All writings in Bengali and Sanskrit including brief works written for the newspaper 'Dharma' and 'Karakahini' - reminiscences of detention in Alipore Jail.
All writings in Bengali and Sanskrit. Most of the pieces in Bengali were written by Sri Aurobindo in 1909 and 1910 for 'Dharma', a Calcutta weekly he edited at that time; the material consists chiefly of brief political, social and cultural works. His reminiscences of detention in Alipore Jail for one year ('Tales of Prison Life') are also included. There is also some correspondence with Bengali disciples living in his ashram. The Sanskrit works deal largely with philosophical and cultural themes. (This volume will be available both in the original languages and in a separate volume of English translations.)
আমাদের ধর্ম অতি বিশাল ও নানা শাখাপ্রশাখা শােভিত ৷ তাহার মূল গভীরতম জ্ঞানে আরূঢ়, তাহার শাখাগুলি কৰ্ম্মের অতি দূর প্রান্ত পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত ৷ যেমন গীতার অশ্বখবৃক্ষ, ঊর্ধ্বমূল ও “অবাক শাখ”, তেমনই এই ধৰ্ম্ম জ্ঞান-প্রতিষ্ঠিত, কৰ্ম্মপ্রেরক ৷ নিবৃত্তি তাহার ভিত্তি, প্রবৃত্তি তাহার গৃহ-ছাদ-দেওয়াল, মুক্তি তাহার চূড়া ৷ মানবজাতির সমস্ত জীবন এই বিশাল হিন্দুধৰ্ম্ম-বৃক্ষের আশ্রিত ৷
সকলে বলে বেদ হিন্দুধর্মের প্রতিষ্ঠা, কিন্তু অল্প লােকেই সেই প্রতিষ্ঠার স্বরূপ ও মৰ্ম্ম অবগত আছে, প্রায়ই শাখাগ্রে বসিয়া আমরা দুই একটী সুস্বাদু নশ্বর ফলের আস্বাদে মজিয়া থাকি, মূলের কোনও সন্ধান রাখি না ৷ আমরা শুনিয়াছি বটে যে বেদের দুই ভাগ আছে, কৰ্ম্মকাণ্ড ও জ্ঞানকাণ্ড, কিন্তু আসল কৰ্ম্মকাণ্ড কি বা জ্ঞানকাণ্ড কি তাহা জানি না ৷ আমরা মােক্ষমূল্লর [Max Müller] কৃত ঋগ্বেদের ব্যাখ্যা পড়িয়া থাকিতে পারি, বা শ্রীযুক্ত রমেশচন্দ্র দত্তের বাঙ্গালা অনুবাদ পড়িয়া থাকিতে পারি, কিন্তু ঋগ্বেদ কি তাহা জানি না ৷ মােক্ষমূল্লর ও দত্ত মহাশয়ের নিকট এই জ্ঞান পাইয়াছি যে ঋগ্বেদের ঋষিগণ প্রকৃতির বাহ্য পদার্থ বা ভূতসকলকে পূজা করিতেন, সূৰ্য্য চন্দ্র বায়ু অগ্নি ইত্যাদির স্তবস্তোত্রই সনাতন হিন্দুধৰ্ম্মের সেই অনাদ্যনন্ত অপৌরুষেয় মূল জ্ঞান ৷ আমরা ইহাই বিশ্বাস করিয়া বেদের, ঋষিদের ও হিন্দুধৰ্ম্মের অবমাননা করিয়া মনে করি যে আমরা বড়ই বিদ্বান, বড়ই “আলােকপ্রাপ্ত” ৷ আসল বেদে সত্য সত্য কি আছে, কেনই-বা শঙ্করাচার্য্য প্রভৃতি মহাজ্ঞানী ও মহাপুরুষগণ এই স্তবস্তোত্রগুলিকে অনাদ্যনন্ত সম্পূর্ণ অভ্রান্তজ্ঞান বলিয়া মানিতেন, তাহার কোন অনুসন্ধান করি না ৷
