CWSA Set of 37 volumes
Writings in Bengali and Sanskrit Vol. 9 of CWSA 715 pages 2017 Edition
Bengali
 PDF   

Editions

ABOUT

All writings in Bengali and Sanskrit including brief works written for the newspaper 'Dharma' and 'Karakahini' - reminiscences of detention in Alipore Jail.

Writings in Bengali and Sanskrit

Sri Aurobindo symbol
Sri Aurobindo

All writings in Bengali and Sanskrit. Most of the pieces in Bengali were written by Sri Aurobindo in 1909 and 1910 for 'Dharma', a Calcutta weekly he edited at that time; the material consists chiefly of brief political, social and cultural works. His reminiscences of detention in Alipore Jail for one year ('Tales of Prison Life') are also included. There is also some correspondence with Bengali disciples living in his ashram. The Sanskrit works deal largely with philosophical and cultural themes. (This volume will be available both in the original languages and in a separate volume of English translations.)

The Complete Works of Sri Aurobindo (CWSA) Writings in Bengali and Sanskrit Vol. 9 715 pages 2017 Edition
Bengali
 PDF   

বাংলা রচনা




কারাকাহিনী




আৰ্য আদর্শ ও গুণত্রয়

“কারাগৃহ ও স্বাধীনতা’ শীর্ষক প্রবন্ধে আমি কয়েকজন নিরপরাধী কয়েদীর মানসিক ভাব বর্ণনা করিয়া ইহাই প্রতিপন্ন করিবার চেষ্টা করিয়াছি যে, আৰ্য্যশিক্ষার গুণে কারাবাসেও ভারতবাসীর আন্তরিক-স্বাধীনতারূপ মহামূল্য পৈতৃকসম্পত্তি বিনষ্ট হয় না – উপরন্তু ঘাের অপরাধীর মধ্যেও সেই সহস্রবর্ষ সঞ্চিত আৰ্য্যচরিত্র-গত দেবভাবও ভগ্নাবশিষ্টরূপে বৰ্ত্তমান থাকে ৷ আৰ্য্যশিক্ষার মূলমন্ত্র সাত্ত্বিকভাব ৷ যে সাত্ত্বিক, সে বিশুদ্ধ ৷ সাধারণতঃ মনুষ্যমাত্রেই অশুদ্ধ ৷ রজোগুণের প্রাবল্যে, তমােগুণের ঘাের নিবিড়তায় এই অশুদ্ধি পরিপুষ্ট ও বর্ধিত হয় ৷ মনের মালিন্য দুই প্রকার, – জড়তা, বা অপ্রবৃত্তিজনিত মালিন্য; ইহা তমােগুণপ্রসূত ৷ দ্বিতীয়, – উত্তেজনা বা কুপ্রবৃত্তিজনিত মালিন্য; ইহা রজোগুণপ্রসূত ৷ তমােগুণের লক্ষণ অজ্ঞানমােহ, বুদ্ধির স্থূলতা, চিন্তার অসংলগ্নতা, আলস্য, অতিনিদ্রা, কর্মে আলস্যজনিত বিরক্তি, নিরাশা, বিষাদ, ভয়, এক কথায় যাহা কিছু নিশ্চেষ্টতার পরিপােষক তাহাই ৷ জড়তা ও অপ্রবৃত্তি অজ্ঞানের ফল, উত্তেজনা ও কুপ্রবৃত্তি ভ্রান্তজ্ঞানসভৃত ৷ কিন্তু তমােমালিন্য অপনােদন করিতে হইলে রজোগুণের উদ্রেক ৷ দ্বারাই তাহা দূর করিতে হয় ৷ রজোগুণই প্রবৃত্তির কারণ এবং প্রবৃত্তিই নিবৃত্তির প্রথম সােপান ৷ যে জড়, সে নিবৃত্ত নয়, – জড়ভাব জ্ঞানশূন্য, আর জ্ঞানই নিবৃত্তির মার্গ ৷ কামনাশূন্য হইয়া যে কর্মে প্রবৃত্ত হয়, সে নিবৃত্ত; কৰ্ম্মত্যাগ নিবৃত্তি নয় ৷ সেই জন্য ভারতের ঘাের তামসিক অবস্থা দেখিয়া স্বামী বিবেকানন্দ বলিতেন, “রজোগুণ চাই, দেশে কর্মবীর চাই, প্রবৃত্তির প্রচণ্ড স্রোত বহুক ৷ তাহাতে যদি পাপও আসিয়া পড়ে, তাহাও এই তামসিক নিশ্চেষ্টতা অপেক্ষা সহস্রগুণে ভাল ৷”

