে নামলে এবং অন্ধকারটা কেটে গিয়ে সব স্থানটি যেন পাতলা একরকম জলময় হয়ে গেল ৷

উ: এ জগৎ অবচেতনার রাজ্য হবে – যেখানে অন্ধকার ও অজ্ঞানের খেলা – সেখানে সত্য আলাে নামবার চেষ্টা ৷

25.5.34


গলায় আছে বহির্দর্শী মনের কেন্দ্র – physical mental, সে ঠিক স্থূল মন নয়, সে হচ্ছে বুদ্ধির যে অংশ expression করে, কথার সৃষ্টি করে, মনের ভাব চিন্তাকে কোনরকম ব্যক্ত করে, তাদের প্রভাবকে বহির্জগতের মধ্যে রূপ দিয়ে সফল করবার চেষ্টা করে ইত্যাদি ৷ তবে স্কুল মনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট বটে ৷

26.5.34


নিম্ন প্রাণের ভাব উঠে মনবুদ্ধিকে আক্রমণ করে প্রাণের প্রেরণায় ভাসিয়ে দেবার জন্য অথবা বুদ্ধির সম্মতি ও সাহায্য পাবার জন্য – তারপর নিজেকে সজোরে কথায় বা কাৰ্য্যে পরিণত করে ৷ তাহা না পারলে নিদান বুদ্ধিকে স্থগিত করে নিজের আধিপত্য স্থাপন করবার চেষ্টা করে ৷Higher consciousness and will ও psychicকে আধারে বেশী সজাগ ও বলবান করা, সর্বত্র সক্রিয় করে রাখা ত ইহার অপনােদনের আসল উপায় ৷

26.5.34


স: কখন মনে হচ্ছে তােমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আবার পড়া আরম্ভ করেছি, তাই আমি সুন্দর অবস্থা হতে নীচে নেমে গেছি ৷ আবার মনে হয় আমি অত্যন্ত অপবিত্র – আমার দ্বারা এই যােগে আর বেশী উন্নতি সম্ভবপর নয় ৷

উ: এই সব চিন্তা outward প্রাণের স্বভাবগত – সহজে নিরাশ হয়ে যায় ৷ – বুদ্ধির ধার ধারে না, নিজের কল্পনাকে আশ্রয় করে কত চিন্তার সৃষ্টি করে যার কোনও মূল্য নাই ৷

26.5.34


স: কাল ধ্যানের সময় একটি প্রকাণ্ড জানােয়ারকে দেখলাম আমার সামনে ৷ দণ্ডায়মান ৷ তােমার যে শক্তি নামছিল, তা যেন নামতে না পারে সেভাবে সে তার প্রকাণ্ড দেহটিকে বিস্তৃত করে আমার সামনে দাড়িয়েছিল ৷ যখন চৈত্যপুরুষের অভীপ্সায় এবং আহ্বানে আমার আধারে তােমার শক্তি সজোরে নেমে এল তখন ঐ বিকট জানােয়ারটির দেহ চুরমার হয়ে গেল ৷ পরে মনে হল আমার স্কুল নীচ প্রকৃতিরই কোন মিথ্যা শক্তি হবে – কিন্তু এত বড় কি করে হল, মা?

উ: স্থূল প্রকৃতিরই শক্তি – কিন্তু তােমার স্কুল প্রকৃতির নয় ৷

2.6.34


স: আর আগের মত কারুরই সঙ্গে মিশবার সময় নিজেকে প্রাণের খেলার স্রোতে ভাসিয়ে দিই না, নিজেকে স্বতন্ত্র রাখবার জন্য সচেষ্ট হই ৷ আগে যেমন রাগ, অসন্তুষ্টি, নিরানন্দ ইত্যাদি অতি সহজে আমার মধ্যে আসত – এখন দেখতে পাই তারা আমার মধ্যে আসতে পারে না, কচিৎ এলেও সেই মুহূর্তে তাড়িয়ে দেবার ক্ষমতা যেন একটু হয়েছে ৷

উ: এই উন্নতিই প্রথম চাই – এটা না হলে আর কিছু স্থায়ী হতে পারে না ৷ 2.6.34


স: মা, কি হেতু নিম্নশক্তিগুলাে জেগে উঠে? ঘুমােলেই বেশী করে আসতে সুযােগ পায় যেমন সাধারণ অবস্থায় পায় না ৷

উ: ঘুমে উঠলে অবচেতনাই মূল হতে পারে – তবে প্রাণের কোন অংশে প্রকৃতিটা লুকিয়ে থেকে কোনও ক্ষুদ্র স্পর্শে বা অকারণেও উঠতে পারে, তা প্রায়ই হয় ৷

19.6.34


স: মা, সবাই আমাকে নিন্দে করে যে আমি তােমাকে শরীর সম্বন্ধে বিশ্রী অশ্রাব্য কথা সব লিখি বলে ৷ ওরা বলে সাধনার কথা, প্রার্থনার কথা ছাড়া আর কিছুই ওরা তােমাকে লেখে না ৷

উ: অসুখ যদি হয় – সে যেই অসুখই হােক – যেমন ডাক্তার কাছে ৷ রােগী লুকায় না, বলতে বাধা বােধ করা উচিত নয়, তেমনই মায়ের কাছেও মুক্তভাবে বলা উচিত ৷ লােকের কথা শুনতে নাই, তারা না বুঝে যা-তা বলে ৷

26.6.34


যখন শান্ত হয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে মায়ের শক্তির কাছে নিজেকে খুলে রাখ, তখন মায়ের শক্তি কাজ করতে পারে ৷ মায়ের একদিন কঠোরতা, একদিন প্রসন্নতা, ইহা সাধকের মনের সৃষ্টি, বাস্তবিক নয় ৷ নিজেকে খুলে রাখ – ইহাই হচ্ছে ৷ একমাত্র আসল কথা ৷

