All writings in Bengali and Sanskrit including brief works written for the newspaper 'Dharma' and 'Karakahini' - reminiscences of detention in Alipore Jail.
All writings in Bengali and Sanskrit. Most of the pieces in Bengali were written by Sri Aurobindo in 1909 and 1910 for 'Dharma', a Calcutta weekly he edited at that time; the material consists chiefly of brief political, social and cultural works. His reminiscences of detention in Alipore Jail for one year ('Tales of Prison Life') are also included. There is also some correspondence with Bengali disciples living in his ashram. The Sanskrit works deal largely with philosophical and cultural themes. (This volume will be available both in the original languages and in a separate volume of English translations.)
সেইদিন আমাদের আশা কি, তাহা লিখিয়াছিলাম; আজ আমাদের নিরাশার কথা লিখিতে হইল ৷ আমাদের আশা, ভগবানের কৃপায়, আধ্যাত্মিক বলের বৃদ্ধিতে আমরা বলবান, তেজীয়ান, সহায়বান হইয়া জাতীয় উৎকর্ষ, স্বাধীনতা, মহত্ত্ব লাভ করিব ৷ আমাদের নিরাশা, যে পন্থা ও উপায় নির্ধারণ করিয়াছিলাম তাহার সাম্প্রত ফলবত্তা সম্বন্ধে ৷ আমরা আশা করিয়াছিলাম, বৈধ ও নির্দোষ উপায় অবলম্বন করিয়া, সাহস, দৃঢ়তা, শান্ততার সহিত জাতীয় আন্দোলন আবার জাগাইয়া ও সুপথে চালাইয়া আমরা দুই অতি প্রয়ােজনীয় উদ্দেশ্য সিদ্ধ করিতে পারিব ৷ প্রথম, লােকের মনে বৈধ উপায়ের শ্রেষ্ঠতায় ও ফলবত্তায় সম্পূর্ণ বিশ্বাস উৎপাদন করাইয়া এখন যে গুপ্তহত্যা ও বলপ্রয়ােগের দিকে যুবকদের মনের আকর্ষণ হইতেছে, তাহা বন্ধ করিতে পারিব ৷ দ্বিতীয়ত, রাজপুরুষগণকে বৈধ প্রতিরােধের বলে সভ্য উপায়ে দুই জাতির হিতের সংঘর্ষজনিত যুদ্ধ চালাইবার আবশ্যকতা হৃদয়ঙ্গম কাইয়া দেশের উন্নতি সাধন করিব এবং দেশের স্বাধীনতা ক্রমে ক্রমে আদায় করিব ৷ আমাদের এখনও বিশ্বাস যে এই উপায় অবলম্বন করিতে পারিলে দুইটাই উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইবে ৷ কিন্তু সেই উপায় অবলম্বন করা একপ্রকার অসাধ্য হইয়া উঠিতেছে ৷
প্রথম অন্তরায়, লােকের অনাস্থা ও উৎসাহের অভাব ৷ বৈধ উপায় অবলম্বন করিতে পারিলে আমরা উন্নতির দিকে অগ্রসর হইতে পারিব, প্রৌঢ়লােকের মধ্যে এই বিশ্বাস আছে, – মধ্যপন্থীর অনুমােদিত উপায়ের উপর হইতে সকলের আস্থা উঠিয়া গিয়াছে; কিন্তু তাহা হইলেও কি হয়, গবর্ণমেণ্ট সেই বৈধ উপায় অবলম্বন করিতে দিবেন না ৷ তাহাদের হাতে যখন আইন করিবার সম্পূর্ণ অধিকার, জজ ম্যাজিষ্ট্রেট পুলিস তাহাদেরই চাকর, দেশবাসীর প্রভু, তখন কোনও বৈধ আন্দোলন করা অসম্ভব ৷ আমরা দেখিয়াছি, এই মতের এত প্রাবল্য হইতেছে যে বৈধ আন্দোলন ও বৈধ প্রতিরােধ আর চলে না ৷ লােকের আস্থা নাই, শ্রদ্ধা নাই, – শ্রদ্ধারহিত কৰ্ম্ম বৃথা, তাহার ফল ‘ন চৈবামুত্র নাে ইহ’ ৷ বৈধ আন্দোলনের পক্ষে স্বাধীন