সত্যই আমরা ঘাের তমােমধ্যে নিমগ্ন হইয়া সত্ত্বগুণের দোহাই দিয়া মহাসাত্ত্বিক সাজিয়া বড়াই করিতেছি ৷ অনেকের এই মত দেখিতে পাই যে, আমরা সাত্ত্বিক বলিয়াই রাজসিক জাতিসকল দ্বারা পরাজিত, সাত্ত্বিক বলিয়া এইরূপ অবনত ও অধঃপতিত ৷ তাহারা এই যুক্তি দেখাইয়া খৃষ্টধর্ম হইতে হিন্দুধৰ্ম্মের শ্রেষ্ঠতা প্রতিপন্ন করিতে সচেষ্ট ৷ খৃষ্টানজাতি প্রত্যক্ষফলবাদী, তাহারা ধর্মের ঐহিক ফল দেখাইয়া ধৰ্ম্মের শ্রেষ্ঠতা প্রতিপাদন করিতে চেষ্টা করেন; তাহারা বলেন – খৃষ্টানজাতিই জগতে প্রবল, অতএব খৃষ্টান ধৰ্ম্ম শ্রেষ্ঠ ধৰ্ম্ম ৷ আর আমাদের মধ্যে অনেকে বলেন – ইহা ভ্রম; ঐহিক ফল দেখিয়া ধর্মের শ্রেষ্ঠতা নির্ণয় করা যায় না, পারলৌকিক ফল দেখিতে হয়; হিন্দুরা অধিক ধাৰ্মিক বলিয়া, অসুরপ্রকৃতি বলবান পাশ্চাত্যজাতির অধীন হইয়াছে ৷ কিন্তু এই যুক্তির মধ্যে আৰ্যজ্ঞানবিরােধী ঘাের ভ্রম নিহিত ৷ সত্ত্বগুণ কখনই অবনতির কারণ হইতে পারে না ৷ এমনকি সত্ত্বপ্রধান জাতি দাসত্ব-শৃঙ্খলিত হইয়া থাকিতে পারে না ৷ ব্রহ্মতেজই সত্ত্বগুণের মুখ্যফল, ক্ষত্ৰতেজ ব্রহ্মতেজের ভিত্তি ৷ আঘাত পাইলে শান্ত ব্রহ্মতেজ হইতে ক্ষত্ৰতেজের স্ফুলিঙ্গ নির্গত হয়, চারিদিক জ্বলিয়া উঠে ৷ যেখানে ক্ষত্ৰতেজ নাই, সেখানে ব্রহ্মতেজ টিকিতে পারে না ৷ দেশে যদি একজন প্রকৃত ব্রাহ্মণ থাকে সে একশ ক্ষত্রিয় সৃষ্টি করে ৷ দেশের অবনতির কারণ সত্ত্বগুণের আতিশয্য নয়, রজোগুণের অভাব, তমােগুণের প্রাধান্য ৷ রজোগুণের অভাবে আমাদের অন্তর্নিহিত সত্ত্ব ম্লান হইয়া তমােমধ্যে গুপ্ত হইয়া পড়িল ৷ আলস্য, মােহ, অজ্ঞান, অপ্রবৃত্তি, নিরাশা, বিষাদ, নিশ্চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে দেশের দুর্দশা অবনতিও বর্ধিত হইতে লাগিল ৷ এই মেঘ প্রথমে লঘু ও বিরল ছিল, কালের গতিতে ক্রমশঃ এতদূর নিবিড়তর হইয়া পড়িল, অজ্ঞান অন্ধকারে ডুবিয়া আমরা এমন নিশ্চেষ্ট ও মহদাকাঙক্ষাবর্জিত হইয়া পড়িলাম যে, ভগবৎপ্রেরিত মহাপুরুষগণের উদয়েও সেই অন্ধকার পূর্ণ তিরােহিত হইল না ৷ তখন সূৰ্য্য-ভগবান রজোগুণজনিত প্রবৃত্তি দ্বারা দেশরক্ষার সঙ্কল্প করিলেন ৷