27.6.34


এসব চিন্তায় ও বিলাপে সাধনার কোন উপকার হয় না ৷ প্রাণই বাধার সৃষ্টি করে; সে প্রাণও আবার বাধার জন্য বিলাপ ও নিরাশা সৃষ্টি করে ৷ যেমন প্রাণের বাধাকরী বেগে কোন লাভ নাই, তেমন বাধাজনিত নিরাশায়ও লাভ নাই ৷ তার চেয়ে নম্র সরলভাবে শ্রদ্ধা ও সমর্পণ করে প্রাণের সব অশুদ্ধ movementকে ত্যাগ করে প্রাণে true consciousness (সত্য চেতনা)কে নামাবার চেষ্টা ভাল ৷

28.6.34


স: মা, আমার শুধু কেন বােধ হচ্ছে তুমি কঠোর নির্দয়? প্রতি মুহূর্তে আমি এত অন্যায় করি তবুও যে তুমি এক বিন্দু বিচলিত না হয়ে আমাকে শান্তি দাও তা আমি ভাল করে জানি – তবু কেন তােমার দৃষ্টির কঠোরতা আমার বুকে বাজছে?

উ: প্রাণের বাধা ৷ মানুষের প্রাণ বাহিরের জিনিষ চায়, লােকের সঙ্গে প্রাণের বিনিময় চায়, নিজের বাসনা দাবী প্রভৃতির সন্তোষ চায়, মায়ের অনুগ্রহও চায় কিন্তু অমনি, নিজেকে না দিয়ে, মা আমাকে ভালবাসবেন, আদর করবেন, প্রধান স্থান দেবেন, করুণা আলাে শান্তি বড় বড় অনুভূতি বর্ষণ করবেন – ইহা হচ্ছে ৷ মায়ের কর্তব্য – আমি দিব্যি ভােগ করব ৷ মা যদি না করেন, তাহলে তিনি নির্দয় কঠোর নিষ্করুণ ৷ প্রাণের আসল ভাব এই ৷ ওসব একেবারে পরিষ্কার করতে হবে, আসল খাঁটি সমর্পণ করতে হবে – তা হলে বাধাগুলাে পালাবে ৷

29.6.34


বিড়াল ত প্রাণের (emotional ইত্যাদি) বাসনার প্রতীক ৷

30.6.34


কাজ বা পড়া ছেড়ে কোন স্থায়ী ফল হয় না ৷ প্রাণকেই পরিষ্কার করতে হবে উপরের ভাব শান্তি সমতা পবিত্রতা তার মধ্যে এনে ৷

30.6.34


স: মা, আজকাল আমি যেসব অভিজ্ঞতা পাই এগুলাে কি মিথ্যা? তুমি এখন অভিজ্ঞতার উত্তর দাও না বলে আমার সন্দেহ হয় ৷

উ: অভিজ্ঞতা মিথ্যা নয়, তবে এই সবের অর্থ আগেই বুঝিয়ে দিয়েছি যেজন্য আর কিছু লিখি না এগুলাের সম্বন্ধে ৷ এই সব অভিজ্ঞতা উপরের স্তরের, সেখানে সত্য, নীচের স্তরে সত্য হবার চেষ্টা কচ্ছে – কিন্তু তার জন্য দরকার নিম্নস্তরে শান্তি নীরবতা পবিত্রতা বিশালতা উদ্ধৃ চৈতন্যের অবতরণ ৷

2.7.34


স: প্রাণ ত পূর্বে কখন আমাকে বাধা দেয়নি, কষ্ট দেয়নি ৷ তােমার পথে ছুটে আসতে সমস্ত পার্থিব বন্ধন ছিন্ন করতে সে আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল ৷ আজ সেই প্রাণের এত অশুদ্ধতা জেগে উঠল কেন?

উ: প্রাণের অশুদ্ধতা ত ছিলই – এখানে জাগে নি ৷ এখানে তার উপর মায়ের শক্তির চাপ পড়ল বদলাবার জন্য, যেজন্য বাধা প্রকট হল ৷

3.7.34


এ সব প্রাণভূমির স্বপ্ন – কিন্তু তার মধ্যে অবচেতনার কল্পিত রূপগুলাে এমন মিশে গেছে যে তাদের আর কোন অর্থ বা মূল্য নেই ৷ অনেক স্বপ্ন এই ধরনেরই হয় ৷ যেগুলাে স্পষ্ট অর্থপূর্ণ তাদেরই মূল্য আছে ৷

13.7.34


বুঝতে পারলাম না ৷ যে অবস্থার বর্ণনা কর, সেটী শ্রেষ্ঠ অবস্থা আধ্যাত্মিক উন্নতির পক্ষে – প্রকৃতি শান্ত, চাঞ্চল্য উত্তেজনার অভাব, শান্ত গভীর আনন্দ, নিথর উৎসাহ – আর কি চাও? এই হচ্ছে উন্নতির ভিত্তি ৷

18.8.34


স: মা, আমার মন প্রাণ আত্মা কোথায় অন্তর্ধান করেছে ৷ আমার দেহটি একটা ক্ষীণ আলাের রশ্মির মত পড়ে আছে – কোন রকম ভার কষ্ট উত্তেজনা কিছুই আমি বােধ করতে পারছি না ৷ ...আমি অনেক রাস্তা দেখতে পাচ্ছি তােমার কাছে যাবার কিন্তু সােজা রাস্তা একটিও নাই ৷ মা, পূর্বে যেমন সােজা ছিল বলে আমি দেখতে পেতাম এখন কেন তা দেখতে পাই না?

