All writings in Bengali and Sanskrit including brief works written for the newspaper 'Dharma' and 'Karakahini' - reminiscences of detention in Alipore Jail.
All writings in Bengali and Sanskrit. Most of the pieces in Bengali were written by Sri Aurobindo in 1909 and 1910 for 'Dharma', a Calcutta weekly he edited at that time; the material consists chiefly of brief political, social and cultural works. His reminiscences of detention in Alipore Jail for one year ('Tales of Prison Life') are also included. There is also some correspondence with Bengali disciples living in his ashram. The Sanskrit works deal largely with philosophical and cultural themes. (This volume will be available both in the original languages and in a separate volume of English translations.)
পূৰ্ব্ব প্রবন্ধে বলা হইয়াছে যে, গীতােক্ত ধৰ্ম্ম সকলের আচরণীয়, গীতােক্ত যােগে সকলের অধিকার আছে অথচ সেই ধৰ্ম্মের পরমাবস্থা কোনও ধৰ্ম্মোক্ত পরমাবস্থাপেক্ষা নূন নহে ৷ গীতােক্ত ধর্ম নিষ্কাম কর্মীর ধর্ম ৷ আমাদের দেশে আৰ্য্যধৰ্ম্মের পুনরুত্থানের সহিত একটী সন্ন্যাসমুখী স্রোত দেশময় ব্যাপ্ত হইতেছে ৷ রাজযােগ-প্রয়াসী ব্যক্তির মন সহজে গৃহকর্মে বা গৃহবাসে সন্তুষ্ট থাকিতে চায় না ৷ তাহার যােগাভ্যাসে ধ্যানধারণার বহুলায়াসপূর্ণ চেষ্টা আবশ্যক ৷ অল্প মনঃ-ক্ষোভে অথবা বাহ্যস্পর্শে ধ্যানধারণার স্থিরতা বিচলিত হয় বা সম্পূর্ণ বিনাশপ্রাপ্ত হয় ৷ গৃহে এইরূপ বাধা প্রচুর পরিমাণে বৰ্ত্তমান ৷ অতএব যাঁহারা পূর্বজন্মপ্রাপ্ত যােগলিঙ্গ লইয়া জন্মগ্রহণ করেন, তাহাদের পক্ষে তরুণ বয়সে সন্ন্যাসের দিকে আকৃষ্ট হওয়া একান্ত স্বাভাবিক ৷ যখন এইরূপ জন্মপ্রাপ্ত যােগলিসুদের সংখ্যা অধিক হইয়া দেশময় সেই শক্তিসংক্রমণে যুবকসম্প্রদায়ের মধ্যে সন্ন্যাসমুখী স্রোত প্রবল হয়, তখন দেশের কল্যাণপথের দ্বারও উন্মুক্ত হয়, সেই কল্যাণসংশ্লিষ্ট বিপদের আশঙ্কাও হয় ৷ বলা হইয়াছে, সন্ন্যাসধৰ্ম্ম উৎকৃষ্ট ধৰ্ম্ম, কিন্তু সেই ধর্ম গ্রহণে অল্প লােকই অধিকারী ৷ যাঁহারা বিনা অধিকারে সেই পথে প্রবেশ করেন, তাহারা শেষে অল্পদূর অগ্রসর হইয়া অর্ধপথে তামসিক অপ্রবৃত্তিজনক আনন্দের অধীন হইয়া নিবৃত্ত