জাগ্রত রজঃশক্তি প্রচণ্ডভাবে কার্যকরী হইলে তমঃ পলায়নােদ্যত হয় বটে কিন্ত অন্যদিকে স্বেচ্ছাচার, কপ্রবৃত্তি ও উদ্দাম উচ্ছলতা প্রভৃতি আসরিক ভাব আসিবার আশঙ্কা ৷ রজঃশক্তি যদি স্ব স্ব প্রেরণায় উন্মত্ততার বিশাল প্রবৃত্তির উদরপূরণকেই লক্ষ্য করিয়া কাৰ্য্য করে, তাহা হইলে এই আশঙ্কার যথেষ্ট কারণও আছে ৷ রজোগুণ উদ্ধৃঙ্খলভাবে স্বপথগামী হইলে অধিককাল টিকিতে পারে না, ক্লান্তি আসে, তমঃ আসে, প্রচণ্ড ঝটিকার পরে আকাশ নির্মল পরিষ্কার না হইয়া মেঘাচ্ছন্ন বায়ুস্পন্দনরহিত হইয়া পড়ে ৷ রাষ্ট্রবিপ্লবের পরে ফ্রান্সের এই পরিণাম হইয়াছে ৷ সেই রাষ্ট্রবিপ্লবে রজোগুণের ভীষণ প্রাদুর্ভাব, বিপ্লবান্তে তামসিকতার অম্লাধিক পুনরুত্থান, আবার রাষ্ট্রবিপ্লব, আবার ক্লান্তি, শক্তিহীনতা, নৈতিক অবনতি, ইহাই গত শতবর্ষে ফ্রান্সের ইতিহাস ৷ যতবার সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতারূপ আদর্শ-জনিত সাত্ত্বিক প্রেরণা ফ্রান্সের প্রাণে জাগিয়াছে, ততবারই ক্রমশঃ রজোগুণ প্রবল হইয়া সত্ত্বসেবাবিমুখ আসুরিকভাবে পরিণতি লাভ করিয়া স্বপ্রবৃত্তিপূরণে যত্নবান হইয়াছে ৷ ফলতঃ, তমােগুণের পুনরাবির্ভাবে ফ্রান্স তাহার পূর্বসঞ্চিত মহাশক্তি হারাইয়া ম্রিয়মাণ বিষম অবস্থায় হরিশ্চন্দ্রের মত না স্বর্গে না মর্ত্যে দাড়াইয়া রহিয়াছে ৷ এইরূপ পরিণাম এড়াইবার একমাত্র উপায় প্রবল রজঃশক্তিকে সত্ত্ব-সেবায় নিযুক্ত করা ৷ যদি সাত্ত্বিকভাব জাগ্রত হইয়া রজঃশক্তির চালক হয়, তাহা হইলে তমােগুণের পুনঃ প্রাদুর্ভাবের ভয়ও নাই, উদ্দাম শক্তিও শৃঙ্খলিত নিয়ন্ত্রিত হইয়া উচ্চ আদর্শের বশে দেশের ও জগত্রে হিতসাধন করে ৷ সত্ত্বোদ্রেকের উপায় ধর্মভাব – স্বার্থকে ডুবাইয়া পরার্থে সমস্ত শক্তি অর্পণ – ভগবানকে আত্মসমর্পণ করিয়া সমস্ত জীবনকে এক মহা ও পবিত্র যজ্ঞে পরিণত করা ৷ গীতায় কথিত আছে, সত্বরজঃ উভয়ে তমঃ নাশ করে; একা সত্ত্ব কখন তমঃকে পরাজয় করিতে পারে না ৷ সেইজন্য ভগবান অধুনা ধৰ্ম্মের পুনরুত্থান করাইয়া আমাদের অন্তর্নিহিত সত্ত্বকে জাগাইয়া পরে রজঃশক্তিকে দেশময় ছড়াইয়া দিয়াছেন ৷ রামমােহন রায় প্রভৃতি ধৰ্ম্মোপদেশক মহাত্মাগণ সত্ত্বকে পুনরুদ্দীপিত করিয়া নবযুগ প্রবর্তন করিয়া দিয়াছেন ৷ ঊনবিংশ শতাব্দীতে ধৰ্ম্মজগতে যেমন জাগরণ হইয়াছিল, রাজনীতি বা সমাজে তেমন হয় নাই ৷ কারণ ক্ষেত্র প্রস্তুত ছিল না, সেইজন্য প্রচুর বীজ বপিত হইয়াও শস্য দেখা দেয় নাই ৷ ইহাতেও ভারতবর্ষের উপর ভগবানের দয়া ও প্রসন্নতা বুঝা যায় ৷ রাজসিক ভাবপ্রসূত জাগরণ কখনও স্থায়ী বা পূর্ণ কল্যাণপ্রদ হইতে পারে না ৷ তৎপূর্বে জাতির অন্তরে কতকাংশে ব্রহ্মতেজ উদ্দীপিত হওয়া আবশ্যক ৷ সেইজন্য এতদিন রজঃশক্তির স্রোত রুদ্ধ ছিল ৷ ১৯০৫ খৃষ্টাব্দে রজঃশক্তির যে বিকাশ হইয়াছে তাহা সাত্ত্বিকভাব পূর্ণ ৷ এই নিমিত্ত ইহাতে যে উদ্দামভাব দেখা দিয়াছে তাহাতেও আশঙ্কার বিশেষ কারণ নাই, কেননা ইহা রজঃসাত্ত্বিকের খেলা; এ খেলায় যাহা কিছু উদ্দাম বা উচ্ছল ভাব তাহা অচিরে নিয়মিত ও শৃঙ্খলিত হইবেই ৷ বাহ্যশক্তির দ্বারা নহে, ভিতরে যে ব্রহ্মতেজ, যে সাত্ত্বিকভাব, তাহা দ্বারাই ইহা বশীভূত ও নিয়মিত হইবে ৷ ধর্মভাব প্রচার করিয়া আমরা সেই ব্রহ্মতেজ ও সাত্ত্বিকভাবের পােষকতা করিতে পারি মাত্র ৷