উ: তুমি এখন physical চেতনার মধ্যে বসে আছ – সে চেতনা আলাের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে আর প্রতীক্ষা কচ্ছে ৷

21.8.34


ব্যথায়, হতাশায়, নিরানন্দে, নিরুৎসাহে কেউ কখনও যােগপথে উন্নতি লাভ করেনি ৷ এই সব না থাকা ভাল ৷

24.8.34


এই যােগপথে মিথ্যাই হচ্ছে বড় অন্তরায় – কোন রকম মিথ্যাকে স্থান দিতে নেই - মনেও নয়, কথায়ও নয়, কার্য্যেও নয় ৷

1.9.34


অবিশ্বাস হচ্ছে নিম্নপ্রকৃতির ধর্ম যেন – নিম্ন প্রকৃতির কথা শুনতে নেই ৷ যা উপর থেকে আসে তাহাই সত্য ৷

1.9.34


যখন শরীরচেতনা প্রস্তুত হয়ে যাবে, তখন কাজের দ্বারাও উন্নতি হতে পারবে ৷

8.9.34


মিথ্যা ত নিম্ন প্রকৃতির স্বভাব ৷ সেখানে সত্যকে স্থাপন করতে হবে ৷

11.9.34


শুধু ঊর্ধ্বে যাওয়ায় এ যােগের সিদ্ধি হয় না – ঊর্ধের সত্য শান্তি আলাে ইত্যাদি নেমে মন প্রাণ দেহে প্রতিষ্ঠিত হলেই সিদ্ধি হয় ৷

যদি ঊৰ্ধ চৈতন্য নামে আর তুমি মনপ্রাণদেহের সব মিথ্যাকে প্রত্যাখান কর, তাহলে সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে ৷

14.9.34


যদি মানুষের ভালবাসার দিকে মন ছুটে বা মানুষকে আকর্ষণ কর, তাহলে ভগবানকে পাওয়া কঠিন, এই কথা খুবই সত্য ৷

19.9.34


স: আমার ভেতরে জ্ঞান, আলােক ও শক্তি নেমে আসছে এবং তাদেরকে ব্যবহার করবার জ্ঞানও আসছে ৷ কিন্তু তাদেরকে প্রকাশ করবার ভাষা ছন্দ ও পথ খুঁজে পাচ্ছি না ৷

উ: ভাষা ছন্দের দরকার নাই – এই যা নামতে চায়, তাহা জ্ঞান – আগে জ্ঞান পেতে, জ্ঞানের আলােকে উন্নতি সহজ হয়ে যায় – এখন আর কোনও বাহিরের ব্যবহারের প্রয়ােজন নাই ৷

25.9.34


সাধারণ মানুষের সামনের দিকই জাগ্রত – কিন্তু এই সামনের জাগ্রত চৈতন্য সত্যি সত্যি জাগ্রত নয়, তাহা অবিদ্যাপূর্ণ, অজ্ঞ ৷ তার পেছনে রয়েছে inner beingএর ক্ষেত্র – সে ঢাকা রয়েছে যেন ঘুমন্ত ৷ কিন্তু এই আবরণটী খুললে এই পেছনের চৈতন্যই খােলা দেখা যায়, সেইখানেই আলাে শক্তি শান্তি ইত্যাদি প্রথম নামে ৷ যা বাহিরের জাগ্রত সত্তা করতে পারে না, তাহা এই পেছনের ভিতরের সত্তা সহজে করতে পারে, ভগবানের দিকে বিশ্বচৈতন্যের দিকে নিজেকে খুলে বিশাল মুক্তচৈতন্য হয়ে যেতে পারে ৷

25.9.34


যখন চেতনা উপরে উঠতে পারে শরীরকে অতিক্রম করে – সে ওঠা যােগের একটী প্রধান অঙ্গ – কুণ্ডলিনীও সেইরূপ উঠতে পারে ৷ কুণ্ডলিনী কেন্দ্রস্থিত গুপ্ত চৈতন্যের শক্তি ছাড়া আর কিছু নাই ৷

29.9.34


স: বাবা, সহজ স্বাভাবিকভাবে কেমন করে লিখতে হয় তা ত আমি জানি না ৷ আমার লেখাপড়ার দৌড় এতটুকু ৷ আমার ভাবাবেগ উদ্ধৃ চৈতন্যের এই সমুদয় জিনিষগুলােকে রূপ দিয়ে ভাষার মধ্য দিয়ে এ জগতে প্রকাশ করতে চায় ৷

উ: জ্ঞান যদি আসে, তাহাই যথেষ্ট ৷ লেখার কি প্রয়ােজন ৷

29.9.34


আধার যত পরিষ্কৃত হয়, ততই ভাল – মায়ের সান্নিধ্য ভিতরে ও বাহিরে প্রকাশ হতে পারবে ৷

6.10.34


যদি ভিতরে সব ঠিক হয়ে যায়, তাহলে বাহিরের বাধা কি করতে পারে?

13.10.34


নিজেকে সংযত করে রাখা – কারাে দিকে আকর্ষণ হতে না দেওয়া, কারও vital টানকে প্রশ্রয় না দেওয়া, নিজেও তার উপর কিছু ফেলবে না vital মােহ বা আকর্ষণ – ইহাকেই বলে নিজের মধ্যে ঠিক থাকা ৷

16.10.34


স: তখন এত অভিজ্ঞতা নামিয়া আসিত তােমার শক্তি শান্তি আলাের সঙ্গে – এখন আর আসিতেছে না কেন? এখন শুধু শান্তি আনন্দ আস্পৃহা নামিয়া থাকে – কিন্তু অনুভূতি ত আসিল না ৷

উ: যখন চেতনার কোনও স্তর উঠে যার সঙ্গে উপরের সম্বন্ধ এখনও স্থাপিত হয় না অথবা বহিঃপ্রকৃতির একটা ঠেলা আসে মনপ্রাণের উপর আর মন প্রাণ তার বশীভূত হয়, তখন এ রকম অবস্থা আসে – এ দুটী কারণের মধ্যে একটী হবে ৷