উপনিষদই বা কি, তাহাও অত্যল্প লােক জানে ৷ যখন উপনিষদের কথা বলি, আমরা প্রায়ই শঙ্করাচার্য্যের অদ্বৈতবাদ, রামানুজের বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ, মধ্বের দ্বৈতবাদ ইত্যাদি দার্শনিক ব্যাখ্যার কথা ভাবি ৷ আসল উপনিষদে কি লেখা রহিয়াছে, তাহার প্রকৃত অর্থ কি, কেন পরস্পরবিরােধী ষড়দর্শন এই এক মূল হইতে উৎপন্ন হইয়াছে, ষড়দর্শনের অতীত কোন্ নিগূঢ় অর্থ সেই জ্ঞানভাণ্ডারে লভ্য হয়, এই চিন্তাও করি না ৷ শঙ্কর যে অর্থ করিয়া গিয়াছেন, আমরা সহস্র বর্ষকাল সেই অর্থ গ্রহণ করিয়া আসিয়াছি, শঙ্করের ব্যাখ্যাই আমাদের বেদ, আমাদের উপনিষদ, কষ্ট করিয়া আসল উপনিষদ কে পড়ে? যদি পড়ি, শঙ্করের ব্যাখ্যার বিরােধী কোন ব্যাখ্যা দেখিলে আমরা তখনই তাহা ভুল বলিয়া প্রত্যাখ্যান করি ৷ অথচ উপনিষদের মধ্যে কেবল শঙ্করলব্ধ জ্ঞান নহে, ভূত বৰ্তমান ভবিষ্যতে যে আধ্যাত্মিক জ্ঞান বা তত্ত্বজ্ঞান লব্ধ হইয়াছে বা হইবে, সেইগুলি আৰ্য্য ঋষি ও মহাযােগী অতি সংক্ষিপ্তভাবে নিগূঢ় অর্থপ্রকাশক শ্লোকে নিহিত করিয়া গিয়াছেন ৷
উপনিষদ কি? যে অনাদ্যনন্ত গভীরতম সনাতন জ্ঞানে সনাতন ধর্ম আরূঢ়-মূল, সেই জ্ঞানের ভাণ্ডার উপনিষদ ৷ চতুর্বেদের সূক্তাংশে সেই জ্ঞান পাওয়া যায়, কিন্তু উপমাচ্ছলে স্তোত্রের বাহ্যিক অর্থ দ্বারা আচ্ছাদিত, যেমন আদর্শে মানবের প্রতিমূর্তি ৷ উপনিষদ অনাচ্ছন্ন পরম জ্ঞান, আসল মনুষ্যের অনাবৃত অবয়ব ৷ ঋগ্বেদের বক্তা ঋষিগণ ঐশ্বরিক প্রেরণায় আধ্যাত্মিক জ্ঞান শব্দ ও ছন্দে প্রকাশ করিয়াছিলেন, উপনিষদের ঋষিগণ সাক্ষাদ্দর্শনে সেই জ্ঞানের স্বরূপ দেখিয়া অল্প ও গভীর কথায় সেই জ্ঞান ব্যক্ত করিলেন ৷ অদ্বৈতবাদ ইত্যাদি কেন, তাহার পরে যত দার্শনিক চিন্তা ও বাদ ভারতে, য়ুরােপে, আসিয়ায় সৃষ্ট হইয়াছে, Nominalism, Realism, শূন্যবাদ, ডারউয়িনের ক্রমবিকাশ, কতের Positivism, হেগেল, কান্ত, স্পিনােজা, শােপনহাওর, Utilitarianism, He-donism, সকলই উপনিষদের ঋষিগণের সাক্ষাদ্দর্শনে দৃষ্ট ও ব্যক্ত হইয়াছিল ৷ কিন্তু অন্যত্র যাহা খণ্ডভাবে দৃষ্ট, সত্যের অংশমাত্র হইয়াও সম্পূর্ণ সত্য বলিয়া প্রচারিত, সত্য-মিথ্যা মিশ্রিত করিয়া বিকৃতভাবে বর্ণিত, তাহা উপনিষদে সম্পূর্ণভাবে, নিজ প্রকৃত সম্বন্ধে আবদ্ধ হইয়া, শুদ্ধ অভ্রান্তভাবে লিপিবদ্ধ হইয়াছে ৷ অতএব শঙ্করের ব্যাখ্যায় বা আর কাহারও ব্যাখ্যায় সীমাবদ্ধ না হইয়া উপনিষদের আসল গভীর ও অখণ্ড অর্থগ্রহণে সচেষ্ট হওয়া উচিত ৷
উপনিষদের অর্থ গৃঢ় স্থানে প্রবেশ করা ৷ ঋষিগণ তর্কের বলে, বিদ্যার প্রসারে, প্রেরণার স্রোতে উপনিষদুক্ত জ্ঞানলাভ করেন নাই, যে গৃঢ়স্থানে সম্যক জ্ঞানের চাবি মনের নিভৃত কক্ষে ঝুলান রহিয়াছে, যােগদ্বারা অধিকারী হইয়া সেই কক্ষে প্রবেশ করিয়া সেই চাবি নামাইয়া তাহারা অভ্রান্ত জ্ঞানের বিস্তীর্ণ রাজ্যের রাজা ৷ হইয়াছিলেন ৷ সেই চাবি হস্তগত না হইলে উপনিষদের প্রকৃত অর্থ খুলিয়া যায় না ৷ কেবল তর্কবলে উপনিষদের অর্থ করা ও নিবিড় অরণ্যে উচ্চ উচ্চ বৃক্ষাগ্র মােমবাতির আলােকে নিরীক্ষণ করা একই কথা ৷ সাক্ষাদ্দর্শনই সূৰ্য্যালােক, যাহা দ্বারা সমস্ত অরণ্য আলােকিত হইয়া অন্বেষণকারীর নয়নগােচর হয় ৷ সাক্ষাদ্দর্শন যােগেই লভ্য ৷
Home
Sri Aurobindo
Books
Bengali
Share your feedback. Help us improve. Or ask a question.