হন ৷ এই অবস্থায় ইহজীবন সুখে কাটে বটে, কিন্তু জগতের হিতও সাধিত হয় না, যােগের উর্দ্ধতম সােপানে আরােহণও দুঃসাধ্য হইয়া উঠে ৷ আমাদের যেরূপ কাল ও অবস্থা আগত, তাহাতে রজঃ ও সত্ত্ব অর্থাৎ প্রবৃত্তি ও জ্ঞান জাগাইয়া তমােবজ্জনপূর্বক দেশের সেবায় ও জগতের সেবায় জাতির আধ্যাত্মিক শক্তি ও নৈতিক বল পুনরুজ্জীবিত করা এখন প্রধান কর্তব্য ৷ এই জীর্ণ শীর্ণ তমঃপীড়িত স্বার্থসীমাবদ্ধ জাতির ঔরসে জ্ঞানী শক্তিমান ও উদার আর্যজাতির পুনঃসৃষ্টি করিতে হইবে ৷ এই উদ্দেশ্য সাধনার্থই বঙ্গদেশে এত শক্তিবিশিষ্ট যােগবলপ্রাপ্ত জীবের জন্ম হইতেছে ৷ ইহারা যদি সন্ন্যাসের মােহিনী শক্তি দ্বারা আকৃষ্ট হইয়া স্বধৰ্ম্মত্যাগ ও ঈশ্বরদত্ত কৰ্ম্ম প্রত্যাখ্যান করেন, তবে ধৰ্ম্মনাশে জাতির ধ্বংস হইবে ৷ তরুণসম্প্রদায় যেন মনে করেন যে, ব্রহ্মচর্যাশ্রম শিক্ষা ও চরিত্রগঠনের সময়ের জন্য নির্দিষ্ট; এই আশ্রমের পরবর্তী অবস্থা গৃহস্থা-শ্রম বিহিত আছে ৷ যখন কুলরক্ষা ও ভাবী আৰ্যজাতি গঠন দ্বারা পূর্বপুরুষদের নিকট ঋণমুক্ত হইতে পারিব, যখন সৎকর্ম ও ধনসঞ্চয় দ্বারা সমাজের ঋণ এবং জ্ঞান দয়া প্রেম ও শক্তি বিরণে জগতের ঋণ শােধ হইবে, যখন ভারতজননীর হিতার্থ উদার ও মহৎ কর্ম সম্পাদনে জগন্মাতা সন্তুষ্ট হইবেন, তখন বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস আচরণ করা দোষাবহ হইবে না ৷ অন্যথা ধৰ্ম্মসঙ্কর ও অধৰ্ম্মবৃদ্ধি হয় ৷ পূৰ্ব্বজন্মে ঋণমুক্ত বালসন্ন্যাসীদের কথা বলিতেছি না; কিন্তু অনধিকারীর সন্ন্যাসগ্রহণ নিন্দনীয় ৷ অযথা বৈরাগ্যবাহুল্যে ও ক্ষত্রিয়ের স্বধর্মত্যাগপ্রবণতায় মহান ও উদার বৌদ্ধধর্ম দেশের অনেক হিত সম্পাদন করিয়াও অনিষ্টও করিয়াছে এবং শেষে ভারত হইতে বিতাড়িত হইয়াছে ৷ নবযুগের নবীন ধর্মের মধ্যে যেন এই দোষ প্রবিষ্ট না হয় ৷
গীতায় শ্রীকৃষ্ণ পুনঃ পুনঃ অর্জুনকে সন্ন্যাস আচরণ করিতে নিষেধ করিয়াছেন কেন? তিনি সন্ন্যাসধৰ্ম্মের গুণ স্বীকার করিয়াছেন, কিন্তু বৈরাগ্য ও কৃপাপরবশ পার্থ বার বার জিজ্ঞাসা করাতেও শ্রীকৃষ্ণ কর্মপথের আদেশ প্রত্যাহার করেন নাই ৷ অর্জুন জিজ্ঞাসা করিলেন, যদি কৰ্ম্ম হইতে কামনারহিত যােগযুক্ত বুদ্ধিই শ্রেষ্ঠ হয়, তবে তুমি কেন গুরুজনহত্যারূপ অতি ভীষণ কৰ্ম্মে আমাকে নিযুক্ত করিতেছ? অনেকে অর্জুনের প্রশ্ন পুনরুত্থাপন করিয়াছেন, এক-একজন