30.10.34


অবিদ্যার মধ্যে যা থাকে সে সব এক বিশ্ব চৈতন্যের মধ্যেই থাকে আলাে অন্ধকারের মত, তাই বলে আলাে অন্ধকার যে সবই সমান তা নয় ৷ অন্ধকারকে বর্জন করতে, আলােকে বরণ করতে হয় ৷

3.11.34


হয় psychic আধারের নিয়ামক (ruler, চালক, পথপ্রদর্শক) হয়ে বুদ্ধি মন প্রাণ শরীর-চেতনাকে ভগবানের দিকে উন্মুখ করবে, নয় ঊৰ্ধ চৈতন্য শরীর-চেতনা পৰ্য্যন্ত নেমে সমস্ত আধারকে দখল করবে, তাহলে স্থূল চেতনায় শক্ত ভিত্তি হয়ে যাবে ৷

6.11.34


যে স্থানটী বলেছ – গলার একটু নীচে সে vital mindএর আরম্ভ — সেখান থেকে vital beingএর will ও চিন্তা বেরােয় ৷

7.11.34


সবই নির্ভর করে psychicএর প্রাধান্যের উপর বহিঃপ্রকৃতি ক্ষুদ্র অহংকার আর বাসনা কামনাকে চরিতার্থ করবার জন্য ব্যস্ত – মানস পুরুষ আত্মা নিয়ে ব্যস্ত – কিন্তু ক্ষুদ্র অহমের তাতে কোন তৃপ্তি নাই, ক্ষুদ্রত্বকেই চায় ৷psychic ভগবানকে নিয়ে ব্যস্ত, সমর্পণ তারই কাজ – এক psychicই বহিঃপ্রকৃতিকে বশ করতে পারে ৷

13.11.34


পুরুষ কিছুই করেন না, প্রকৃতি বা শক্তিই সব করেন ৷ তবে পুরুষের ইচ্ছা না হলে কিছুই হতে পারে না, এ ত জানা কথা তুমি কখন শােন নি?

8.12.34


সাধনার পথ ত দেখিয়ে দিয়েছি ৷ সংযত হয়ে শান্তভাবে মায়ের শক্তির কাছে নিজেকে খুলে দাও, সে শক্তির কাজে সম্মতি দাও, নিম্নপ্রকৃতির প্রেরণাকে প্রত্যাখ্যান কর ৷ বাহিরে নিজেকে বিলিয়ে দিয়াে না – ভগবানের জন্যই নিজেকে পবিত্র স্বতন্ত্র রাখ ৷ মায়ের উপর যদি প্রেম থাকে, তবে সে যেন ভিতরের প্রেম হৌক, বাহিরের নয়, প্রাণের অশুদ্ধ প্রেম নয়, বাসনা দাবির নয় – বাধাকে ভয় করাে না – নিরাশাকে স্থান দিয়াে না ৷ স্থির শান্ত ভাবে সাধনাই করে যাও, শেষে যা এখন শক্ত, তা সহজ হয়ে উঠবে ৷

13.12.34


স্নায়বিক কল্পনাও অসুখ সৃষ্টি করতে পারে ৷

14.12.34


শরীরের স্নায়বিক ভাগে (nervous systemএ) শান্তি ও শক্তি নাবান, এই ছাড়া উপায় নাই nervesকে সবল করবার ৷

15.12.34


স: মা, আমি প্রাণপণে চেষ্টা করি সারা দিনরাত নীরব নির্জনে কেবল তােমাকে নিয়ে থাকতে – কিন্তু সব সময় তা পেরে উঠি না ৷ চেতনা আধারে নেমে আসে এবং বাহিরের জগতে ছড়িয়ে পড়ে ৷

উ: বাহিরের দিকে আকর্ষণ আছে বলে – সে আকর্ষণ এত সহজে যায় ৷

18.12.34


খুব শক্তির চাপে মাথা ধরা হতে পারে, তবে অসুখের ভাব হবার কথা নাই ৷

3.1.35


স: মা, এতদিন পরে শক্তিটিকে আমার মাথা এবং দেহ বিনাকষ্টে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে ৷ সব সময় প্রথম শক্তিটি আধারে নামবার সময় এইরকম অগ্নির মত হয়ে নামে কেন? যেমন রঙটি আগুনের ন্যায়, তেমনি তেজও আগুনের ন্যায় ৷

উ: অশুদ্ধতা যদি থাকে মনে প্রাণে বা শরীরে, resistance যদি থাকে, তাহলে অগ্নির দরকার হয় ৷

5.1.35


ভিতরের nearnessই আসল nearness – যারা বাহিরে মায়ের কাছে কাছে থাকে, তারাই যে near, এই ধারণা মিথ্যা ৷

15.1.35


অসুররা পথের মধ্যে সব সময় আছে, তবে মানুষ প্রায়ই চেনে না – নিম্ন প্রকৃতির বশে রয়ে তাদের দাস হয়ে থাকে ৷

19.1.35


পাপের কথা কেন – পাপ নয়, মানুষের দুর্বলতা ৷ আত্মা সৰ্ব্বদা শুদ্ধ, psychic being (চৈত্যপুরুষও) শুদ্ধ, সাধনা দ্বারা অন্তরতাও (inner mind, vital, physical) শুদ্ধ হতে পারে অথচ external being বহিঃসত্তা বহিঃ-প্রকৃতিতে সেই চরিত্রের পুরাতন দুর্বলতা অনেক দিন লেগে থাকতে পারে, সম্পূর্ণ শুদ্ধ করা কঠিন ৷ চাই complete sincerity, চাই দৃঢ়তা ও ধৈৰ্য্য, চাই সদাজাগ্রত ভাব ৷Psychic being যদি in frontএ থাকে, সর্বদা জেগে থাকে, প্রভাব বিস্তার করে, তাহলে ভয় নাই, কিন্তু তা সব সময়ে হয় না ৷ রাক্ষসী মায়া সেই পুরানাে weak pointদের ধরে মনকে ভুলিয়ে প্রবেশ করবার পথ পায় ৷ প্রত্যেকবার তাদের তাড়িয়ে দিয়ে পথ রােধ করতে হয় ৷