পূর্বেই বলিয়াছি পরার্থে সর্বশক্তি নিয়ােগ করা সত্ত্বোদ্রেকের এক উপায় ৷ আর আমাদের রাজনীতিক জাগরণে এই ভাবের যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় ৷ কিন্তু এই ভাব রক্ষা করা কঠিন ৷ যেমন ব্যক্তির পক্ষে কঠিন জাতির পক্ষে আরও কঠিন ৷ পরার্থের মধ্যে স্বার্থ অলক্ষিতভাবে ছুটিয়া আসে এবং যদি আমাদের বুদ্ধি বিশুদ্ধ না হয়, এমন ভ্রমে পতিত হইতে পারি যে আমরা পরার্থের দোহাই দিয়া স্বার্থকে আশ্রয় করিয়া পরহিত, দেশহিত, মনুষ্যজাতির হিত ডুবাইব অথচ নিজের ভ্রম বুঝিতে পারিব না ৷ ভগবৎসেবা সত্ত্বোদ্রেকের অন্য উপায় ৷ কিন্তু সেই পথেও হিতে বিপরীত হইতে পারে, ভগবৎসান্নিধ্যরূপ আনন্দ পাইয়া আমাদের সাত্ত্বিক-নিশ্চেষ্টতা জন্মিতে পারে, সেই আনন্দের আস্বাদ ভােগ করিতে করিতে দুঃখকাতর দেশের প্রতি ও মানবজাতির সেবায় পশ্চাদমুখ হইতে পারি ৷ ইহাই সাত্ত্বিকভাবের বন্ধন ৷ যেমন রাজসিক অহঙ্কার আছে, তেমনি সাত্ত্বিক অহঙ্কারও আছে ৷ যেমন পাপ মনুষ্যকে বদ্ধ করে, তেমনি পুণ্যও বদ্ধ করে ৷ সম্পূর্ণ বাসনাশূন্য হইয়া অহঙ্কার ত্যাগপূৰ্ব্বক ভগবানকে আত্মসমর্পণ না করিলে পূর্ণ স্বাধীনতা নাই ৷ এই দুটী অনিষ্ট ত্যাগ করিতে হইলে প্রথম বিশুদ্ধ বুদ্ধির দরকার ৷ দেহাত্মক বুদ্ধি বৰ্জন করিয়া মানসিক স্বাধীনতা অর্জন করাই বুদ্ধি-শােধনের পূর্ববর্তী অবস্থা ৷ মন স্বাধীন হইলে জীবের আয়ত্ত হয়, পরে মনকে জয় করিয়া বুদ্ধির আশ্রয়ে মানুষ স্বার্থের হাত হইতে অনেকটা পরিত্রাণ লাভ করে ৷ ইহাতেও স্বার্থ সম্পূর্ণভাবে আমাদিগকে ত্যাগ করে না ৷ শেষ স্বার্থ মুমুক্ষুত্ব, পরদুঃখকে ভুলিয়া নিজের আনন্দে ভাের হইয়া থাকিবার ইচ্ছা ৷ ইহাও ত্যাগ করিতে হয় ৷ সৰ্ব্বভূতে নারায়ণকে উপলব্ধি করিয়া সেই সৰ্ব্বভূতস্থ নারায়ণের সেবা ইহার ঔষধ; ইহাই সত্ত্বগুণের পরাকাষ্ঠা ৷ ইহা হইতেও উচ্চতর অবস্থা আছে, তাহা সত্ত্বগুণকেও অতিক্রম করিয়া গুণাতীত হইয়া সম্পূর্ণভাবে ভগবানকে আশ্রয় করা ৷ গুণাতীত্যের বর্ণনা গীতায় কথিত আছে, যেমন –

নান্যং গুণেভ্যঃ কৰ্ত্তারং যদা দ্রষ্টাহনুপশ্যতি ৷
গুণেভ্যশ্চ পরং বেত্তি মদ্ভাবং সােহধিগচ্ছতি ॥
গুণনেতানতীত্য ত্রী দেহী দেহসমুদ্ভবা ৷
জন্মমৃত্যুজরাদুঃখৈর্বিমুক্তোহমৃতমতে ॥
প্রকাশঞ্চ প্রবৃত্তিঞ্চ মােহমেব চ পাণ্ডব ৷
ন দ্বেষ্টি সংপ্রবৃত্তানি ন নিবৃত্তানি কাঙক্ষতি ॥
উদাসীনবদাসীনাে গুণৈৰ্যো ন বিচাল্যতে ৷
গুণা বৰ্ত্তন্ত ইত্যেব যােহবতিষ্ঠতি নেঙ্গতে ॥
সমদুঃখসুখঃ স্বস্থঃ সমলােষ্টাশ্মকাঞ্চনঃ ৷
তুল্যপ্রিয়াপ্রিয়াে ধীরস্তুল্যনিন্দাত্মসংস্তুতিঃ ॥
মানাপমানয়ােস্তুল্যস্কুল্যো মিত্রারিপক্ষয়ােঃ ৷
সৰ্বারম্ভপরিত্যাগী গুণাতীতঃ স উচ্যতে ॥
মাঞ্চ যােহব্যভিচারেণ ভক্তিযােগেন সেবতে ৷
স গুণান্ সমতীত্যৈতান্ ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে ॥

