All writings in Bengali and Sanskrit including brief works written for the newspaper 'Dharma' and 'Karakahini' - reminiscences of detention in Alipore Jail.
All writings in Bengali and Sanskrit. Most of the pieces in Bengali were written by Sri Aurobindo in 1909 and 1910 for 'Dharma', a Calcutta weekly he edited at that time; the material consists chiefly of brief political, social and cultural works. His reminiscences of detention in Alipore Jail for one year ('Tales of Prison Life') are also included. There is also some correspondence with Bengali disciples living in his ashram. The Sanskrit works deal largely with philosophical and cultural themes. (This volume will be available both in the original languages and in a separate volume of English translations.)
আমাদের বাহুবল নাই, যুদ্ধের উপকরণ নাই, শিক্ষা নাই, রাজশক্তি নাই, আমাদের কিসেতে আশা, কোথায় সেই বল যাহার ভরসায় আমরা প্রবল শিক্ষিত য়ুরােপীয় জাতির অসাধ্য কাজ সাধন করিতে প্রয়াসী হই? পণ্ডিত ও বিজ্ঞব্যক্তিগণ বলেন, ইহা বালকের উদ্দাম দুরাশা, উচ্চ আদর্শের মদে উন্মত্ত অবিবেকী লােকের শূন্য স্বপ্ন, যুদ্ধই স্বাধীনতালাভের একমাত্র পন্থা, আমরা যুদ্ধ করিতে অসমর্থ ৷ স্বীকার করিলাম, আমরা যুদ্ধ করিতে অসমর্থ, আমরাও যুদ্ধ করিতে পরামর্শ দিই না ৷ কিন্তু ইহা কি সত্যকথা যে বাহুবলই শক্তির আধার, না শক্তি আরও গৃঢ়, গভীর মূল হইতে নিঃসৃত হয়? সকলে স্বীকার করিতে বাধ্য যে কেবলমাত্র বাহুবলে কোন বিরাট কাৰ্য্য সাধিত হওয়া অসম্ভব ৷ যদি দুই পরস্পরবিরােধী সমান বলশালী শক্তির সংঘর্ষ হয়, যাহার নৈতিক ও মানসিক বল অধিক, যাহার ঐক্য, সাহস, অধ্যবসায়, উৎসাহ, দৃঢ়প্রতিজ্ঞা, স্বার্থত্যাগ উৎকৃষ্ট, যাহার বিদ্যা, বুদ্ধি, চতুরতা, তীক্ষ্ণদৃষ্টি, দূরদর্শিতা, উপায়-উদ্ভাবনী শক্তি বিকশিত, তাহারই জয় নিশ্চয় হইবে ৷ এমন কি বাহুবলে, সংখ্যায়, উপকরণে যে অপেক্ষাকৃত হীন, সে-ও নৈতিক ও মানসিক বলের উৎকর্ষে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীকে হঠাইতে পারে ৷ ইহার দৃষ্টান্ত ইতিহাসের প্রত্যেক পৃষ্ঠায় লিখিত রহিয়াছে ৷ তবে বলিতে পার যে, বাহুবল অপেক্ষা নৈতিক ও মানসিক বলের গুরুত্ব আছে, কিন্তু বাহুবল না থাকিলে নৈতিক বল ও মানসিক বলকে কে রক্ষা