22.1.35


স: মা, আজ কয়েকদিন ধরে স্বপ্নের মধ্যে দেখছি যে আমি সবাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি ৷ পুরাতন সব আত্মীয়েরা সযত্নে আমাকে বিদায়ভােজন করাচ্ছে আর কাদছে ৷ আমার মন সেদিকে নাই ৷ সুন্দর সুন্দর নদীতে স্নান করছি আর বন্ধনহীন একটা আনন্দে যেন বিভাের হয়ে রয়েছি ৷

উ: এই সব প্রাণজগতের কথা ৷ সেখানে যে আত্মীয়দের টান ও সম্বন্ধ ছিল, সে শিথিল হয়ে গিয়েছে আর একেবারে বন্ধ হবার তৈরী হচ্ছে ৷ তার বদলে সত্য প্রাণের আনন্দ ও সৌন্দর্য্য তােমাকে ডাকছে ৷ স্বপ্নের অর্থ এই ৷

23.1.35


যখন কোনও একটা শক্তি আধারে নামে, তখন receive করবার difficultyর দরুন কম্প ও আলােড়ন হয় ৷ শান্ত হয়ে থাকলে, সত্ত্বগুলি খুলে দিলে আধার absorb ও assimilate করতে আরম্ভ করে ৷

26.1.35


স: মা, এখন ঘুমে, ধ্যানে অথবা সাধারণ অবস্থায় হঠাৎ চিন্তা বা কল্পনার মধ্যে আমার খুব উপকারী বা আত্মীয় মানুষ কেউ আসে ৷ আমি তাকে চিনতে পারি না; অথবা কোন জিনিষ বা একটি দৃশ্য দেখি যার সম্বন্ধে আমার কোন ধারণাই নেই ৷ কেমন আবার সেই মানুষটিকে মানুষ ও বস্তুটিকে বস্তু বলে মনে হয় না ৷

উ: অনেকবার ভিতরের কিছু সেইরূপ আকৃতি ধরে দেখা দেয় বটে – স্বপ্নে বা ধ্যানে ৷ কিন্তু সেসব ত বাহিরের জিনিষ নয়, ভিতরের কোনও না কোনও জিনিষের সূচনা দিতে আসে ৷

26.1.35


স: মা, দেখা একটি জিনিষ —অনুভব করা অন্য জিনিষ এবং বুঝা ভিন্ন জিনিষ ৷ আমি ধ্যানে অথবা বাহিরে যা দেখি তা হৃদয়ে বােধ করি, কিন্তু বুঝি না, মা ৷

উ: তার জন্য জ্ঞানের বিস্তার চাই ৷ সে জ্ঞান ক্রমে ভিতর থেকে বা উপর থেকে আসতে পারে ৷

26.1.35


যখন মনপ্রাণ ছুটোছুটি করে বাহিরে, তখন ভিতরের কোনও পুরুষের কথা ৷ শুনবে কেমন করে? হয় বাহিরের কোলাহলে সে কথা থেমে যায়, না [হয়] শােনা যায় না ৷ তবে এমন অবস্থা আনতে হয় যার মধ্যে যখন বাহিরের কোলাহল হয়, তখনও ভিতরের পুরুষ সজাগ হয়ে থাকে, হয় অবিচলিত হয়ে দেখে থাকে, নয় আস্তে আস্তে তার প্রভাব বিস্তার করে ও বাহিরের কোলাহলকে থামিয়ে দেয় ৷

ভিতরের পুরুষ অনেক থাকে ৷ আছে psychic being চৈত্যপুরুষ, আছে ভিতরের মনােময় পুরুষ, ভিতরের প্রাণপুরুষ, ভিতরের physical পুরুষ ৷ উপরে আছে কেন্দ্রীয় সত্তা – এই সকল তারই নানান আকৃতি ৷ চেতনার বিকাশে এই সকলকে চেনা যায় ৷

26.1.35


Physicalএর কেন্দ্র মেরুদণ্ডের শেষভাগে, যাকে মূলাধার বলে, সেখানে ৷ – তবে প্রায়ই দেখা দেয় না, তার presence অনুভব করা যায় ৷

29.1.35


এ ত প্রাণময় পুরুষ, emotional vitalএ অধিষ্ঠিত ৷ প্রাণময় পুরুষের তিনটী স্তর আছে – হৃদয়ে, নাভিতে, নাভির নীচে ৷ হৃদয়ে সে হয় emotional being, নাভিতে বাসনাময়, নাভির নীচে sensational অর্থাৎ ইন্দ্রিয়ের টান ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণের ভাব নিয়ে ব্যস্ত ৷

29.1.35


তােমার অনুভূতি খুব ভাল – উপরের শক্তির চক্র (কাৰ্য্যকরী-গতি) নামছে নীচ প্রকৃতিকে আলােকিত ও সচেতন করবার জন্য, আর এদিকে মায়ের কার্য্যের জন্য ভিতরের higher vital পুরুষ সামনে এসেছে – আমরা যাকে বলি true vital being !