“যখন জীব সাক্ষী হইয়া গুণত্রয় অর্থাৎ ভগবানের ত্রৈগুণ্যময়ী শক্তিকেই একমাত্র কৰ্ত্তা বলিয়া দেখে এবং এই গুণত্রয়েরও উপর শক্তির প্রেরক ঈশ্বরকে জানিতে পারে, তখন সে-ই ভগবৎ-সাধৰ্ম লাভ করে ৷ তখন দেহস্থ জীব স্কুল ও সূক্ষ্ম এই দুই প্রকার দেহসভৃত গুণত্রয়কে অতিক্রম করিয়া জন্ম মৃত্যু জরাদুঃখ হইতে বিমুক্ত হইয়া অমরত্ব ভােগ করে ৷ সত্ত্বজনিত জ্ঞান, রজোজনিত প্রবৃত্তি বা তমােজনিত নিদ্রা নিশ্চেষ্টা ভ্রমস্বরূপ মােহ আসিলে বিরক্ত হয় না, এই গুণত্রয়ের আগমন নির্গমনে সমান ভাব রাখিয়া উদাসীনের ন্যায় স্থির হইয়া থাকে, গুণগ্রাম তাহাকে বিচলিত করিতে পারে না, এই সবই গুণের স্বধৰ্ম্মজাত বৃত্তি বলিয়া দৃঢ় থাকে ৷ যাহার পক্ষে সুখদুঃখ সমান, প্রিয়াপ্রিয় সমান, নিন্দাস্তুতি সমান, কাঞ্চন লােষ্ট্র উভয়ই প্রস্তরের তুল্য, যে ধীরস্থির, নিজের মধ্যে অটল, যাহার নিকট মান-অপমান একই, মিত্রপক্ষ ও শত্রুপক্ষ সমান প্রিয়, যে স্বয়ং প্রেরিত হইয়া কোন কাৰ্য্যারম্ভ করে না, সকল কর্ম ভগবানকে সমর্পণ করিয়া তাহারই প্রেরণায় কৰ্ম্ম করে, তাহাকেই গুণাতীত বলে ৷ যে আমাকে নির্দোষ ভক্তিযােগে সেবা করে, সে-ই এই তিন গুণকে অতিক্রম করিয়া ব্ৰহ্মপ্রাপ্তির উপযুক্ত হয় ৷”

এই গুণাতীত অবস্থা লাভ সকলের সাধ্য না হইলেও তাহার পূর্ববর্তী অবস্থা লাভ সত্ত্বপ্রধান পুরুষের অসাধ্য নহে ৷ সাত্ত্বিক অহঙ্কারকে ত্যাগ করিয়া জগতের সকল কার্য্যে ভগবানের ত্রৈগুণ্যময়ী শক্তির লীলা দেখা ইহার সর্বপ্রথম উপক্রম ৷ ইহা বুঝিয়া সাত্ত্বিক কৰ্ত্তা কর্তৃত্ব-অভিমান ত্যাগে ভগবানে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণপূর্বক কৰ্ম্ম করেন ৷

গুণত্রয় ও গুণাতীত্য সম্বন্ধে যাহা বলিলাম, তাহা গীতার মূল কথা ৷ কিন্তু এই শিক্ষা সাধারণতঃ গৃহীত হয় নাই, আজ পর্যন্ত যাহাকে আমরা আৰ্য্যশিক্ষা বলি, তাহা প্রায় সাত্ত্বিক গুণের অনুশীলন ৷ রজোগুণের আদর এই দেশে ক্ষত্রিয় জাতির লােপে লুপ্ত হইয়াছে ৷ অথচ জাতীয় জীবনে রজঃশক্তিরও নিরতিশয় প্রয়ােজন আছে ৷ সেইজন্য গীতার দিকে লােকের মন আজকাল আকৃষ্ট হইয়াছে ৷ গীতার শিক্ষা পুরাতন আৰ্য্যশিক্ষাকে ভিত্তি করিয়াও অতিক্রম করিয়াছে ৷ গীতােক্ত ধৰ্ম্ম রজোগুণকে ভয় করে না, তাহাতে রজঃশক্তিকে সত্ত্বসেবায় নিযুক্ত করিবার পন্থা আছে, প্রবৃত্তিমার্গে মুক্তির উপায় প্রদর্শিত আছে ৷ এই ধৰ্ম্ম অনুশীলনের জন্য জাতির মন কিরূপে প্রস্তুত হইতেছে, তাহা জেলেই প্রথম হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিলাম ৷ এখনও স্রোত নিৰ্ম্মল হয় নাই, এখনও কলুষিত ও আবিল, কিন্তু অতিরিক্ত বেগ যখন অল্প প্রশমিত হইবে, তখন তাহার মধ্যে যে বিশুদ্ধ শক্তি লুক্কায়িত, তাহার নিখুঁত কাৰ্য্য হইবে ৷