করিবে? যথার্থ কথা ৷ কিন্তু ইহাও দেখা গিয়াছে যে দুই চিন্তাপ্রণালী, দুই সম্প্রদায়, দুই পরস্পরবিরােধী সভ্যতার সংঘর্ষে যে-পক্ষের দিকে বাহুবল, রাজশক্তি, যুদ্ধের উপকরণ প্রভৃতি ৷ উপায় পূর্ণমাত্রায় ছিল, তাহার পরাজয় হইয়াছে, যে-পক্ষের দিকে এই সকল উপায় আদবে ছিল না, তাহার জয় হইয়াছে ৷ এই ফলের বৈপরীত্য কেন হয়? যতাে ধৰ্ম্মস্ততাে জয়ঃ, কিন্তু ধৰ্ম্মের পিছনে শক্তি চাই, নচেৎ অধৰ্ম্মের অভ্যুত্থান, ধৰ্ম্মের গ্লানি স্থায়ী থাকিবার কথা ৷ বিনা কারণে কাৰ্য্য হয় না ৷ জয়ের কারণ শক্তি ৷ কোন্ শক্তিতে দুর্বল পক্ষের জিত হয়, প্রবল পক্ষের শক্তি পরাজিত বা বিনষ্ট হয়? আমরা ঐতিহাসিক দৃষ্টান্তসকল পরীক্ষা করিলে বুঝিতে পারিব, আধ্যাত্মিক শক্তির বলে এই অঘটন ঘটিয়াছে, আধ্যাত্মিক শক্তিই বাহুবলকে তুচ্ছ করিয়া মানবজাতিকে জানায় যে এই জগৎ ভগবানের রাজ্য, অন্ধ স্থূলপ্রকৃতির লীলাক্ষেত্র নহে ৷ শুদ্ধ আত্মা শক্তির উৎস, যে আদ্যাপ্রকৃতি গগনে অযুত সূৰ্য্য ঘুরাইতে থাকে, অঙ্গুলিস্পর্শে পৃথিবী দোলাইয়া মানবের সৃষ্ট পূৰ্ব্বগৌরবের চিহ্নসকল ধ্বংস করে, সেই আদ্যাপ্রকৃতি শুদ্ধ আত্মার অধীন ৷ সেই প্রকৃতি অসম্ভবকে ৷ সম্ভব করে, মূককে বাচাল করে, পঙ্গুকে গিরি উল্লঙ্ঘন করিবার শক্তি দেয় ৷ সমস্ত জগৎ সেই শক্তির সৃষ্টি ৷ যাহার আধ্যাত্মিক বল বিকশিত তাহার জয়ের উপকরণ আপনিই সৃষ্ট হয়, বাধাবিপত্তি আপনি সরিয়া গিয়া অনুকূল অবস্থা আনায়, কাৰ্য্য করিবার ক্ষমতা আপনিই ফুটিয়া তেজস্কিনী ও ক্ষিপ্রগতি হয় ৷ য়ুরােপ আজকাল এই soul-force বা আধ্যাত্মিক শক্তিকে আবিষ্কার করিতেছে, এখনও তাহাতে সম্পূর্ণ বিশ্বাস নাই, তাহার ভরসায় কাৰ্য্য করিতে প্রবৃত্তি হয় ৷ না ৷কিন্তু ভারতের শিক্ষা, সভ্যতা, গৌরব, বল, মহত্ত্বের মূলে আধ্যাত্মিক শক্তি ৷ যতবার ভারতজাতির বিনাশকাল আসন্ন বলিয়া সকলের প্রতীতি হইবার কথা ছিল, আধ্যাত্মিক বল গুপ্ত উৎস হইতে উগ্রস্রোতে প্রবাহিত হইয়া মুমূর্ষ ভারতকে পুনরুজ্জীবিত করিয়াছে, আর সকল উপযােগী শক্তিও সৃজন করিয়াছে ৷ এখনও সেই উৎস শুকাইয়া যায় নাই, আজও সেই অদ্ভুত মৃত্যুঞ্জয় শক্তির ক্রীড়া হইতেছে ৷