তােমার কাজ দেখে মা খুব সন্তুষ্ট হয়েছেন ৷ কোন ভয় নেই – অহংকার ইত্যাদিকে স্থান না দিয়ে সরলভাবে মায়ের কাজ করে যাও, সবদিকে উন্নতি হয়ে যাবে ৷

18.4.35


এই সব difficulties সাধনায় হয়ই – বিশেষ প্রাণে ও শরীরে – সামঞ্জস্য হওয়া পর্যন্ত ৷ সে সামঞ্জস্য আসে (১) psychic সত্তার আধিপত্য যখন স্থাপিত হয় মন প্রাণ শরীরের উপর, (২) উদ্ধৃচৈতন্যের শান্তি ও পবিত্রতা যখন উপর থেকে নেবে সমস্ত beingএ – নিদান সমস্ত inner beingএ বিশাল অটলভাবে স্থাপিত হয়ে যায় ৷

10.6.35


কাজের জন্য, সাধনার জন্য শরীরের ভাল অবস্থা চাই ৷

20.6.35


ডাক্তার খুঁজছে – কারণ তােমার শরীরে এমন কিছু দোষ পাচ্ছে না যাতে এসব স্বভাবতঃ হয় ৷ ...যাই হৌক এত উতলা হবার কোনও কারণ নাই ৷ যােগের সাধক তুমি, যাহয় তা শান্ত অবিচলিত মনে দেখে ভগবানের উপর নির্ভর করে যােগপথে অগ্রসর হও ৷ ইহাই এই পথের আর প্রায় সব যােগপথের নিয়ম ৷

21.6.35


স: মা, গতরাত্রে দেখলাম প্রকাণ্ড বাগানে একটি হ্রদ, হ্রদের মধ্যে অনেক-গুলাে সাপ খেলা করছে ৷ সেখানে একটি সর্পাকৃতি বৃহৎ জন্তু মস্তকহীন; মস্তকের পরিবর্তে বড় ভীষণ একখানি মুখ ও দুইপাটি দাত ৷ জলাশয়ে লুকিয়ে ছিল, হঠাৎ উঠে সােজা আমার দিকে একটি বড় হাঁ করে গ্রাস করার জন্য আসছে ৷ আমি দাঁড়িয়ে দেখছি ওর পেটের মধ্যে আরাে কত জন্তু আছে ৷ আমার কাছে ৷ আসার আগেই একটি অসুরাকৃতি জীব আপনাআপনি যেন ওর মুখে পড়ল – তখন সে আর এল না, আপনাআপনি পিছিয়ে পড়ল ৷ আমার মনে হল আমার প্রাণের মধ্যে অশুদ্ধ শক্তি লুকায়ে আছে ৷ আজ আমি তােমাকে ডাকছি বলে আমাকে গ্রাস করতে এসেও গ্রাস করতে পারেনি ৷

উ: তােমার ব্যাখ্যা ঠিক – হ্রদ হল নিম্নপ্রাণ – সেখানে অনেকগুলাে ছােট ছােট নিম্নপ্রকৃতির শক্তি আছে – কিন্তু তাদের নীচে অবচেতনার সর্বগ্রাসী এক তামস শক্তি আছে যে সব গ্রাস করে, সাধককে ও সাধনাকে গ্রাস করতে আসে ৷ তার মুখে নিজের আসুরিক বৃত্তি যত যদি পড়ে (ধ্বংস হয়ে যায়), তখন আর সে তমঃ সাধককে গ্রাস করতে পারে না ৷

1.7.35


যদি মার দিকে, উপরের দিকে সবসময় মনপ্রাণকে turned করে রাখ, তাহলে নীচের দিকে রাক্ষস বা আর কেহ তােমাকে টেনে নিতে পারবে না ৷

4.7.35


এ সকল প্রাণজগতের স্বপ্ন ৷ সেখানে নিজের বা লােকের প্রেরণা, চিন্তা, বাসনা আর যত ভাল বা খারাপ শক্তির চরিতার্থ হবার চেষ্টা নানারকম আকার গ্রহণ করে – স্বপ্নে সে সব দেখা দেয় যেন সত্যই হচ্ছে ৷

22.7.35


এ সব কান্না চিৎকার ভাবের উত্তেজনা সাধনার পথে ভাল নয়, এ সব ছেড়ে দিতে হয় ৷ নিরহঙ্কার ভাব, ভিতরের শান্তি, শান্ত সমর্পণ, এই হচ্ছে যােগসাধনার ভিত্তি ৷ কাজেও সেই ভাবই চাই ৷

25.10.35


যদি শান্ত মনপ্রাণ চাও ত সব দাবী আবদার অহং ভাবের বৃত্তি অতিক্রম করতে হয় ৷ শান্ত মনপ্রাণই সাধনার উন্নতির মুখ্য সহায় ৷

26.10.35


একমাত্র পথ আছে প্রাণের বশ না হয়ে নিরহঙ্কারভাবে কাজ করা ও psychicএর সাধনা করা ৷

23.12.35


প্রত্যেক পুরুষের স্থায়ী অবস্থান তার নিজের কেন্দ্রে বা ক্ষেত্রে – চৈত্যপুরুষের গভীর হৃদয়ে, প্রাণপুরুষের হৃদয়ে নাভিতে বা তার নীচের যে কেন্দ্র সেখানে ৷ অথবা সমস্ত প্রাণপুরুষকে এই সমস্ত প্রাণক্ষেত্র ব্যাপ্ত করিয়া অনুভব করি ৷ মূলাধারের উপরই প্রাণক্ষেত্রের শেষ, মূলাধার থেকে পা পর্যন্ত অন্নময় (physi-cal) পুরুষের ক্ষেত্র, মূলাধারে তার বসবার স্থান ৷ কিন্তু যখন যােগের অভ্যাস হয় তখন নিম্নের চেতনা উপরে উঠতে লাগে – যেমন প্রাণচেতনা – দেখছি ৷ হৃদকেন্দ্র ও তার নিকটস্থ অংশ থেকে সমস্ত উপরের প্রাণচেতনা উঠে যাচ্ছে, মাথার উপরে ঊর্দ্ধ চেতনার সঙ্গে মিলিত হচ্ছে ৷ এর সঙ্গে প্রাণপুরুষ যেখানে উঠছে, তাও অনুভব করতে পারি ৷ এর উদ্দেশ্য এই যে ওখানে উঠে অধ্যাত্মের সঙ্গে যুক্ত হয়, অধ্যাত্মের স্বভাবের সঙ্গে প্রাণস্বভাবের মিল হয়, শেষে ঊর্ধচেতনা নীচে নেমে সমস্ত প্রাণচেতনা প্রাণপ্রকৃতিকে অধিকার করে, ভাগবত চৈতন্যে পরিণত করে ৷ এই হচ্ছে যােগের নিয়ম ৷