শ্রীকৃষ্ণকে নিকৃষ্ট ধর্মোপদেষ্টা ও কুপথপ্রবর্তক বলিতেও কুণ্ঠিত হন নাই ৷ উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ বুঝাইয়াছেন যে, সন্ন্যাস হইতে ত্যাগ শ্রেষ্ঠ, স্বেচ্ছাচার হইতে ভগবানকে স্মরণ করিয়া নিষ্কামভাবে স্বধৰ্ম্মসেবাই শ্রেষ্ঠ ৷ ত্যাগের অর্থ কামনাত্যাগ, স্বার্থত্যাগ, সেই ত্যাগ শিক্ষার জন্য পৰ্বতে বা নির্জন স্থানে আশ্রয় লইতে হয় না, কর্মক্ষেত্রেই কৰ্ম্ম দ্বারা সেই শিক্ষা হয়, কৰ্ম্মই যােগপথে আরােহণের উপায় ৷ এই বিচিত্র লীলাময় জগৎ জীবের আনন্দ উৎপাদনের জন্য সৃষ্ট ৷ ইহা ভগবানের উদ্দেশ্য নহে যে, এই আনন্দময় ক্রীড়া সাঙ্গ হউক ৷ তিনি জীবকে তাঁহার সখা ও খেলার সাথী করিয়া জগতের আনন্দের স্রোত চালাইতে চান ৷ আমরা যে অজ্ঞান অন্ধকারে আছি, ক্রীড়ার সুবিধার জন্য তিনি দুরে রহিয়াছেন বলিয়াই সে অন্ধকার ঘিরিয়া থাকে ৷ তাহার নির্দিষ্ট এমন অনেক উপায় আছে যে, সেগুলি অবলম্বন করিলে অন্ধকার হইতে নিষ্কৃতি লাভ করিয়া তাহার সান্নিধ্যপ্রাপ্তি হয় ৷ যাঁহারা তাহার ক্রীড়ায় বিরক্ত বা বিশ্রামপ্রার্থী হন, তিনি তাহাদের অভিলাষ পূর্ণ করেন ৷ কিন্তু যাঁহারা তাহারই জন্য সেই উপায় অবলম্বন করেন, ভগবান তাঁহাদিগকেই ইহলােকে বা পরলােকে খেলার উপযুক্ত সাথী করেন ৷ অর্জুন শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়তম সখা ও ক্রীড়ার সহচর বলিয়া গীতার গূঢ়তম শিক্ষা লাভ করিলেন ৷ সেই গৃঢ়তম শিক্ষা কি, তাহা পূর্ব প্রবন্ধে বুঝাইবার চেষ্টা করা হইয়াছে ৷ ভগবান অর্জুনকে বলিলেন, কৰ্ম্মসন্ন্যাস জগতের পক্ষে অনিষ্টকর এবং ত্যাগহীন সন্ন্যাস বিড়ম্বনা মাত্র ৷ সন্ন্যাসে যে ফললাভ হয়, ত্যাগেও সেই ফললাভ হয়, অর্থাৎ অজ্ঞান হইতে মুক্তি, সমতা, শক্তিলাভ, আনন্দলাভ, শ্রীকৃষ্ণলাভ ৷ সৰ্ব্বজনপূজিত ব্যক্তি যাহা করেন, লােকে তাহাই আদর্শ করিয়া আচরণ করে, অতএব তুমি যদি কৰ্ম্মসন্ন্যাস কর, সকলে সেই পথের পথিক হইয়া ধৰ্ম্মসঙ্কর ও অধৰ্ম্মপ্রাধান্য সৃষ্টি করিবে ৷ তুমি কৰ্ম্মফলস্পৃহা ত্যাগ করিয়া মানুষের সাধারণ ধৰ্ম্ম আচরণ কর, আদর্শস্বরূপ হইয়া সকলকে নিজ নিজ কর্মপথে অগ্রসর হইবার প্রেরণা দাও, তাহা হইলেই আমার সাধর্য্যপ্রাপ্ত ও প্রিয়তম সুহৃদ হইবে ৷ তাহার পরে তিনি বুঝাইয়াছেন যে, কৰ্ম্মৰ্বারা শ্রেয়ঃপথে আরূঢ় হইয়া সেই পথে শেষ অবস্থায় শম