কিন্তু স্কুলজগতের সকল শক্তির বিকাশ সময়সাপেক্ষ, অবস্থার উপযুক্ত ক্রমে সমুদ্রের ভাটা ও জোয়ারের ন্যায় কমিয়া-বাড়িয়া শেষে সম্পূর্ণ কাৰ্য্যকরী হয় ৷ আমাদের মধ্যেও তাহাই হইতেছে ৷ এখন সম্পূর্ণ ভাটা, জোয়ারের মুহূর্তের অপেক্ষায় রহিয়াছি ৷ মহাপুরুষদের তপস্যা, স্বার্থত্যাগীর কষ্টস্বীকার, সাহসীর আত্মবিসর্জন, যােগীর যােগশক্তি, জ্ঞানীর জ্ঞানসঞ্চার, সাধুর শুদ্ধতা, আধ্যাত্মিক বলের উৎস ৷ একবার এই নানাবিধ পুণ্য ভারতকে সঞ্জীবনী সুধায় ভাসাইয়া মৃত জাতিকে জীবিত, বলিষ্ঠ, তেজস্বী করিয়া তুলিয়াছিল, আবার সেই তপােবল নিজের মধ্যে নিরুদ্ধ হইয়া অদম্য, অজেয় হইয়া বাহির হইতে উদ্যত হইয়াছে ৷ কয়েক বৎসরের নিপীড়ন, দুর্বলতা ও পরাজয়ের ফলে ভারতবাসী নিজের মধ্যে শক্তির উৎস অন্বেষণ করিতে শিখিতেছে ৷ বক্তৃতার উত্তেজনা নহে, ম্লেচ্ছদত্ত বিদ্যা নহে, সভাসমিতির ভাবসঞ্চারিণী শক্তি নহে, সংবাদপত্রের ক্ষণস্থায়ী প্রেরণা নহে, নিজের মধ্যে আত্মার বিশাল নীরবতায় ভগবান ও জীবের সংযােগে যে গভীর অবিচলিত অভ্রান্ত শুদ্ধ সুখদুঃখজয়ী পাপপুণ্যবর্জিত শক্তি সম্ভূত হয়, সেই মহাসৃষ্টিকারিণী, মহাপ্রলয়ঙ্করী, মহাস্থিতিশালিনী, জ্ঞানদায়িনী মহাসরস্বতী, ঐশ্বৰ্য্যদায়িনী মহালক্ষ্মী, শক্তিদায়িনী মহাকালী, সেই সহস্র তেজের সংযােজনে ৷ একীভূতা চণ্ডী প্রকট হইয়া ভারতের কল্যাণে ও জগতের কল্যাণে কৃতােদ্যম হইবে ৷ ভারতের স্বাধীনতা গৌণ উদ্দেশ্য মাত্র, মুখ্য উদ্দেশ্য ভারতের সভ্যতার শক্তিপ্রদর্শন এবং জগৎময় সেই সভ্যতার বিস্তার ও অধিকার ৷ আমরা যদি পাশ্চাত্য সভ্যতার বলে, সভাসমিতির বলে, বক্তৃতার জোরে, বাহুবলে, স্বাধীনতা বা স্বায়ত্তশাসন আদায় করিতে পারিতাম, সেই মুখ্য উদ্দেশ্য সাধিত হইত না ৷ ভারতীয় সভ্যতার বলে, আধ্যাত্মিক শক্তিতে, আধ্যাত্মিক শক্তির সৃষ্ট সূক্ষ্ম ও স্থূল উপায়ে স্বাধীনতা অর্জন করিতে হইবে ৷ সেইজন্য ভগবান আমাদের পাশ্চাত্যভাবযুক্ত আন্দোলন ধ্বংস করিয়া বহির্মুখী শক্তিকে অন্তর্মুখী করিয়াছেন ৷ ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় দিব্যচক্ষুতে যাহা দেখিয়াছিলেন, দেখিয়া বার বার বলিতেন, শক্তিকে অন্তর্মুখী কর, কিন্তু সময়ের দোষে তখন কেহ তাহা করিতে পারে নাই, স্বয়ং করিতে পারেন নাই, কিন্তু ভগবান আজ তাহা ঘটাইয়াছেন ৷ ভারতের শক্তি অন্তর্মুখী হইয়াছে ৷ যখন আবার বহির্মুখী হইবে, আর সেই স্রোত ফিরিবে না, কেহ রােধ করিতে পারিবে না ৷ সেই ত্রিলােকপাবনী গঙ্গা ভারত প্লাবিত করিয়া, পৃথিবী প্লাবিত করিয়া অমৃতস্পর্শে জগতের নূতন যৌবন আনয়ন করিবে ৷
Home
Sri Aurobindo
Books
Bengali
Share your feedback. Help us improve. Or ask a question.