All writings in Bengali and Sanskrit including brief works written for the newspaper 'Dharma' and 'Karakahini' - reminiscences of detention in Alipore Jail.
All writings in Bengali and Sanskrit. Most of the pieces in Bengali were written by Sri Aurobindo in 1909 and 1910 for 'Dharma', a Calcutta weekly he edited at that time; the material consists chiefly of brief political, social and cultural works. His reminiscences of detention in Alipore Jail for one year ('Tales of Prison Life') are also included. There is also some correspondence with Bengali disciples living in his ashram. The Sanskrit works deal largely with philosophical and cultural themes. (This volume will be available both in the original languages and in a separate volume of English translations.)
গীতায় বিশ্বরূপ
“বন্দেমাতরম্” শীর্ষক প্রবন্ধে আমাদের শ্রদ্ধেয় বন্ধু বিপিনচন্দ্র পাল কথা প্রসঙ্গে অর্জুনের বিশ্বরূপদর্শনের উল্লেখ করিয়া লিখিয়াছেন যে গীতার একাদশ অধ্যায়ে যে বিশ্বরূপদর্শনের বর্ণনা লিখিত হইয়াছে, তাহা সম্পূর্ণ অসত্য, কবির কল্পনা মাত্র ৷ আমরা এই কথার প্রতিবাদ করিতে বাধ্য ৷ বিশ্বরূপদর্শন গীতার অতি প্রয়ােজনীয় অঙ্গ ৷ অর্জুনের মনে যে দ্বিধা ও সন্দেহ উৎপন্ন হইয়াছিল, তাহা শ্রীকৃষ্ণ তর্ক ও জ্ঞানগর্ভ উক্তি দ্বারা নিরসন করিয়াছিলেন, কিন্তু তর্ক ও উপদেশ দ্বারা যে জ্ঞান লাভ হয়, তাহা অদৃঢ়প্রতিষ্ঠিত, যে জ্ঞানের উপলব্ধি হইয়াছে, সেই জ্ঞানেরই দৃঢ়প্রতিষ্ঠা হয় ৷ সেইজন্য অৰ্জ্জুন অন্তর্যামীর অলক্ষিত প্রেরণায় বিশ্বরূপদর্শনের আকাঙ্ক্ষা জানাইলেন ৷ বিশ্বরূপদর্শনে অর্জুনের সন্দেহ চিরকালের জন্য তিরােহিত হইল, বুদ্ধি পূত ও বিশুদ্ধ হইয়া গীতার পরম রহস্য গ্রহণের যােগ্য হইল ৷ বিশ্বরূপদর্শনের পূর্বে গীতায় যে জ্ঞান কথিত হইয়াছিল, তাহা সাধকের উপযােগী জ্ঞানের বহিরঙ্গ; সেই রূপদর্শনের পরে যে জ্ঞান কথিত হয়, সে জ্ঞান গঢ় সত্য, পরম রহস্য, সনাতন শিক্ষা ৷ এই বিশ্বরূপদর্শনের বর্ণনাকে যদি কবির উপমা বলি, গীতার গাম্ভীর্য্য, সততা ও গভীরতা নষ্ট হয়, যােগলব্ধ গভীরতম শিক্ষা কয়েকটী দার্শনিক মত ও কবির কল্পনার সমাবেশে পরিণত হয় ৷ বিশ্বরূপদর্শন কল্পনা নয়, উপমা নয়, সত্য; অতিপ্রাকৃত সত্য নহে, – কেননা বিশ্ব প্রকৃতির অন্তর্গত, বিশ্বরূপ অতিপ্রাকৃত হইতে পারে না ৷ বিশ্বরূপ কারণজগতের সত্য, কারণজগতের রূপ দিব্যচক্ষুতে প্রকাশ হয় ৷ দিব্যচক্ষুপ্রাপ্ত অর্জুন কারণজগতের বিশ্বরূপ দেখিলেন ৷
সাকার ও নিরাকার