যাঁহারা আমার সঙ্গে বন্দী ও এক অভিযােগে অভিযুক্ত, তাঁহাদের মধ্যে অনেকে নির্দোষী বলিয়া মুক্তি পাইয়াছেন, আর সকলে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলিয়া দণ্ডিত ৷ মানবসমাজে হত্যা হইতে গুরুতর অপরাধ হইতে পারে না ৷ জাতীয় স্বার্থপ্রণােদিত হইয়া যে হত্যা করে, তাহার ব্যক্তিগত চরিত্র কলুষিত না হইতে পারে কিন্তু তাহাতে সামাজিক হিসাবে অপরাধের গুরুত্ব লাঘব হইল না ৷ ইহাও স্বীকার করিতে হয় যে হত্যার ছায়া অন্তরাত্মায় পড়িলে মনে যেন রক্তের দাগ বসিয়া থাকে, ক্রুরতার সঞ্চার হয় ৷ ক্রুরতা বর্বরােচিত গুণ, মনুষ্য উন্নতির ক্রমবিকাশে যে সকল গুণ হইতে অল্পে অল্পে বৰ্জিত হইতেছে, সেই সকলের মধ্যে ক্রুরতা প্রধান ৷ ইহা সম্পূর্ণ বর্জন করিতে পারিলে মানবজাতির উন্নতির পথে একটী বিঘ্নকর কণ্টক উন্মলিত হইয়া যাইবে ৷ আসামীর দোষ ধরিয়া লইলে ইহাই বুঝিতে হইবে যে, ইহা রজঃশক্তির ক্ষণিক উদ্দাম উচ্ছলতা মাত্র ৷ তাহাদের মধ্যে এমন সাত্ত্বিক শক্তি নিহিত যে এই ক্ষণিক উচ্ছঙ্খলতার দ্বারা দেশের স্থায়ী অমঙ্গল সাধিত হইবার কোনও আশঙ্কা নাই ৷