চিন্তা ও স্বাধীন মতের প্রকাশ ও প্রতিষ্ঠা আবশ্যক, নচেৎ আন্দোলন হইতে পারে না ৷ সভাসমিতির স্বাধীন অধিকার চাই, তাহা সভা বন্ধ আইনের ঘােষণায় অপহৃত হইয়াছে, – সংবাদপত্রের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার চাই, তাহা নূতন রাজদ্রোহ আইনে সত্বর অপহৃত হইবে – স্থায়ী সভা সংঘটনে ও সেই সভার কর্মতৎপরতায় স্বাধীন মত প্রতিষ্ঠার অধিকার চাই, তাহা বিনা কারণে সভা-সমিতি বন্ধ করিবার আইন থাকায় অপহৃত হইয়াছে ৷ রহিল কি? মনে মনে স্বাধীন চিন্তা পােষণ করাও বিপজ্জনক, কেননা বিনা কারণে খানাতল্লাসী, অমূলক সন্দেহে গ্রেপ্তার এবং বিনা অভিযােগে নির্বাসন, প্রত্যেক স্বাধীনতা ৷ এই তিন বিপদ সৰ্ব্বদা গ্রাস করিতে উদ্যত ৷ এই অবস্থায় আন্দোলন করা এক প্রকার আইনে নিষিদ্ধ ৷ নির্জীব আন্দোলন নিরর্থক, সজীব আন্দোলন অবৈধ ৷ কাজেই লােকে আর আন্দোলন করিতে অনিচ্ছুক ৷
দ্বিতীয় অন্তরায়, বিপ্লবকারীর অদমনীয় উদ্দাম চেষ্টা ৷ যাহাতে আমরা দমিয়া যাই, তাহাতে বিপ্লবকারীর তেজ ও উৎসাহ জাগিয়া উঠে ৷ যত নিপীড়ন কর সে তত হত্যা করিয়া প্রাণত্যাগ করিতে ছুটিয়া আসে ৷ আশু বিশ্বাসের হত্যার পরে সেই অশান্তি প্রায় নিবিয়া গিয়াছিল ৷ নূতন চীফ জষ্টিসের সুবিচারে, রিফৰ্ম্মের কোলাহলে, হুগলীতে জাতীয় পক্ষের পুনরুত্থানে লােকের মনে আশা উৎপন্ন হইয়াছিল যে আবার বুঝি বৈধভাবে জাতীয় জাগরণকে উদ্দেশ্যের দিকে চালাইবার সুবিধা দেওয়া হইয়াছে ৷ সেই আশার আলােক নিবিড়তর অন্ধকারে মিশিয়া গিয়াছে ৷ এদিকে রাজনীতিক ডাকাইতির জন্য দেশময় ধরপাকড় ও খানাতল্লাসীতে বিপ্লবকারীদের তেজ ও আশা উদ্দীপিত হইয়াছে ৷ নাসিকে খন, পৰ্ববাঙ্গলা ৷ রেলওয়েতে গুলি চালান, হাইকোর্টে সামসুল আলমের হত্যা, এইরূপে দিন দিন নূতন ঘটনা হইতে আরম্ভ হইয়াছে ৷ ইহার শেষ কোথায়? প্রথম ফল, রাজপুরুষগণ সমস্ত দেশের উপর চটিয়াছেন, আন্দোলনের অবশিষ্ট ক্ষীণ বহ্নিটুকু নিবাইতে বদ্ধপরিকর হইয়াছেন ৷ নিগ্রহের বৃদ্ধিতে গুপ্তহত্যার বৃদ্ধি, গুপ্তহত্যার বৃদ্ধিতে নিগ্রহের বৃদ্ধি, এইরূপ ক্রমের শেষ কোথায়? রাজপুরুষদের বিবেচনারহিত ক্রোধ, বিপ্লবকারীর বিবেচনারহিত উন্মত্ততা, এই দুই শক্তির সংঘর্ষে, নিষ্পেষণে পড়িয়া আমাদের আন্দোলন মরিয়া যাইতেছে ৷
এ অবস্থায় করিব কি? যখন গবর্ণমেন্টের ইচ্ছা যে আমরা চুপ করিয়া থাকি, নিশ্চেষ্ট হইয়া থাকি, যখন দেশবাসী আর রব করিতে চায় না, চেষ্টা করিতে চায় , তখন নীরব ও নিশ্চেষ্ট থাকাই শ্রেয়ঃ ৷ ইংরাজ বলে জাতীয় পক্ষের সংবাদপত্র ও বক্তাই দায়ী, তাহাদিগকে যদি থামাইতে পারি, বিপ্লবকারীর চেষ্টা আপনি থামিয়া যাইবে ৷ তবে তাহাই হউক ৷ আমরা থামিয়া গেলাম, নীরব, নিশ্চেষ্ট হইলাম, দেখি তােমাদের অভিযােগ সত্য না মিথ্যা ৷ রাজনীতি চর্চা কয়েকদিন পরিত্যাগ করিয়া আমরা ভারতের আধ্যাত্মিক শক্তি, ভারতের চিন্তার গভীরতা কর্মক্ষেত্রে আনাইবার চেষ্টা করি ৷
Home
Sri Aurobindo
Books
Bengali
Share your feedback. Help us improve. Or ask a question.