All writings in Bengali and Sanskrit including brief works written for the newspaper 'Dharma' and 'Karakahini' - reminiscences of detention in Alipore Jail.
All writings in Bengali and Sanskrit. Most of the pieces in Bengali were written by Sri Aurobindo in 1909 and 1910 for 'Dharma', a Calcutta weekly he edited at that time; the material consists chiefly of brief political, social and cultural works. His reminiscences of detention in Alipore Jail for one year ('Tales of Prison Life') are also included. There is also some correspondence with Bengali disciples living in his ashram. The Sanskrit works deal largely with philosophical and cultural themes. (This volume will be available both in the original languages and in a separate volume of English translations.)
কোনও দেশে কোনও মহৎ পরিবর্তন আরদ্ধ হইলে রাজনীতি, সমাজ ও ধৰ্ম্মের বাহ্যিক আকার, শিক্ষা, নীতি ইত্যাদি মানবজীবনের যতই প্রতিষ্ঠিত অঙ্গ থাকে, সকলের মধ্যে সেই পরিবর্তনের পরিণাম অতি শীঘ্রই লক্ষিত হয় ৷ সমস্ত দেশ ক্ষুব্ধ মহাসাগরের মত আলােড়িত হয় ৷ যাহা প্রতিষ্ঠিত, তাহা ভগ্ন হইয়া ধূলিসাৎ হইবার উপক্রম হয়, যাহা নবজাত ও অপূর্ণ তাহার পূর্ণতাপ্রাপ্তি ও প্রতিষ্ঠার আয়ােজন চারিদিকে আরম্ভ হয় ৷ প্রথম সেই আয়ােজনের কোনও নির্দিষ্ট প্রণালী স্থির করা কঠিন ৷ কোথা হইতে কোন আশাতীত প্রেরণা অস্ফুট বা অলক্ষিত ভাবে অল্প সংখ্যক লােকের হৃদয়ে প্রবেশ করিয়া জনসাধারণে সঞ্চারিত হয় এবং প্রথম আবেশে কয়েকটি মহৎ অনুষ্ঠানের প্রারম্ভ মাত্র করাইয়া ৷ যেন শ্রান্ত হইয়া পড়ে ৷ তরঙ্গের গায়ে তরঙ্গ উঠে, মানব সমুদ্রের শান্তিময় ও পরিচিত দৃশ্য ঘুচিয়া দিগন্তব্যাপী ঝঞ্চন ও কোলাহলে পরিণত হয় ৷ মতির একতা নাই, গতির স্থিরতা নাই ৷ সাহসীর উৎসাহ বাক্য, দুঃসাহসীর উদ্দাম কৃত্য, বিশ্বের ব্যর্থ বিজ্ঞতায়, ভীরুর নিশ্চেষ্টপােষক পরামর্শে দেশবাসীর বুদ্ধি বিব্রত হইয়া পড়ে ৷ নেতাদের ঐক্য দূরের কথা, প্রত্যেকের মতের মধ্যে অস্থিরতা ও অনৈক্য প্রকাশ পায় ৷ যিনি প্রারম্ভে শুর ও উৎসাহী, তিনিই মধ্যপথে ভীত ও নিরুৎসাহ হইয়া “থাম, ফিরিয়া যাই” বলিয়া বৃথা ডাকাডাকি আরম্ভ করেন ৷ কাল যিনি দৌড়াইতে জানিতেন, আজ তিনি মন্দগতির পক্ষপাতী, শীঘ্র একপার্শ্বে সরিয়া বসিয়া পড়িবার লক্ষণ দেখান ৷ অগ্রগামী পশ্চাগামী, বিপ্লববাদী শান্তিপ্রিয়, তেজস্বী নিস্তেজ হয় ৷ রাজনীতিক আকাশে নব নব নক্ষত্র উদিত হয়, খসিয়া পড়ে; কিন্তু নক্ষত্রের অভাব হয় না ৷ সমুদ্রের তরঙ্গ উঠে তরঙ্গ টুটে; কিন্তু সেই বিশাল আলােড়িত মহাসাগরের বিক্ষিপ্ত সংক্ষুব্ধ সহস্র তরঙ্গশ্রেণীর ন্যূনতা হয় না ৷ যাঁহারা সর্বোচ্চ রঙ্গের চূড়ায় আরূঢ়, তাহাদের এমন শক্তি থাকে না যে সেই নবােত্থানের কোলাহলকে নিবারিত করেন, অভীষ্ট পথে চালান বা সুশৃঙ্খলিত করেন ৷ তাহারা তরঙ্গের সঙ্গে ভাসিতেছেন, তরঙ্গ চালাইতেছেন না ৷ সেই উদ্বেলিত শক্তিই বিপ্লবের একমাত্র নেতা ও কৰ্ত্তা ৷ এমন সময়ও আসে যখন সকলের মনে এই ভ্রান্ত ধারণা হয় যে, বুঝি কোলাহল চিরকালের জন্য নিস্তব্ধ হইল ঝটিকা থামিয়া গেল, দেবতা নিৰ্ম্মল