অন্তরের যে স্বাধীনতার কথা পূৰ্ব্বে বলিয়াছি, আমার সঙ্গীগণের সে স্বাধীনতা স্বভাবসিদ্ধ গুণ ৷ যে কয়েকদিন আমরা একসঙ্গে এক বৃহৎ দালানে রক্ষিত ছিলাম, আমি তাঁহাদের আচরণ ও মনের ভাব বিশেষ মনযােগের সহিত লক্ষ্য করিয়াছি ৷ দুইজন ভিন্ন কাহারও মুখে বা কথায় ভয়ের ছায়া পৰ্য্যন্ত দেখিতে পাই নাই ৷ প্রায় সকলেই তরুণবয়স্ক, অনেকে অল্পবয়স্ক বালক, যে অপরাধে ধৃত সাব্যস্ত হইলে তাহার দণ্ড যেরূপ ভীষণ তাহাতে দৃঢ়মতি পুরুষেরও বিচলিত হইবার কথা ৷ আর ইহারা বিচারে খালাস হইবার আশাও বড় রাখিতেন না ৷ বিশেষতঃ ম্যাজিষ্ট্রেটের কোর্টে সাক্ষী ও লেখাসাক্ষ্যের যেরূপ ভীষণ আয়ােজন জমিতে লাগিল, তাহা দেখিয়া আইন-অনভিজ্ঞ ব্যক্তির মনে সহজেই ধারণা হয় যে, নির্দোষীরও এই ফাদ হইতে নির্গমনের পথ নাই ৷ অথচ তাঁহাদের মুখে ভীতি বা বিষন্নতার পরিবর্তে কেবল প্রফুল্লতা, সরল হাস্য, নিজের বিপদকে ভুলিয়া ধৰ্ম্মের ও দেশের কথা ৷ আমাদের ওয়ার্ডে প্রত্যেকের নিকটে দুই-চারিখানি বই থাকায় একটী ক্ষুদ্র লাইব্রেরী জমিয়াছিল ৷ এই লাইব্রেরীর অধিকাংশই ধৰ্ম্মের বই, গীতা, উপনিষদ, বিবেকানন্দের পুস্তকাবলী, রামকৃষ্ণের কথামৃত ও জীবনচরিত, পুরাণ, স্তবমালা, ব্রহ্মসঙ্গীত ইত্যাদি ৷ অন্য পুস্তকের মধ্যে বঙ্কিমের গ্রন্থাবলী, স্বদেশীগানের অনেক বই, আর য়ুরােপীয় দর্শন, ইতিহাস ও সাহিত্যবিষয়ক অল্পস্বল্প পুস্তক ৷ সকালে কেহ কেহ সাধনা করিতে বসিত, কেহ কেহ বই পড়িত, কেহ কেহ আস্তে গল্প করিত ৷ সকালের এই শান্তিময় নীরবতায় মাঝে মাঝে হাসির লহরীও উঠিত ৷ “কাচেরী” না থাকিলে কেহ কেহ ঘুমাইত, কেহ কেহ খেলা করিত – যে দিন যে খেলা জোটে, আসক্তি কাহারও নাই ৷ কোন দিন মণ্ডলে বসিয়া কোন শান্ত খেলা – কোন দিন বা দৌড়াদৌড়ি লাফালাফি ৷ দিনকতক ফুটবল চলিল, ফুটবলটা অবশ্য অপূৰ্ব্ব উপকরণে গঠিত ৷ দিনকতক কানামাছিই চলিল, এক একদিন ভিন্ন ভিন্ন দল গঠন করিয়া একদিকে জুজুৎসু শিক্ষা অন্যদিকে উচ্চ লম্ফ ও দীর্ঘ লম্ফ আর একদিকে drafts বা দশপঁচিশ ৷ দুই চারিজন গম্ভীর প্রৌঢ় লােক ভিন্ন সকলেই প্রায় বালকদের অনুরােধে এই সকল খেলায় যােগ দিলে ৷ দেখিলাম ইহাদের মধ্যে বয়স্ক লােকেরও বালস্বভাব ৷ সন্ধ্যাবেলায় গানের মজলিস জমিত ৷ উল্লাস, শচীন্দ্র, হেমদাস, যাহারা গানে ৷ সিদ্ধ, তাহাদের চারিদিকে আমরা সকলে বসিয়া গান শুনিতাম ৷ স্বদেশী বা ধৰ্ম্মের গান ব্যতীত অন্য কোনরূপ গান হইত না ৷ এক একদিন কেবল আমােদ করিবার ইচ্ছায় উল্লাসকর হাসির গান, অভিনয়, Ventriloquism অনুকরণ বা গেজেলের গল্প করিয়া সন্ধ্যা কাটাইত ৷ উল্লাসকরের ন্যায় অদ্ভুত ক্ষমতাশালী ও অপূৰ্ব্ব চরিত্র লােক আমি আর কখনও দেখি নাই ৷ শুনিয়াছিলাম বটে এমন লােক মাঝে মাঝে জন্মায় যাহার অন্তরাত্মায় মায়ার প্রভাব এত শিথিল যে সামান্য দেহের ধর্ম ব্যতীত তাহার অন্য কোন বন্ধন নাই ৷ “লিপ্যতে ন স পাপেন ৷ পদ্মপত্রমিবাম্ভসা” ৷ এই উক্তির যাথার্থ্য ও প্রকৃত মৰ্ম্ম এবার উল্লাসকরের আচরণে প্রত্যক্ষ উপলব্ধি করিলাম ৷ সামান্য মানুষের ন্যায় কৰ্ম্ম করেন, হাসেন, গল্প করেন, খেলেন, ভুল করেন, ন্যায় করেন, অন্যায় করেন, অথচ ভিতরে সেই নিৰ্ম্মল দেবভাব ৷ গায় হাজার কাদা পড়িলেও তাহা গায় লাগিয়া থাকে না ৷ আমাদের রাগ সুখ দুঃখ ভয় স্বার্থ হিংসা দ্বেষ তাহার জন্যে সৃষ্ট হয় নাই ৷ তাহার আছে প্রেম, আনন্দ, হাস্য, পরােপকার, পরসেবা, ফুলের স্বভাবসিদ্ধ স্বচ্ছতা ও প্রফুল্লতা ৷ উল্লাসকর এই প্রকৃতিবিশিষ্ট লােক ৷ তাহার মধ্যে আমি কখনও লেশমাত্র ক্রোধ, দুঃখ, দৈন্য, বিকার, বিষন্নতা দেখি নাই ৷ কিছুতেই আসক্তি নাই ৷ তাহার নিকট যে যাহা চাহিত তাহা তাহাকে বিলাইয়া দিতেন, নিজের যেন কিছুই নহে ৷ কোনও ভাবেও তিনি বদ্ধ নন ৷ এইমাত্র সকলের মনােরঞ্জনার্থ হাসি তামাসা করিতেছিলেন, পরমুহূর্তে দেখিলাম হঠাৎ ধ্যানমগ্ন হইয়া সব ভুলিয়া গিয়াছেন ৷ কেহ ধ্যানভঙ্গ করিলেও তাহার আসে যায় না ৷ হাসিমুখে তাহার আবদার সহ্য করিতেন ৷ সবই তাঁহার পক্ষে লীলা, যেমন সংসার, তেমনই জেল, যেমন নিবৃত্তি তেমনই প্রবৃত্তি ৷ ভেদ নাই, বিকার নাই ৷ এতদূর সাত্ত্বিক স্বাধীন ভাব অন্য সকলের মধ্যে না থাকিলেও প্রায় সকলেরই অল্পবিস্তর ছিল ৷ মােকদ্দমায় কেহ মন দিত না, সকলেই ধৰ্ম্মে বা আনন্দে দিন কাটাইত ৷ এই নিশ্চিন্ত ভাব কঠিন কুক্ৰিয়াভ্যস্ত হৃদয়ের পক্ষে অসম্ভব; তাহাদের মধ্যে কাঠিন্য, ক্রুরতা, কুক্ৰিয়াসক্তি, কুটিলতা লেশমাত্র ছিল না ৷ কি হাস্য কি কথা কি খেলা তাহাদের সকলই আনন্দময়, পাপহীন, প্রেমময় ৷