10.1.36


স: মা, সারাদিন সবকিছুর ভিতর দিয়ে দেখছি আমার নাভি হতে একটি জিনিষ বুকে উঠে মানুষের স্নেহের কথা চিন্তা করছে, মানুষের ভালবাসায় আমাকে উদ্ভাসিত করে তুলছে ৷ মাথা হতে আর একটি জিনিষ নেমে বুকে এসে ভগবানকে পাওয়ার জন্য ভগবৎ ভালবাসার আকাঙ্ক্ষায় সমস্ত কিছুকে সতেজ করে তুলছে ৷ ...কি হয়েছে, মা?

উ: যা উঠে প্রাণ থেকে, তা তােমার সাধনায় একটী প্রধান বাধা, মানুষের প্রেম ও ভালবাসার আকর্ষণ – উপরের থেকে নামবার চেষ্টা করে তার উল্টো ভাব, ভাগবত ভালবাসা পাওয়ার আশৃহা – এ বড় স্পষ্ট অনুভূতি, তাতে এমন কিছু নাই যে বােঝা কঠিন ৷

11.3.36


স: আজ বিকালে আমার মাথার সামনে দেখলাম খুব কালাে চতুষ্পদ একটি বিরাট জন্তু; সেটি আমার পিছনদিক থেকে এল ৷ তার জিভ নড়ছিল এবং গলা ওঠানামা করছিল খাবারের জন্য ৷ আমি প্রাণপণে তােমাকে ডাকতে লাগলাম, তারপর জন্তুটি অন্তর্হিত হয়ে গেল ৷

উ: অর্থাৎ একটী নিম্ন প্রাণশক্তি যাকে তুমি আহার দিতে অভ্যস্ত ৷

21.4.36


[কামের প্রকোপ সম্পর্কে]

শরীর চেতনাকে purify করলে এ সব যাবে, অন্যথা যাওয়া কঠিন ৷

29.5.36


স: মা, একদিন দেখলাম আমার এক বৎসর বয়স্ক শিশুটি খুবই পীড়িত ৷ আমি তার চিকিৎসার জন্য পবিত্রর কাছে গেছি এবং সে রােগীর অবস্থা আমাকে পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিল এবং দেখিয়ে দিল ৷ তারপর একদিন দেখলাম শিশুটি ভীষণ পীড়ায় মরে গেল ৷ কোন্ শিশুকে দেখি মা? আমার নিজের যে শিশু ছিল সে তাে এখন দশ-এগার বছরের হয়েছে ৷ আর যদি চৈত্যপুরুষ বলে ধরি, তবে সে মরবে কেন – সে ত মরে না ৷

উ: এ ত psychic being নয়1, প্রকৃতির উৎপন্ন আর কিছু যা তােমার ভিতরে মরে গেল ৷

7.7.36


স: মা, আমার যােগপথের যত বাধা, মিথ্যার আবরণ হতে প্রাণের বাধা হতে নিজেকে মুক্ত করতে চাই – পারি না ৷ তারা আমার উপর আধিপত্য বিস্তার করে ৷ কেমন করে মন প্রাণ ও দেহ চৈতন্যকে পরিষ্কার ও পবিত্র করতে পারব, দেখিয়ে দাও ৷

উ: এই অবস্থা হতে পরিত্রাণের উপায় এই – সরল স্পষ্টভাবে বুদ্ধির সব ভুল, প্রাণের সব দোষ চিনে নেওয়া, নিজের কাছে, মায়ের কাছে না লুকায়ে আলােতে তুলে ধরা, প্রত্যাখ্যান করা মায়ের শক্তিকে ডেকে ৷ একদিনে এটা সফল হয় না, কারণ প্রাণমন resist করবেই, প্রকৃতির পুরাতন অভ্যাস সহজে যায় না ৷ কিন্তু sincere will যদি থাকে আর তার সঙ্গে perseverence, ক্রমে সহজ হয়ে যায় আর শেষে পূর্ণ সফলতা হয় ৷

10.7.36


দেহ প্রাণ অমনই স্বচ্ছ হয় না – সাধনা দ্বারা আত্মসংযম দ্বারা প্রাণকে পবিত্র করতে হয় – প্রাণ স্বচ্ছ হলে, দেহের অনেক রােগকষ্টের উপশম হয় ৷

11.7.36


স: মা, বুদ্ধির ভুল সম্বন্ধে তুমি যা লিখেছ তা আমি ধরতে পারছি না ৷ মন প্রাণ সাধনপথে বাধা দেয় বলে জানতাম – কিন্তু বুদ্ধির যে দোষ আছে এবং বুদ্ধি যে ভাগবত পথে চলতে বাধা দেয় তা ত জানতাম না ৷

উ: বুদ্ধি যখন প্রাণের ভ্রান্তিকে সমর্থন করে, অহঙ্কারকে সমর্থন করে, ভুল অবতরণের জন্য justifying reasons খুঁজে উপস্থিত করে, মিথ্যা কল্পনাকে আশ্রয় দেয়, এ সবই বুদ্ধির ভুল ৷ আরও অনেক আছে ৷ মানুষের বুদ্ধি অনেক রকম অসত্যকে স্থান দেয় ৷