আকাশ প্রকট করিতে উদ্যত হইলেন; সমুদ্রের পুরাতন অধিকারী বরুণদেব বিক্ষিপ্ত তরঙ্গমালা হইতে তাহার মহিমান্বিত সৌম্যমূৰ্ত্তি প্রকাশ করিয়া হয় বিভীষিকা দেখাইয়াছেন, তাহাতেই কোলাহল থামিল, নয় বিভীষিকার বিফলতা বুঝিয়া নিৰ্বাসন-পাশ নিক্ষেপ পূৰ্ব্বক কয়েকজন ভাসমান নেতাকে আকর্ষণ করিয়া সমুদ্রের অতলগর্ভে লুকাইয়া রাখিয়াছেন এবং উদ্ধত বায়ুকুলকে আইন-কানুন নিগড়াবদ্ধ গুহাগহ্বরে নিগৃহীত করিয়াছেন ৷ অতএব আর ভয় নাই, শীঘ্র পুরাতন শান্তি ও নিশ্চেষ্টতা ফিরিয়া আসিবে ৷ এমন সময়ে এই প্রত্যাশা নিতান্তই স্বাভাবিক, কিন্তু সর্বদা শান্তিপ্রয়াসীগণ ব্যর্থমনােরথ হয় ৷ যে পরিবর্তন আরম্ভ হইয়াছে, তাহা সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত গােল থামিবার নয়, ইহাই প্রকৃতির নিয়ম ৷ ইহাতে মানুষের হাত নাই ৷ যেমন সেই বিশাল সমুদ্রম্পন্দন মানবসৃষ্ট নয়, তেমনই তাহা অকালে শান্ত করা মানবশক্তির অতীত ৷ আমাদের দেশে এই-রূপ পরিবর্তন পাঁচ বৎসর হইতে চলিতেছে, এইরূপ অনিবাৰ্য অশান্তি রাজনীতি, সমাজ, ধৰ্ম্ম, শিক্ষানীতিকে আন্দোলিত ও বিক্ষুব্ধ করিতেছে, এইরূপ ক্ষণিক রঙ্গনিগ্রহ ও মিথ্যা শান্তির প্রত্যাশার সময় আসিয়াছে ৷ যাঁহার ভ্রান্ত নীতি অনুসরণ করিয়া নিগ্রহকেই উপায় নির্ধারণ করিয়াছেন, তাঁহারা স্মরণ করুন, যে কখনও কোন ইতিহাসে এরূপ বিপ্লব নিগ্রহ দ্বারা চিরকাল স্থগিত হইবার দৃষ্টান্ত দেখা যায় না ৷ স্রোত নিগৃহীত হইলে সৰ্ব্ব বন্ধন ভাঙ্গিয়া দশগুণ বেগে বিপজ্জনক পথ অবলম্বন করিয়া বহে ৷ তাহা শান্ত করিবার একই উপায় সেই পরিবর্তনের পথ সুগম ও বাধারহিত করা ৷ যাঁহারা এই ক্ষণিক তরঙ্গ-নিগ্রহে আশ্বস্ত ও উৎসাহিত হইয়া পুরাতন স্থিতির পুনরানয়ন সঙ্কল্প করেন, তাহারাও মনে করুন যে, যাঁহারা দেশের নেতা সাজিয়া এইরূপ বিফল প্রয়াস আরম্ভ করিয়াছেন, ইতিহাসে সর্বদা দেখা গিয়াছে, তরঙ্গগুলি তাহাদিগকে গ্রাস করিয়া নিরুদ্দেশে ভাসাইয়া অকীর্তি সাগরে মগ্ন করিয়াছে ৷ আর যাঁহারা এই ক্ষণিক বাধায় ভগ্নোৎসাহ হইয়াছেন, তাহাদেরও বলি যে, ইহাও প্রকৃতির নিয়ম ৷ বিধাতা যখন পুরাতনকে ডুবাইয়া মহতী নব আশাকে সফল করিতে সকাম হন, তখন প্রথম পুরাতনের সম্পূর্ণ বিস্তার করিয়া, সৰ্ব্ব আশা লুপ্ত করিয়া, তাহার পরে অকস্মাৎ নূতনের মহাস্রোতে পুরাতনকে ভাসান ৷ আবার পুরাতনকে কতক আশা দিয়া, নূতনের তেজ কতক প্রত্যাহার করিয়া আবার অকস্মাৎ দ্বিগুণ বেগে স্রোত চালিত করেন ৷ এইরূপ ঘাতপ্রতিঘাতে, জয়-পরাজয়ে নূতন শক্তি বলান্বিত, বিশুদ্ধ ও পরিমার্জিত হয়, পুরাতনের তেজ বারবার বিফল শক্তিক্ষয়ে বিলীন হয় ৷ আমরা বিব্রত না হইয়া নির্ভীক হৃদয়ে শক্তির ক্রীড়ায় যােগ দিবার সুযােগ অপেক্ষা করি, শক্তিসঞ্চয় করি, যাহা লব্ধ তাহা রক্ষা করিবার দৃঢ় চেষ্টা করি ৷ এই সময় অগ্রসর হইবার দিন নহে, আত্মরক্ষার দিন ৷ যেন উদ্দাম আচরণে বিপক্ষকে সুযােগ দান না করি কিম্বা ভীরুতা-প্রকাশে নিগ্রহ-নীতিকে সফল না করি ৷ স্বাধিকারে দাঁড়াইয়া লব্ধ ভূমি রক্ষা করিতে করিতে শক্তিদায়িনী-ধ্যানে বন্দেমাতরম্ মন্ত্রোচ্চারণে দেবতাকে শরীরে আনিয়া রাখি ৷ সঞ্চিত শক্তি ব্যয়ের দিন আসিবে ৷
Home
Sri Aurobindo
Books
Bengali
Share your feedback. Help us improve. Or ask a question.