এই মানসিক স্বাধীনতার ফল অচিরে বিকাশপ্রাপ্ত হইতে লাগিল ৷ এইরূপ ক্ষেত্রেই ধৰ্ম্মবীজ বপন হইলে সৰ্বাঙ্গসুন্দর ফল সম্ভবে ৷ যীশু কয়েকজন বালককে দেখাইয়া শিষ্যদিগকে বলিয়াছিলেন, “যাহারা এই বালকদের তুল্য, তাঁহারাই ব্রহ্মলােক প্রাপ্ত হন ৷” জ্ঞান ও আনন্দ সত্ত্বগুণের লক্ষণ ৷ যাঁহারা দুঃখকে দুঃখ জ্ঞান করেন না, যাঁহারা সকল অবস্থায় আনন্দিত ও প্রফুল্লিত, তাহাদেরই যােগে অধিকার ৷ জেলে রাজসিক ভাব প্রশ্রয় পায় না, আর নির্জন কারাগারে প্রবৃত্তির পরিপােষক কিছুই নাই ৷ এই অবস্থায় অসুরের মন চিরাভ্যস্ত রজঃশক্তির উপকরণের অভাবে আহত ব্যাঘ্রের ন্যায় নিজেকে নাশ করে ৷ পাশ্চাত্য কবিগণ যাহাকে Eating one's own heart বলেন, সেই অবস্থা ঘটে ৷ ভারতবাসীর মন সেই নির্জনতায়, সেই বাহ্যিক কষ্টের মধ্যে চিরন্তন টানে আকৃষ্ট হইয়া ভগবানের নিকট ছুটিয়া যায় ৷ আমাদের ইহাই ঘটিয়াছে ৷ জানি না কোথা হইতে একটী স্রোত আসিয়া সকলকে ভাসাইয়া নিয়া গেল ৷ যে কখনও ভগবানের নাম করে নাই, সেও সাধনা করিতে শিখিল ৷ আর সেই পরম দয়ালুর দয়া অনুভব করিয়া আনন্দমগ্ন হইয়া পড়িল ৷ অনেক দিনের অভ্যাসে যােগীর যাহা হয়, এই বালকদের দু’চারি মাসের সাধনায় তাহা হইয়া গেল ৷ রামকৃষ্ণ পরমহংস একবার বলিয়াছিলেন, “এখন তােমরা কি দেখছ – ইহা কিছুই নয়, দেশে এমন স্রোত আসছে যে, অল্প বয়সের ছেলে তিন দিন সাধনা করে সিদ্ধি পাবে ৷” এই বালকদিগকে দেখিলে তাঁহার ভবিষ্যদ্বাণীর সফলতা সম্বন্ধে সন্দেহ মাত্র থাকে না ৷ ইহারা যেন সেই প্রত্যাশিত ধৰ্ম্মপ্রবাহের মূৰ্ত্তিমন্ত পূৰ্ব্বপরিচয়; এই সাত্ত্বিকভাবের তরঙ্গ কাঠগড়া বাহিয়া চারপাঁচজন ভিন্ন অন্য সকলের হৃদয় মহানন্দে আল্লুত করিয়া তুলিত ৷ ইহার আস্বাদ যে একবার পাইয়াছে সে কখনও তাহা ভুলিতে পারে না এবং কখনও অন্য আনন্দকে ইহার তুল্য বলিয়া স্বীকার করিতে পারে না ৷ এই সাত্ত্বিকভাবই দেশের উন্নতির আশা ৷ ভ্ৰাতৃভাব, আত্মজ্ঞান, ভগবৎপ্রেম যেমন সহজে ভারতবাসীর মনকে অধিকার করিয়া কাৰ্য্যে প্রকাশ পায়, আর কোনও জাতির তেমন সহজে হওয়া সম্ভব নয় ৷ চাই তমােবজ্জন, রজোদমন, সত্ত্বপ্রকাশ ৷ ভারতবর্ষের জন্য ভগবানের গূঢ় অভিসন্ধিতে তাহাই প্রস্তুত হইতেছে ৷









Let us co-create the website.

Share your feedback. Help us improve. Or ask a question.

Image Description
Connect for updates