11.7.36


অন্তরের গভীরতম প্রদেশে ডুবে থাকা খুব ভাল কিন্তু সেখান থেকে কাজকর্মও করিবার সামর্থ্য develop করতে হয় ৷

15.9.36


যখন স্বভাবে দোষ দেখেছ তখন তাতে আর সায় না দিয়ে মায়ের শক্তিকে ডেকে স্বভাব থেকে ফেলে দাও ৷ সাধকদের ভিতরের অনুভূতি থাকলেও বাহিরের স্বভাব বদলায় না, এই হচ্ছে সব অশুভের মূল কারণ ৷ এই দিকেই লক্ষ্য ও চেষ্টা বিশেষ turn করা এখন উচিত সকলের ৷

24.9.36


মানুষমাত্রেই এই সব শক্তির প্রভাব আছে ৷ এ শক্তিগুলি তােমার ভিতরে নয়, তারা বিশ্বপ্রকৃতির নিম্ন force, কিন্তু তাদের প্রভাব সকলের ভিতরে ৷ যতদিন নিজের ভিতরে যেসব wrong movement আছে, সেসব চিনি না, acknowl-edge করতে চাই না ততদিন এই প্রভাব হতে মুক্ত হওয়া কঠিন ৷ যদি চেনা যায়, তাহলে মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা হয় ৷ তবে বিচলিত না হয়ে দৃঢ়ভাবে দেখে reject করা উচিত ৷ মায়ের শক্তিকে ডেকে সব সরিয়ে দিতে হয় ৷

13.10.36


চৈত্যপুরুষ, অন্তরাত্মা, সূক্ষ্মসত্তা যে মনপ্রাণ ইত্যাদিকে ধারণ করে আছে, এই সব ত একই, psychic being – আত্মার স্থান মেরুদণ্ডের মধ্যে নয় – আত্মা ত সৰ্বব্যাপী, সকলের আত্মা এক ৷

17.7.37


নাখাওয়া যে আধ্যাত্মিকতার একটী অঙ্গ, এ ধারণা ভুল ৷ লােভ থাকবে না, লােভের জন্য খাবে না, প্রয়ােজনের বেশী খাবে না এই নিয়মগুলাে অবশ্য পালন করতে হয় – কিন্তু শরীরের পক্ষে যা দরকার তা খেতে হয় ৷ গীতায় বলে খুব বেশী খেলে যােগ করা যায় না, না খেয়ে, খুব কম খেয়েও করা যায় না ৷

22.7.37


চায়ের অপকারও আছে, উপকারও আছে ৷ খুব strong করলে বা বেশী চিনি ঢাললে শরীরের অপকার হয়, মাত্রায় বেশী খেলেও তাই হয় ৷ অল্প চিনি নিলে আর light চা করলে (boiling জলে চা ঢেলে তখনই বা শীঘ্রই কাপে pour out করতে হয়) অপকার হয় না ৷

14.6.38


[সােধিকার কন্যার কাছ হতে অনেক চিঠি আসছে নানারকম সমস্যা নিয়ে ৷ শ্রীঅরবিন্দকে সাধিকা সেসব লিখে জানাচ্ছেন ৷]

বাপের বাড়ী যেতে চায় না, দিদিমার অধীনে ভাল লাগে না ত কি করা যায়? মানুষের জীবনে স্বেচ্ছা বা স্বাতন্ত্রের জায়গা খুব কম, কর্তব্যই প্রধান ৷ যে খুব শক্তিমান, তাকেও প্রথম আত্মসংযম বাধ্যতা discipline শিখতে হয় – যে চায় না তার দুঃখভােগ অনিবার্য ৷

6.7.38


তােমার অনুভূতি ত সত্য কিন্তু যে সব নাম দিয়েছ, সে সবই ভুল ৷ মানুষের পৃথক পরমাত্মা নাই, পরমাত্মা ভগবান, ভগবানই সকলের পরমাত্মা ৷ যাকে পরমাত্মা বল, সে তােমার জীবাত্মা, মাথার উপরে তার স্থান, ভগবানের সঙ্গে মায়ের সঙ্গে যুক্ত যে ৷ যাকে জীবাত্মা বল, সে জীবাত্মা নয়, সে তােমার প্রাণপুরুষ, এমনকি নিম্ন প্রাণপুরুষ ৷ প্রাণ হৃদয়ের নীচে থেকে মূলাধার পর্যন্ত বিস্তৃত, তার মধ্যে নাভির নীচে যা তা নিম্নপ্রাণ ৷ তেমনই আত্মা যাকে বল, তাকে আত্মা বলা যায় না, সে psychic being, হৃদয়ে চৈত্যপুরুষ ৷Psychic being (অন্তরাত্মা বলতে পার) জীবাত্মা সঙ্গে যুক্ত, মায়ের সঙ্গে যুক্ত হলে সত্যচেতনার ভিত্তি স্থাপিত হয় ৷ কারণ এই psychic অন্তরাত্মাই মানুষের সমস্ত মনপ্রাণদেহকে ধারণ করে পেছন থেকে, তবে সে গুপ্ত, সাধারণ মানুষের মন প্রাণ দেহ তাকে দেখে চেনে না ৷ মানুষ প্রাণপুরুষকে নিজের আত্মা বলে ভুল করে, প্রাণপুরুষের বশ হয়ে দুঃখভােগ করে ৷ যখন প্রাণপুরুষের বশ না হয়ে, অন্তরাত্মার psychic beingএর বশ হয়, তখন সব সুন্দর সুখময়, মায়ের সঙ্গে যুক্ত মা-ময় হয়ে যায় ৷ এই সব তুমি দেখছ, যা দেখেছ তা ঠিক – শুধু নামগুলােকে বদলাতে হবে ৷









Let us co-create the website.

Share your feedback. Help us improve. Or ask a question.

Image Description
Connect for updates