যাঁহারা নিগুণ নিরাকার ব্রহ্মের উপাসক, তাহারা গুণ ও আকারের কথা রূপক ও উপমা বলিয়া উড়াইয়া দেন; যাঁহারা সগুণ নিরাকার ব্রহ্মের উপাসক, তাহারা শাস্ত্রের অন্যরূপ ব্যাখ্যা করিয়া নির্গুণত্ব অস্বীকার করেন এবং আকারের কথা রূপক ও উপমা বলিয়া উড়াইয়া দেন ৷ সগুণ সাকার ব্রহ্মের উপাসক এই দুইজনেরই উপর খড়গহস্ত ৷ আমরা এই তিন মতকেই সঙ্কীর্ণ ও অসম্পূর্ণ জ্ঞান-সম্ভুত বলি ৷ কেননা যাঁহারা সাকার ও নিরাকার, দ্বিবিধ ব্রহ্মকে উপলব্ধি করিয়াছেন, তাহারা কিরূপে এককে সত্য, অপরকে অসত্য কল্পনা বলিয়া জ্ঞানের অন্তিম প্রমাণ নষ্ট করিবেন এবং অসীম ব্রহ্মকে সীমার অধীন করিবেন? যদি ব্রহ্মের নির্ণত্ব ও নিরাকারত্ব অস্বীকার করি, আমরা ভগবানকে খেলাে করি, এই কথা সত্য; কিন্তু যদি ব্রহ্মের সগুণত্ব ও সাকারত্ব অস্বীকার করি, আমরা ভগবানকে ৷ খেলাে করি, এই কথাও সত্য ৷ ভগবান রূপের কর্তা, স্রষ্টা, অধীশ্বর, তিনি কোন রূপে আবদ্ধ নহেন; কিন্তু যেমন সাকারত্ব দ্বারা আবদ্ধ নহেন, সেইরূপ নিরাকারত্ব দ্বারাও আবদ্ধ নহেন ৷ ভগবান সর্বশক্তিমান, স্থূলপ্রকৃতির নিয়ম বা দেশকালের নিয়মরূপ জালে তাহাকে ধরিবার ভান করিয়া আমরা যদি বলি, তুমি যখন অনন্ত, আমি তােমাকে সান্ত হইতে দিব না, চেষ্টা কর দেখি, তুমি পারিবে না, তুমি আমার অকাট্য তর্ক ও যুক্তিতে আবদ্ধ, যেমন প্রস্পেরাের ইন্দ্রজালে ফার্ডিনান্দ – এ কি হাস্যকর কথা, একি ঘাের অহঙ্কার ও অজ্ঞান ৷ ভগবান বন্ধনরহিত, নিরাকার ও সাকার, সাধককে সাকার হইয়া দর্শন দেন, – সেই আকারে পূর্ণ ভগবান রহিয়াছেন অথচ সেই সময়েই সম্পর্ণ ব্রহ্মাণ্ড ব্যাপ্ত করিয়া রহিয়াছেন ৷ কেননা ভগবান দেশকালাতীত, অতর্কগম্য, দেশ ও কাল তাহার খেলার সামগ্রী, দেশ ও কালরূপ জাল ফেলিয়া সৰ্ব্বভূতকে ধরিয়া ক্রীড়া করিতেছেন, আমরা কিন্তু তাঁহাকে সেই জালে ধরিতে পারিব না ৷ যতবার তর্ক ও দার্শনিক যুক্তি প্রয়ােগ করিয়া সেই অসাধ্য সাধন করিতে যাই, ততবার রঙ্গময় সেই জালকে সরাইয়া আমাদের অগ্রে, পিছনে, পার্শ্বে, দূরে, চারিদিকে মৃদু মৃদু হাসিয়া বিশ্বরূপ ও বিশ্বাতীত রূপ প্রসার করিয়া বুদ্ধিকে পরাস্ত করেন ৷ যে বলে আমি তাঁহাকে জানিতে পারিলাম, সে কিছুই জানে না; যে বলে, আমি জানি অথচ জানি না, সেই প্রকৃত জ্ঞানী ৷
বিশ্বরূপ
যিনি শক্তির উপাসক, কর্মযােগী, যন্ত্রীর যন্ত্র হইয়া ভগবদনির্দিষ্ট কাৰ্য্য করিতে আদিষ্ট, তাহার চক্ষে বিশ্বরূপদর্শন অতি প্রয়ােজনীয় ৷ বিশ্বরূপদর্শনের পূর্বেও তিনি আদেশলাভ করিতে পারেন, কিন্তু সেই দর্শনলাভ না হওয়া পর্যন্ত আদেশ ঠিক মঞ্জুর হয় না, রুজ হইয়াছে, পাশ হয় নাই ৷ সেই পৰ্য্যন্ত তাহার কৰ্ম্মশিক্ষার ও তৈয়ারী হইবার সময় ৷ বিশ্বরূপদর্শনে কৰ্ম্মের আরম্ভ ৷ বিশ্বরূপদর্শন অনেক প্রকার হইতে পারে – যেমন সাধনা, যেমন সাধকের স্বভাব ৷ কালীর বিশ্বরূপদর্শনে সাধক জগৎময় অপরূপ নারীরূপ দেখেন, এক অথচ অগণন দেহযুক্ত, সর্বত্র সেই নিবিড়-তিমির-প্রসারক ঘনকৃষ্ণ কুন্তলরাশি আকাশ ছাইয়া রহিয়াছে, সর্বত্র সেই রক্তাক্ত খঙ্গের আভা