অর্থাৎ সৰ্ব্ব-আরম্ভ-ত্যাগই বিহিত ৷ ইহাও কৰ্ম্মসন্ন্যাস নহে, অহঙ্কার বর্জনপূর্বক বহুলায়াসপূর্ণ রাজসিক চেষ্টাত্যাগে ভগবানের সহিত যুক্ত হইয়া, গুণাতীত হইয়া তাহার শক্তিচালিত যন্ত্রের ন্যায় কৰ্ম্ম করা ৷ সেই অবস্থায় জীবের এই স্থায়ী জ্ঞান হয় যে, আমি কৰ্ত্তা নহি, আমি দ্রষ্টা, আমি ভগবানের অংশ, আমার স্বভাবরচিত এই দেহরূপ কৰ্ম্মময় আধারে ভগবানের শক্তিই লীলার কাৰ্য্য করে ৷ জীব সাক্ষী ও ভােক্তা, প্রকৃতি কৰ্ত্তা, পরমেশ্বর অনুমন্তা ৷ এই জ্ঞানপ্রাপ্ত পুরুষ শক্তির কোনও কাৰ্য্যারম্ভে কামনা-রূপ সাহায্য বা বাধা দিতে ইচ্ছুক হন না ৷ শক্তির অধীন হইয়া দেহ-মন-বুদ্ধি ঈশ্বরাদিষ্ট কর্মে প্রবৃত্ত হয় ৷ কুরুক্ষেত্রের ভীষণ হত্যাকাণ্ডও যদি ভগবানের অনমত হয় এবং স্বধৰ্ম্মপথে যদি তাহাই ঘটে, তাহাতেও অলিপ্তবদ্ধি কামনারহিত জ্ঞানপ্রাপ্ত জীবের পাপস্পর্শ হয় না ৷ কিন্তু ইহা অতি অল্পলােকের লভ্য জ্ঞান ও আদর্শ, ইহা সাধারণ ধৰ্ম্ম হইতে পারে না ৷ তবে এই পথের সাধারণ পথিকের কৰ্ত্তব্য কৰ্ম্ম কি? তাহারও এই জ্ঞান কতক পরিমাণে প্রাপ্য যে, তিনি যন্ত্রী আমি যন্ত্র ৷ সেই জ্ঞানের বলে ভগবানকে স্মরণ করিয়া স্বধৰ্ম্মসেবাই তাহার পক্ষে আদিষ্ট ৷
শ্রেয়া স্বধৰ্ম্মো বিগুণঃ পরধর্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ ৷ স্বভাবনিয়তং কৰ্ম্ম কুৰ্বান্নাপ্নোতি কিল্বিষম্ ॥
স্বধৰ্ম্ম স্বভাবনিয়ত কৰ্ম্ম ৷ কালের গতিতে স্বভাবের অভিব্যক্তি ও পরিণতি হয় ৷ কালের গতিতে মানুষের যে সাধারণ স্বভাব গঠিত হয়, সেই স্বভাবনিয়ত কৰ্ম্ম যুগধৰ্ম্ম ৷ জাতির কৰ্ম্মগতিতে যে জাতীয় স্বভাব গঠিত হয়, সেই স্বভাবনিয়ত কৰ্ম্ম জাতির ধর্ম ৷ ব্যক্তির কগতিতে যে স্বভাব গঠিত হয়, সেই স্বভাবনিয়ত কৰ্ম্ম ব্যক্তির ধর্ম ৷ এই নানা ধৰ্ম্ম সনাতন ধর্মের সাধারণ আদর্শ দ্বারা পরস্পর-সংযুক্ত ও শৃঙ্খলিত হয় ৷ সাধারণ ধার্মিকের পক্ষে এই ধৰ্ম্মই স্বধৰ্ম্ম ৷ ব্রহ্মচারী অবস্থায় এই ধৰ্ম্মসেবার জন্য জ্ঞান ও শক্তি সঞ্চিত হয়, গৃহস্থাশ্রমে এই ধৰ্ম্ম অনুষ্ঠিত হয়, এই ধৰ্ম্মের সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানে বানপ্রস্থে বা সন্ন্যাসে অধিকারপ্রাপ্তি হয় ৷ ইহাই ধৰ্ম্মের সনাতন গতি ৷
Home
Sri Aurobindo
Books
Bengali
Share your feedback. Help us improve. Or ask a question.