নয়ন ঝলসিয়া নৃত্য করিতেছে, জগৎময় সেই ভীষণ অট্টহাসির স্রোত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড চূর্ণ-বিচূর্ণ করিতেছে ৷ এই সকল কথা কবির কল্পনা নহে, অতিপ্রাকৃত উপলব্ধিকে অসম্পূর্ণ মানবভাষায় বর্ণনা করিবার বিফল চেষ্টা নহে ৷ ইহা কালীর আত্মপ্রকাশ, ইহা আমাদের মায়ের প্রকৃত রূপ, – যাহা দিব্যচক্ষুতে দেখা হইয়াছে, তাহার অনতিরঞ্জিত সরল সত্য বর্ণনা ৷ অর্জুন কালীর বিশ্বরূপ দেখেন নাই, দেখিয়াছিলেন কালরূপী শ্রীকৃষ্ণের সংহারক বিশ্বরূপ ৷ একই কথা ৷ দিব্যচক্ষুতে দেখিলেন, বাহ্যজ্ঞানহীন সমাধিতে নহে – যাহা দেখিলেন, ব্যাসদেব তাহার অবিকল অনতিরঞ্জিত বর্ণনা করিলেন ৷ স্বপ্ন নহে, কল্পনা নহে, সত্য, জাগ্রত সত্য ৷
কারণজগতের রূপ
ভগবদ-অধিষ্ঠিত তিন অবস্থার কথা শাস্ত্রে পাওয়া যায়, – প্রাজ্ঞ-অধিষ্ঠিত সুষুপ্তি, তৈজস বা হিরণ্যগর্ভ-অধিষ্ঠিত স্বপ্ন, বিরাট-অধিষ্ঠিত জাগ্রত ৷ প্রত্যেক অবস্থা এক এক জগৎ ৷ সুষুপ্তিতে কারণজগৎ, স্বপ্নে সূক্ষ্মজগৎ, জাগ্রতে স্কুল-জগৎ ৷ কারণে যাহা নির্ণীত ও আমাদের দেশকালের অতীত, সূক্ষ্মে তাহা প্রতি-ভাসিত, স্কুলে আংশিকভাবে স্কুলজগতের নিয়ম অনুসারে অভিনীত হয় ৷ শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলিলেন, আমি ধার্তরাষ্ট্রগণকে পূর্বেই বধ করিয়াছি, অথচ স্থলজগতে ধার্তরাষ্ট্রগণ তখন যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জুনের সম্মুখে দণ্ডায়মান, জীবিত, যুদ্ধে ব্যাপৃত ৷ ভগবানের এই কথা অসত্য নহে, উপমাও নহে ৷ কারণজগতে তিনি তাহাদিগকে বধ করিয়াছিলেন, নচেৎ ইহলােকে তাঁহাদের বধ অসম্ভব ৷ আমাদের প্রকৃত জীবন কারণে, স্থূলে তাহার ছায়া মাত্র পড়ে ৷ কিন্তু কারণজগতের নিয়ম, দেশ, কাল, রূপ, নাম স্বতন্ত্র ৷ বিশ্বরূপ কারণের রূপ, স্কুলে দিব্যচক্ষুতে প্রকাশিত হয় ৷
দিব্যচক্ষু
দিব্যচক্ষু কি? কল্পনার চক্ষু নহে, কবির উপমা নহে ৷ যােগব্ধ দৃষ্টির তিন প্রকার আছে – সূক্ষ্মদৃষ্টি, বিজ্ঞানচক্ষু ও দিব্যচক্ষু ৷ সূক্ষ্মদৃষ্টিতে আমরা স্বপ্নে বা জাগ্ৰদবস্থায় মানসিক মূর্তি দেখি, বিজ্ঞানচক্ষুতে আমরা সমাধিস্থ হইয়া সূক্ষ্মজগৎ ও কারণজগতের অন্তর্গত নামরূপের প্রতিমূর্তি ও সাঙ্কেতিক রূপ চিত্তাকাশে দেখি, দিব্যচক্ষুতে কারণজগতের নামরূপ উপলব্ধি করি, – সমাধিতেও উপলব্ধি করি, স্থূলচক্ষুর সম্মুখেও দেখিতে পাই ৷ যাহা স্কুলেন্দ্রিয়ের অগােচর, তাহা যদি ইন্দ্রিয়গােচর হয় ইহাকে দিব্যচক্ষুর প্রভাব বুঝিতে হয় ৷ অর্জুন দিব্যচক্ষু প্রভাবে জাগ্ৰদবস্থায় ভগবানের কারণান্তর্গত বিশ্বরূপ দেখিয়া সন্দেহমুক্ত হইলেন ৷ সেই বিশ্বরূপদর্শন স্কুলজগতের ইন্দ্রিয়গােচর সত্য না হউক, স্থূল সত্য অপেক্ষা সত্য, – কল্পনা, অসত্য বা উপমা নহে ৷
Home
Sri Aurobindo
Books
Bengali
Share your feedback. Help us improve. Or ask a question.